মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

শচীন দেববর্মণের বাড়িতে মাদকসেবীর আড্ডা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

শচীন দেববর্মণের বাড়িতে মাদকসেবীর আড্ডা

কুমিল্লায় শচীন দেববর্মণের বাড়িটি সংস্কারের পর ‘শচীন কমপ্লেক্স’ করার কথা থাকলেও তা দুই বছর ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। এটি এখন পরিত্যক্ত বাড়িতে পরিণত হচ্ছে। জলে যাচ্ছে সরকারের সোয়া কোটি টাকার সংস্কার কাজ। এখানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসছে। উঠে যাচ্ছে দেয়ালের পলেস্তরা। পাহারাদার নেই, দরজা- জানালা খোলা। চুরি হয়ে যেতে পারে দরজা- জানালাগুলোও। বাড়িটি চালু রেখে শচীনের কৃর্তি মানুষকে জানানোর দাবি সংস্কৃতি কর্মীদের।

‘শোনো গো দখিনো হাওয়া প্রেম করেছি আমি’, ‘তোরা কে যাস্রে ভাটি গাঙ বাইয়া’, ‘টাকডুম টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’ এরকম অনেক জনপ্রিয় গান এসডি বর্মণের কণ্ঠের মাদকতায় ছড়িয়ে আছে বাংলার কোটি মানুষের হৃদয়ে। উপমহাদেশের কালজয়ী সংগীতজ্ঞ শচীন  দেববর্মণের জন্ম ১৯০৫ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থায়। তার বাবা ছিলেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার রাজপরিবারের সন্তান সংগীতশিল্পী নবদ্বীপ চন্দ্র  দেব। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি সপরিবারে কুমিল্লা চলে আসেন। তাদের বাড়ির জমি দিয়েছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছা। কুমিল্লায় কবি নজরুলের সঙ্গে শচীন দেববর্মণের পরিচয় হয়। মাঝে-মধ্যে কুমিল্লায় শচীন দেববর্মণের বাসায়, কখনো দারোগাবাড়ি, জানু মিয়া চৌধুরীর বাড়ি, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বাসায়ও বসত গানের জলসা।

এসডি বর্মণ কুমিল্লায় ছিলেন ১৯২৪ সাল পর্যন্ত। ১৯ বছর বয়সে তিনি চলে যান কলকাতায়, সেখানে ছিলেন ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত। এরপর তিনি সপরিবারে মুম্বাই চলে যান। মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের মর্যাদা পান। ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত করেন। ১৯৬৯ সালে ‘আরাধনা’ হিন্দি ছবিতে শ্রেষ্ঠ নেপথ্য গায়ক হিসেবে তিনি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। শচীন দেববর্মণ ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর মারা যান।

এসডি বর্মণের একমাত্র ছেলে রাহুল দেব বর্মণ যিনি আর.ডি বর্মণ হিসেবে খ্যাত। পুত্রবধূ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ শিল্পী আশা ভোঁসলে। জনশ্রুতি রয়েছে ক্রিকেট লিজেন্ড শচীনের বাবা শচীন দেববর্মণের গানের ভক্ত ছিলেন। তাই ছেলের নাম রাখেন শচীন। সাংস্কৃতিক সংগঠন ঐতিহ্য কুমিল্লার পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, অনেক আন্দোলন আর লেখালেখির পর শচীন দেববর্মণের বাড়িটি ২০১৭ সালে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। বাড়িটির পাহারাদার না থাকায় তা পরিত্যক্ত বাড়িতে পরিণত হচ্ছে। নাট্য ব্যক্তিত্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, এটিতে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। বাড়িটি এখন অযতœ অবহেলায় পড়ে আছে।

মাদকসেবীদের আড্ডা বন্ধে এখানে দ্রুত কার্যক্রম চালু করা দরকার।

প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, সম্প্রতি বাড়িটি পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক। চলতি অর্থবছরে এখানে শচীন দেববর্মণের স্মৃতি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে পারব।

সর্বশেষ খবর