মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পেশাজীবীরা গড়ছেন আপন ঠিকানা

রাজশাহীতে বর্তমানে রেডার তালিকাভুক্ত সদস্যরা প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। রাজশাহী শহরে তাদের চলমান আবাসন প্রকল্পের সংখ্যা ১০৫টি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

পেশাজীবীরা গড়ছেন আপন ঠিকানা

রাজশাহীতে বেড়েই চলেছে জমির দাম। ইচ্ছে থাকলেও অনেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জমি কিনে স্বপ্নের একটি বাড়ি করতে পারছেন না। তাই তারা কিনছেন ফ্ল্যাট। দিন দিন এ শহরেও বড় হচ্ছে ডেভেলপারদের আবাসন ব্যবসা। তাদের ফ্ল্যাট বিক্রিতে সরকার পাচ্ছে রাজস্ব। কিন্তু রাজশাহীতে ইদানীং বিভিন্ন পেশাজীবীও এই আবাসন ব্যবসা শুরু করেছেন। বিভিন্ন পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে গড়ে তুলছেন বহুতল ভবন। বিক্রি করছেন ফ্ল্যাট।

সাম্প্রতিককালে নগরীর ভদ্রা আবাসিক এলাকা, উপশহর, বিনোদপুর ও ডাবতলা এলাকায় বিভিন্ন পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করছেন। ডাবতলা এলাকার একটি ১১তলা ভবনের নাম ‘কৃষিবিদ টাওয়ার’। চিকিৎসকরা গড়ে তুলছেন ‘ডিউড্রপ টাওয়ার’। বেশিরভাগ শিক্ষক মিলে গড়ে তুলেছেন ‘ফ্রেন্ডশিপ টাওয়ার’। এসব ভবনে কেউ কেউ একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক। একাধিক ফ্ল্যাটের কারণে কেউ কেউ বিক্রিও করছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রেজিস্ট্রি হচ্ছে না। শুধু মালিকানা বদলের চুক্তি হচ্ছে।

ফ্রেন্ডশিপ টাওয়ারের নিচতলায় বড় এক সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘ফেন্ডশিপ টাওয়ারের ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার নীতিমালা’। কিন্তু কোথাও লেখা নেই ফ্ল্যাট বিক্রি বা কিনলে রেজিস্ট্রি করতে হবে। তবে ফ্ল্যাট বিক্রি করলে ৫০ হাজার টাকা ভবনের সোসাইটির অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে বলে সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে। শহরে বিভিন্ন পেশার মানুষ এ রকম বড় বড় আবাসিক ভবন নির্মাণ করছেন। ভবন নির্মাণের সময় তারা সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন। কিন্তু ভবন তৈরির পর ফ্ল্যাট কেনাবেচার সময় ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে সরকারি রাজস্ব।

রাজশাহী কর কমিশনারের কার্যালয়ের কর কমিশনার মুহাম্মদ মফিজ উল্যাহ বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও তারা অনেক সময় খবর পান না। ক্রেতা-বিক্রেতার একটা চুক্তির মাধ্যমেই সব হয়ে যায়। কিন্তু কেউ তাদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ দিলে তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন।

এদিকে পেশাজীবীরা এ ধরনের আবাসন ‘বাণিজ্যে’ নেমে পড়ায় ক্ষুব্ধ আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রাজশাহী রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন (রেডা)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, ‘আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী মহানগরীর আবাসনখাত উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু পেশাজীবী মানুষ এবং কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে আমাদের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে। তাদের কারণে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ একটা ফ্ল্যাটের জন্য আমরা সরকারকে কমপক্ষে তিন থেকে চার লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকি।’

তিনি জানান, রাজশাহীতে বর্তমানে রেডার তালিকাভুক্ত সদস্যরা প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। রাজশাহী শহরে তাদের চলমান আবাসন প্রকল্পের সংখ্যা ১০৫টি। ফ্ল্যাট হবে প্রায় ৬০০টি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসব প্রকল্পে কর্মরত আছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। পেশাজীবী মানুষের আবাসন বাণিজ্য বন্ধ না করলে তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সর্বশেষ খবর