মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

অবহেলায় বাড়ছে এডিস মশা

জয়শ্রী ভাদুড়ী


অবহেলায় বাড়ছে এডিস মশা

আগারগাঁওয়ে শেরেবাংলা নগর থানার সঙ্গেই ঢাকা ট্রাফিক বিভাগের গাড়ি ডাম্পিং স্টেশন। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এলাকাটি জঙ্গলে রূপ নিয়েছে। হয়ে উঠেছে মশার প্রজননক্ষেত্র। ছবি : রোহেত রাজীব

রাজধানীর মিরপুর-২ এলাকার কাঁঠালবাগে একটি নির্মাণাধীন ভবনের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। ভবনের নিচ তলায় রিজার্ভ ট্যাঙ্কির ফাঁকা জায়গায় জমেছে বৃষ্টির পানি। বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছিটানো রয়েছে প্লাস্টিকের ড্রামসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে ভেসে বেড়াচ্ছে মশার লার্ভা। দিনের পর দিন এই স্বচ্ছ পানিতে বংশবিস্তার করছে এডিস মশা।

ভবনের পাশের বাসিন্দা ফখরুল হোসেন বলেন, দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এপ্রিল মাস থেকে এই ভবনটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টি শুরু হলে আমার বাসার ব্যালকনি থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ড্রাম ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীতে পানি জমে থাকতে দেখি। গত বছর আমার স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাসার কাছে এডিস মশার বিস্তার উপযোগী পরিবেশ দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ি। এরপর আমি এবং বাসার সহকারী ওই ভবনে গিয়ে দেখি পানিতে অজস্র মশার লার্ভা ভেসে বেড়াচ্ছে। মশার ছড়াছড়ি ভবনজুড়ে। আমরা সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ব্লিচিং পাউডার পানিতে ছিটিয়ে দেই এবং স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানাই। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনার সময় লার্ভিসাইডিং দিয়েছে।

নির্মাণাধীন ভবন, ডাম্পিং স্টেশনে ফেলে রাখা গাড়ি, টায়ার, ভাঙা প্লাস্টিকের পাত্র, ডাবের খোসায় পানি জমে তৈরি হচ্ছে এডিস মশার অভয়ারণ্য। হেলায় বাড়ছে মশা, ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর।

চলতি মাসেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ জন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চলমান তৃতীয় দফা চিরুনি অভিযানের দুই দিনেই ১৬৯টি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। মিলেছে এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ। দুই দিনে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭শ টাকা। ডিএনসিসির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযানে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৬৮৬টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। লার্ভা পাওয়া ও মশার বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় জরিমানা করা হয়েছিল ৪৮ লাখ ১২ হাজার ৫১০ টাকা।

এডিস নিধনে পরিচালিত চিরুনি অভিযানে ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। আবার প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাবসেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সাবসেক্টরে ডিএনসিসির চারজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও একজন মশক নিধনকর্মী অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ জন মশক নিধনকর্মী কাজ করছেন। অভিযান চলাকালে ডিএনসিসির তিনজন কীটতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাগণ দিকনির্দেশনা দেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নয়জন কীটতত্ত্ববিদ এবং ছয়জন চিকিৎসক ডিএনসিসির সঙ্গে কাজ করেন। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করে নগরবাসীকে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ মুক্ত রাখতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছি। আমরা চেষ্টা করছি। জনগণের কাছে আমাদের আহ্বান, তিন দিনের বেশি জমে থাকা পানি ফেলে দেবেন। নিজে সুস্থ থাকবেন, চারপাশের পরিবেশকে সুস্থ রাখবেন।’ 

রাজধানীর থানার পাশের ডাম্পিং স্টেশনে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা গাড়িতে পানি জমে মশার অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর এসব ডাম্পিং স্টেশনে পানি জমে মশার বংশবিস্তারের পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু তাতে কারও নজর নেই। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শেরেবাংলা নগর থানার পাশে ঢাকা ট্রাফিক বিভাগের গাড়ির ডাম্পিং স্টেশন। দিনের পর দিন পড়ে থাকা গাড়িতে জমছে বৃষ্টির পানি। এসব স্বচ্ছ পানি হয়ে উঠছে এডিস মশার বংশবিস্তারের ক্ষেত্র।

রাজধানীতে এডিস মশার ঘনত্ব নির্ণয়ে জরিপ পরিচালনা করেছে স্বাস্থ্য অধিফতরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। গত ১৯-২৮ জুলাই এ জরিপ পরিচালিত হয়েছে। কর্মসূচির প্রধান কীটতত্ত্ববিদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ড থেকে ১০০টি স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্পটে এডিস মশার ঘনত্ব যাচাই করা হয়েছে। এখনো জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়নি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর এডিস মশার ঘনত্ব কম পেয়েছি আমরা।’

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও থেমে নেই ডেঙ্গু জ্বর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, ‘বর্তমানে রাজধানীর হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন নয় জন।

চলতি মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন, জুলাই মাসে ২৩ জন, জুনে ২০ জন, মে মাসে ১০ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মার্চে ২৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন এবং জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৯ জন।’ ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ায় ধীরে ধীরে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তাই পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর