মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সাইকেলের কদর বাড়ছে করোনায়

গোলাম রাব্বানী

সাইকেলের কদর বাড়ছে করোনায়

সাইকেল কারও কাছে স্কুলবেলার রোমান্টিকতা, কারও কাছে কঠিন বাস্তবতার বাহক। হ্যাঁ, কঠিন বাস্তবতারই বাহক বটে। করোনাকালে অফিসে যাওয়া-আসা ও প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভরসা এখন সাইকেল। আবার অনেকেই এই সংকটকালে যানবাহন পাচ্ছেন না, কেউ আবার অনেক ভাড়া দিতেও অপারগ। সেইখানে তাদের ভরসা জোগাচ্ছে এই দুই চাকার সাইকেল।

যাতায়াতে যুগ যুগ ধরেই বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব আর নিরাপদ বাহন হিসেবে পরিচিত বাইসাইকেল। একবার খরচ করে কেনার পর দুই চাকার এই বাহনের জন্য আর খুব বেশি খরচ করতে হয় না। করোনার এমন সংকটকালীন পরিস্থিতিতে সাইকেল আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের কাছে। করোনার ঝুঁকি এড়াতে এবং ব্যয়কে সীমিত রাখতে সাইকেলই ভরসা তাদের।

বর্তমানে বিভিন্ন পেশার মানুষ সাইকেল চালাচ্ছেন। এর মধ্যে নতুন সাইকেল চালক শফিউল আলম চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। আগে বাসে অফিসে যাওয়া আসা করলেও এখন বাসে উঠতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাসে উঠতে ভয় পাচ্ছি। তাই অফিসে যাওয়া আসার জন্য একটা সাইকেল কিনে ফেলেছি। করোনাকালে সাইকেলেই এখন আমার একমাত্র ভরসা। 

মুকুল প্রধান। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চালক। সাধারণ ছুটির পর তার অফিস খুলেছে। করোনা আতঙ্ক থাকলেও প্রতিদিনই অফিসে যেতে হয়। করোনা থেকে রক্ষায় অফিসে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও বিপত্তি ঘটে যাতায়াতে।

তিনি করোনা আসার আগে কখনো বাসে, কখনো বা টেম্পোতে অফিস করতেন। করোনাকালে ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়। এ অবস্থায় গণপরিবহন এড়াতে কষ্ট হলেও বাইসাইকেল কিনে নিয়েছেন তিনি। করোনা পরিস্থিতিতে মুকুলের মতো অনেকেই এখন গণপরিবহন এড়াতে বিকল্প বাহন হিসেবে বাইসাইকেল ক্রয় করছেন। তিনি বলেন, সবার আগে নিজের নিরাপত্তা। আমি সুস্থ থাকলে আমি যে গাড়ি চালাই সেই গাড়িতে যারা উঠবেন তারাও সুস্থ থাকবেন। তাই আমি নিজে অনেক সতর্ক থাকি। 

এদিকে করোনাকালে সাইকেলের বাজার ক্রমেই জমজমাট হয়ে উঠছে এখন। তবে করোনার সংকট কাটলে সাইকেলের বাজার আরও জমবে বলে আশাবাদী এ খাতের ব্যবসায়ীরা। কারণ যারা সাইকেল চালাতে শুরু করেছেন, তাদের কথাবার্তা থেকে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। যদিও রাজধানীসহ দেশের বড় কোনো শহরে সাইকেল চালানোর স্বতন্ত্র লেন নেই। তাই সড়কে নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়েই সাইকেল চালাতে হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক রাস্তা এখনো অপেক্ষাকৃত ফাঁকা। তা ছাড়া করোনা সংক্রমণের আগে থেকেই সাইকেলবান্ধব বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র লেনের দাবি উঠতে শুরু করেছিলÑ ভবিষ্যতে যা আরও জোরদার হবে এবং কার্যকরও হবে বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশ বাইসাইকেল মার্চেন্ট অ্যাসেম্বলিং অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিএমএআইএ) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশালে দুই শতাধিক বাইসাইকেল বিক্রির দোকান রয়েছে। সারা দেশে সাড়ে চার হাজার খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর মিলে দেশের অন্তত ৭৫ আমদানিকারক বিদেশ থেকে সাইকেল আনছেন।

সর্বশেষ খবর