মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

উত্তর সিটিতে শুদ্ধি অভিযান

জয়শ্রী ভাদুড়ী

উত্তর সিটিতে শুদ্ধি অভিযান

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। অবৈধ সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড অপসারণ, খেলার মাঠ, পার্ক, রাস্তা-ফুটপাথ, খাল দখলমুক্ত রাখতে কাজ চলছে একযোগে ছবি : বাংলাদেশ প্রতিদিন

নগরকে বসবাস উপযোগী করে তুলতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। অবৈধ সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড অপসারণ, খেলার মাঠ, পার্ক, রাস্তা-ফুটপাথে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, ঝুলন্ত তার অপসারণ, ওয়াসার আওতাধীন খাল পরিচ্ছন্নের কাজ চলছে একযোগে। অবৈধ দখলের কারণে করা হচ্ছে জরিমানা, সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে নিলামে। খাল, ডোবা, নালা অপরিষ্কার পাওয়া গেলে ২০ অক্টোবর থেকে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম গত শনিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নগরবাসীকে সচল, সুস্থ নগর উপহার দেওয়া আমার অঙ্গীকার ছিল। সেই লক্ষ্যে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছি। নগরবাসীকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। খাল পরিষ্কারে নেমে পাওয়া গেছে ঘরের আসবাবপত্র। মশার কামড় থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে আমরা খাল, ডোবা-নালা পরিষ্কারে নেমেছি। এসব খাল, ডোবা-নালা অপরিষ্কার পাওয়া গেলে আমরা দায়ী ব্যক্তি, সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থাকে ‘ফাইন’ করব। ২০ অক্টোবর থেকে খাল অপরিষ্কার পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ফুটপাথ-রাস্তায় যে কোনো সামগ্রী রেখে দখল করলে আমরা উচ্ছেদ করে তা ওখানেই নিলামে বিক্রি করছি। শহরে ব্যবসা করলে ট্যাক্স দিতে হবে। নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কারও নেই। শহর ঢেকে ফেলা অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণে আমরা কাজ করছি। সরিয়ে ফেলা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ও সৌন্দর্যহানি করা ঝুলন্ত তার। এ জন্য নাগরিকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। নাগরিকরা এগিয়ে না আসলে মেয়রের একার পক্ষে শহর পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে ছিল বনানী পূজা মাঠ, বনানী সি ব্লক পার্ক, মোহাম্মদপুর ত্রিকোণ পার্ক, শিয়া মসজিদ পার্ক এবং মোহাম্মদপুর উদয়াচল পার্ক। বনানী পূজা মাঠে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, বনানী সি ব্লক পার্কে ডেসকোর পরিত্যক্ত সাবস্টেশন ও অফিস রুম এবং বনানী সোসাইটির গার্ড শেড স্থাপন করা হয়েছিল। মোহাম্মদপুর ত্রিকোণ পার্কে অবৈধভাবে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, রিকশা গ্যারেজ ও নার্সারি ছিল। শিয়া মসজিদ পার্কে অবৈধভাবে একটি ক্লাব ঘর, টং দোকান, রিকশা গ্যারেজ স্থাপন করা হয়। মোহাম্মদপুর উদয়াচল পার্কের জায়গা দখল করে একটি ক্লাবঘর এবং খেলোয়াড়দের থাকার ঘর করা হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এতে মাঠে খেলার সুযোগ তৈরি হবে শিশুদের, পার্কে সময় কাটাতে পারবেন নগরের বাসিন্দারা।

ডিএনসিসি এলাকায় থাকা ওয়াসার নোংরা, বদ্ধ খাল মশার উৎপত্তিস্থল। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরজীবন। খালে পানি প্রবাহ না থাকায় বৃষ্টি হলেই নগরজুড়ে তৈরি হয় জলজট। ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। ওয়াসা খাল পরিষ্কারে উদ্যোগ না নেওয়ায় ডিএনসিসি খাল পরিষ্কার শুরু করেছে। খাল পরিষ্কার করতে গিয়ে খালে মিলেছে সোফা, বালিশ, টেলিভিশনের খোলস, ফ্রিজের ভাঙা অংশ, ২০০ ট্রাক ডাবের খোসা। খালের পাড়ে এগুলো প্রদর্শনীর আয়োজন করে ডিএনসিসি। ডিএনসিসি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ১৬টি খাল ও লেক এই মাসের মধ্যে পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিদিন ৫১০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী পরিষ্কার কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানা গেছে।

গত ৪ অক্টোবর অবৈধ সাইনবোর্ড ও রাস্তা-ফুটপাথ দখল উচ্ছেদে অভিযান চালায় ডিএনসিসি। এদিন ৯০০ অবৈধ সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দখল সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা আদায় করা হয়।

 ফুটপাথে রাখা সামগ্রী ও সাইনবোর্ডগুলো ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়। ৫ অক্টোবর ১ হাজার ৯০টি সাইনবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়। সাইনবোর্ড নিলামে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২৭টি মামলায় ২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ৬ অক্টোবর উত্তরা এলাকায় ১ হাজার ১৫৫টি অবৈধ সাইনবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়।

উচ্ছেদকৃত সাইনবোর্ড নিলামে ৬১ হাজার ৯৩৭ টাকা বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫৭টি মামলায় মোট ১১ লাখ ৪০ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। সিটি করপোরেশনের সব অঞ্চলে একযোগে পরিচালিত হচ্ছে অভিযান। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে এসব অভিযান।

 

সর্বশেষ খবর