মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

গতি ফিরেছে স্থবির উন্নয়ন কাজে

মেট্রোরেলে কর্মরতদের জন্য ২৩ শয্যার দুটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গতি ফিরেছে স্থবির উন্নয়ন কাজে

করোনাকালের স্থবিরতা কাটিয়ে গতি ফিরেছে রাজধানীর উন্নয়ন কাজে। উত্তরা এবং মিরপুর থেকে তোলা ছবি ছবি : রোহেত রাজীব

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো করোনাভাইরাস মহামারীতে থমকে গেছে দেশ। প্রায় তিন মাস হলো স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী মানুষ। এতে করে থমকে গেছে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো। লকডাউন উঠে যেতেই গতি ফিরতে শুরু করেছে স্থবির উন্নয়ন কাজে। করোনাভাইরাসকে পাশ কাটিয়ে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততায় মুখরিত হয়ে উঠছে প্রকল্প এলাকা।

রাজধানীর উত্তরায় ডিপো এলাকায় চলছে মেট্রোরেলের কাজ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছেন শ্রমিকরা। সবার মুখে মাস্ক, অনেকের হাতে গ্লভসও রয়েছে। আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য না থাকলেও স্থবিরতা কেটে গেছে। করোনা ভয়কে জয় করে মাঠে নেমেছেন কর্মব্যস্ত মানুষ। মিরপুর-১০ এলাকায় সিটি করপোরেশনের ড্রেনের সংস্কার কাজ চলছে। বর্ষায় নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে শুরু হয়েছে কাজ। অল্প পরিসরে বিভিন্ন সংস্থা তাদের উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে শুরু করেছে।

ঢাকা মাস ট্রান্সজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনার কারণে প্রথম দিকে কাজে কিছুটা ধীর গতি ছিল। কিন্তু এখন পুরোদমে কাজ চলছে। কিছু জায়গায় বিদেশি পরামর্শক ও ঠিকাদার হওয়ায় কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। গত মাস পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-৬ এর কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। উত্তরা-আগারগাঁও অংশে কাজের অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ১০ শতাংশ, আগাওগাঁও-মতিঝিল পর্যন্ত ৪০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তৃতীয় ধাপে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কাজের অগ্রগতি ৩১ দশমিক ১১ শতাংশ। যেসব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করা যাচ্ছে সেসব জায়গায় কাজ অব্যাহত রেখেছি। ডিপো এলাকাতে পুরোদমে কাজ চলছে। বড় এলাকা হওয়ায় ছোট গ্রুপে ভাগ করে কাজ করানো হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬ শতাংশের মতো কাজ বাকি আছে, সেগুলো আমরা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছি। এম এ এন ছিদ্দিক আরও বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ তৃতীয় পর্যায় অর্থাৎ আগাওগাঁও-মতিঝিল অংশটুকুতে। এখানে পরামর্শক এবং ঠিকাদার জাপানি। কভিড-১৯ রোগের কারণে জাপানের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওই দেশের সরকার। তাদের অধিকাংশ জাপানে থাকায় আসতে পারছে না। তারপরও আমরা তাদের দেশীয় সহযোগী ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে বড় কাজ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টেশন নির্মাণ শুরু করা। সীমিত পরিসরে আমরা কাজ শুরু করলেও প্রতিদিনই কাজের পরিধি বাড়ছে। এখানে বেশ কয়েকটি গ্রুপ কাজ করছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রকল্প এলাকার সতর্কতা বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যেন কভিড-১৯ পজিটিভ না থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে। এজন্য প্রতিদিন সবাইকে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে কিছু প্রশ্ন ও পরীক্ষার মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হয়। অক্সিজেন, তাপমাত্রাসহ বেশ কিছু বিষয় পরীক্ষার পর কাজ শুরু করা হয়। স্ক্রিনিংয়ে যারা উপরের দিকে থাকে তাদের কভিড-১৯ টেস্ট করা হয়। কেউ করোনা পজিটিভ আসলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পে কর্মরত ৬১ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ প্রকল্পে কর্মরত অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য আমরা অল্প কিছু শয্যা নিয়ে দুটি হাসপাতাল তৈরি করছি। আগারগাঁওতে একটি ১০ শয্যার হাসপাতাল এবং উত্তরায় ১৩ শয্যার হাসপাতাল তৈরির কাজ চলছে। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে আশাকরি হাসপাতালের কাজ শেষ হবে।’ প্রকল্প কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শত প্রতিকূলতার মাঝেও থেমে থাকেনি। ইতিমধ্যে ৩১টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে, দৃশ্যমান হয়েছে চার হাজার ৬৫০ মিটার। তিনি আরও বলেন, জাইকার অর্থায়নে নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেল রুট ৬-এর কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পে কর্মরত জনবলের কভিড-১৯ পরীক্ষা শেষে তাদের কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় অবস্থান নিশ্চিত করতে নির্মাণ করা হচ্ছে আবাসিক স্থাপনা।

সর্বশেষ খবর