মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালে ছাদবাগানে ঝোঁক বাড়ছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

করোনাকালে ছাদবাগানে ঝোঁক বাড়ছে

করোনাকালে ছাদবাগানের প্রতি মনোযোগ বাড়ছে নগরবাসীর। নিজের ছাদবাগানে বৃক্ষ পরিচর্যায় ব্যস্ত রেহানা পারভীন হাসি ও অভিনেত্রী ববিতা ছবি : বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিভিন্ন রকম গাছ, পাতা আর ঘাসে নয়নাভিরাম সবুজ ছাদবাগান। ডান দিকের পুরো দেয়াল বেয়ে নেমে গেছে এমেথিস্ট বিউটি। বিরল এ গাছের সবুজ পাতা এসে গা ভিজিয়েছে ফোয়ারার জলে। সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের বড় পর্দার সেই ড্রিমগার্ল ববিতাকে অভিনেত্রী হিসেবে সবাই চেনেন। কিন্তু প্রকৃতি, পাখি, ফুলপ্রেমী ববিতার পরিচয় মেলে তার আপন আলয়ে। রাজধানীর গুলশানে ১১তলা ফ্ল্যাটে নিজ হাতে বড় করে তুলেছেন বাঁশ বাগান। ববিতার বাগানে রয়েছে মৌসুমি গাঁদা, ডালিয়া, জবা, চন্দ্রমল্লিকা, ক্রিসেনথিমাম, কলাবতী, স্লোবল, ডবল পিটুনিয়া ফুল। আর ফোয়ারার পানিতে শাপলা। রয়েছে দুই রঙা ক্যাকটাস, তিবুচিনিয়া, কানকা, হাইডেনজিয়া, শকিং পিঙ্ক, ফ্লক্স, ডেন্টাস, কসমস, বার্বিয়া, সালভিয়া, ইমপ্রেশন। ঝুলে আছে গোলাপি ভোগানভিলিয়া, আছে নাইটকুইন।

এই খ্যাতিমান অভিনেত্রী বললেন, ‘গাছের প্রতি আমার ভালোবাসা বলতে পারেন জেনেটিক্যাল, মানে বংশগত। আমি বিদেশে গেলে প্রথমে খবর নিই কোথায় নার্সারি আছে। ফুল-ফলের গাছ সংগ্রহ করি। এগুলো আমার কাছে শাড়ি-চুড়ি-গহনার চেয়েও অনেক দামি। গতকাল রাতে বাঁশ বাগানের মাথায় উঁকি দেওয়া পূর্ণিমার চাঁদ আমায় ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল শৈশবে। এই বাগানকে শতভাগ পূর্ণতা দিতে এনেছি নানা প্রজাতির পাখি। ময়না, টিয়া, লাভবার্ড, ঘুঘুসহ অনেক পাখি সারা দিনমান কলকাকলিতে আমার মন আনন্দে ভরিয়ে তোলে। ঘুঘুর ডাকে মুগ্ধ হই। ময়না পাখিটি আমার হাসি নকল করে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সে বলে ‘পপি আপা (আমার ডাক নাম) খোদা হাফেজ’।

চিলেকোঠার টবে উঁকি দিচ্ছে লাল টমেটো, কাঁচামরিচ, লেবু। পাশে ধুন্দল, ধনিয়া পাতা, পুদিনার কচি পাতার ঘ্রাণ। পেয়ারা, আম, কামরাঙা, তেঁতুল, ডালিম, পেঁপে গাছের বৃত্ত থেকে মাথা তুলে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে লালশাক, পুঁইশাকের কোমল পাতা। আর ছাদের ধার ঘেঁষে হাওয়ায় দোল খাচ্ছে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলার কচি ডোগা। গোলাপি, হলুদ, সাদা, মেজেন্টা রঙের বাগানবিলাস, বাহারি কুঞ্জলতা, মাধবীলতার চোখ জুড়ানো দৃশ্য মন কাড়বে যে কারও। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রেহানা পারভীন হাসির ছাদ বাগানের এ সৌন্দর্যে মোহিত হবেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১১ বছর ধরে ছাদবাগান করছি। শখের বশে করা ছাদবাগানের গাছগুলো আমার সন্তানের মতো। ভেজালের পণ্যের ভিড়ে বিষমুক্ত এই শাকসবজি পরিবারের সদস্যদের পাতে তুলে দিতে নিশ্চিন্ত লাগে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে একটু আঁটি বাঁধা পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া উপহার দেওয়া যায় আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের। করোনাকালে ছাদবাগানে মানুষের আগ্রহ এবং প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। মানিপ্ল্যান্ট গাছ উপহার দিয়েছি প্রায় ১০০ জনকে। সবুজে বাঁচুক প্রাণ এটাই আমার চাওয়া।’

রেহানা পারভীন হাসির মতো এমন উদ্যোগী মানুষের সংখ্যা এখন বাড়ছে। রাজধানী পেরিয়ে এ বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে মফস্বলের অলিগলিতে। শস্য শ্যামল বাংলার প্রকৃতি চোখ জুড়ায় তার সবুজের অভয়ারণ্যে। কিন্তু সভ্যতার চাকায় ভর করে ইট-কাঠ, পাথরের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। তাই প্রকৃতি বাঁচিয়ে সবুজের স্পর্শ পেতে নীলাভ আকাশের নিচের খোলা ছাদকেই বেছে নিচ্ছেন দালানের বাসিন্দারা। প্রথম দিকে ছাদের কোনায় টবে রকমারি মৌসুমি ফুল লাগানো ছিল মানুষের শখ কিন্তু শৌখিনতা থেকে এখন কৃষি খাতে অবদান রাখতে শুরু করেছে ছাদের ফলমূল-সবজি। করোনাকালের বন্দী জীবনে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে ছাদবাগানে। এই শখের বাগান কিছুটা বয়ে চলেছে সাংসারিক নিত্য বাজারের খরচও। সবজির মধ্যে বেগুন, টমেটো, মরিচ, লাউ আর পরম যতেœ বেড়ে উঠেছে কলমি শাকও। এ রকম উত্তরার মেরাজুল হক গড়ে তুলেছেন ফল, ফুল আর সবজির এক বিশাল সমারোহ। পরিবারের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার হাতের স্পর্শে কোনো রকমে কীটনাশক আর ভেজাল ছাড়াই সতেজ আর তরতাজা হয়ে উঠছে সবুজ চারাগুলো। রফিকুল ইসলাম বলেন, নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা তিনি ছাদ কৃষি থেকে উপার্জন করেন। ছাদবাগান করা হলে ১০ শতাংশ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছাদবাগান আমাদের সবার দরকার। ছাদবাগান করার জন্য একটি নীতিমালা করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং পরিবেশবাদীদের নিয়ে একটি কমিটি করা হবে। যারা ছাদবাগান করবেন তাদের এই কমিটির মাধ্যমে একটি সনদ দেওয়া হবে। ছাদবাগান করলে ১০ শতাংশ কর মওকুফ সুবিধা দেওয়া হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য যেসব বাড়ির মালিক রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প গ্রহণ করবেন তাদের বিশেষ মওকুফ সুবিধা দেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর