মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বর্ষণে বিধ্বস্ত রাজধানীর রাজপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্ষণে বিধ্বস্ত রাজধানীর রাজপথ

সদ্য সমাপ্ত বর্ষার বর্ষণে রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক তছনছ হয়ে পড়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তবহুল সড়কে যানবাহন চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেক রাস্তা উন্নয়ন সংস্থাগুলো খোঁড়াখুঁড়ি করলেও সময়মতো তা মেরামত না করায় জনদুর্ভোগ স্থায়ী হয়েছে।     

নগরীর রাস্তা মেরামত ও সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা বলেছেন, রাজধানীর রাস্তা তৈরিতে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। বিটুমিনের প্রধান শত্রু হচ্ছে পানি। ভালো রাস্তায় পানি জমলেই রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। তারা প্রত্যেকটি আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে ভাঙা রাস্তার তথ্য সংগ্রহ করছেন। যেগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই সেগুলো আধুনিকায়নের কাজও শুরু হবে। এ ছাড়া কিছু রাস্তা আধুনিকায়নের কাজও বর্তমানে চলছে। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় এখন রাস্তা ভাঙাচোরা। বর্ষা মৌসুমে পানি জমে অনেক ভালো রাস্তাও ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেছে। জমে থাকা পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর বহু স্থানে কঙ্কালসার রাস্তা দেখা যাচ্ছে। এসব পথে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। অনেক এলাকায় কমবেশি দুর্ঘটনাও ঘটছে। দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দুই সিটিতে প্রধান সড়কসহ অলিগলি মিলিয়ে মোট রাস্তার পরিমাণ ৩ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার ও ডিএসসিসি এলাকায় ১৬৫০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই সিটির ৩০ শতাংশ রাস্তাই বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডিএসসিসির ৬০০ কিলোমিটার রাস্তা। আর ডিএনসিসির ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এবার বর্ষা মৌসুমে আমাদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এসব রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাস্তা আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর কাজ চলছে। এ ছাড়া ডিএনসিসিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ১৮টি নতুন ওয়ার্ডের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। সেগুলোকে পরিকল্পিতভাবে আধুনিকায়ন করার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সেই প্রকল্পের কাজও শুরু হবে। তবে ডিএনসিসির বেশিরভাগ রাস্তাই এখন ভালো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুন্সি আবুল হাশেম বলেন, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের পশ্চিম পয়েন্টে নামার সময় আনন্দবাজার এলাকার রাস্তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। এখন সেখানে মেরামতের কাজ চলছে। এ ছাড়া অন্য যেসব রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রাজধানীর একটি বড় এলাকায় মেট্রোরেলের কাজ চলছে। এ জন্য ওসব রাস্তার অবস্থা বেশি খারাপ। এ কারণে মনে হয় রাস্তা বেশি ভাঙাচোরা।

রাজধানীতে প্রায় সারা বছরই চলে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন লাইন বসানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি। এসব খোঁড়াখুঁড়ির পর সড়ক মেরামতেও দীর্ঘ সময় নেয় কর্তৃপক্ষ। আর বৃষ্টি হলে তো ভোগান্তির শেষ নেই। কাদা, পানি, বর্জ্য মিলেমিশে নাস্তানাবুদ অবস্থা। এসব সড়কে জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। অনেক স্থানে রাস্তার পাশাপাশি ফুটপাথও ভেঙে গেছে। নগরবাসী যে ফুটপাথ দিয়ে স্বস্তিতে হাঁটবে, তারও উপায় নেই। সিটি করপোরেশনের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো সড়কের খনন করার প্রয়োজন দেখা দিলে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। আর বর্ষা মৌসুমের আগেই সব খোঁড়াখুঁড়ি শেষ করে মেরামত কাজ শেষ করতে হবে। বাস্তবে বেশিরভাগ সময়ই তা অনুসরণ করা হয় না।

 

সর্বশেষ খবর