মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সাড়ে ছয় লাখ টাকার কাজ ১৬০ টাকায়!

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

সাড়ে ছয় লাখ টাকার কাজ  ১৬০ টাকায়!

পাওয়ার গ্রিড উপকেন্দ্রের মেশিন মেরামতে সাফল্য দেখিয়েছেন কুমিল্লায় কর্মরত বিদ্যুৎ প্রকৌশলীরা। যেখানে মেশিনটি মেরামতে সাড়ে ছয় লাখ টাকা খরচ হতো, সেখানে বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা ১৬০ টাকা ব্যয়ে সচল করেছেন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ডিসি কন্ট্রোল সিস্টেম। এ নিয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি কুমিল্লার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির প্রধান নির্বাহী প্রবীর কান্তি দাশ। বিষয়টি ফেসবুকে সম্প্রতি জানাজানি হলে কুমিল্লা নগরী ও জেলাজুড়ে ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয়। সরকারের অর্থ সাশ্রয়ের সংবাদে মানুষ খুশি হয়।

সূত্র জানায়, কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার দেবপুরে অবস্থিত ২৩০/১৩২/১৩৩ (উ.) গ্রিড উপকেন্দ্রেটি থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের সবকটি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি থেকে মাইক্রো কন্ট্রোলার বেইজড, ব্যাটারি চার্জারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। গত ৭ অক্টোবর গ্রিড উপকেন্দ্রের ২২০ ভি ডিসি সিস্টেমটি বিকল হয়ে যায়। এটি কেনা হয়েছিল সিঙ্গাপুরের এইজি কোম্পানি থেকে। উপকেন্দ্র থেকে সিঙ্গাপুরের ওই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ব্যাটারি মেরামত করতে সাড়ে তিন হাজার ডলার লাগবে। যা বাংলাদেশি টাকায় তিন লাখ ৪৯ হাজার ৪০০ টাকা। সম্মানী নেবে প্রায় তিন লাখ টাকা। মোট সাড়ে ছয় লাখ টাকার মতো। তবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি রাজি হয়নি। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির কুমিল্লার প্রকৌশলীরা চেষ্টা শুরু করেন। টানা তিন দিন ধরে চেষ্টা করেন। অবশেষে ডিসি ২২০ ভি ডিসি সিস্টেমটি সচল করেন।

শিক্ষাবিদ এহতেশাম হায়দার চৌধুরী বলেন, যেখানে সরকারি টাকা লুটের উৎসব সর্বত্র। সেখানে সরকারের অর্থ সাশ্রয়ের সংবাদ আশাবাদী করে।

ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট কুমিল্লা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মীর ফজলে রাব্বী বলেন, আমাদের প্রকৌশলীরা অনেক মেধাবী। কাজের সুযোগ দিলে তারা আরও ভালো করবে। তাদের কাজটি প্রশংসার যোগ্য।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন জানান, বিদ্যুৎ মাইক্রো কন্ট্রোলার বেইজড ব্যাটারি চার্জারটি হলো উপকেন্দ্রটির প্রাণ। গত ৭ অক্টেবর মাইক্রো কন্ট্রোলার বেইজড ব্যাটারি অস্বাভাবিক কাজ করছিল। এ পাওয়ার স্টেশন থেকে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি। বিকল্প মেশিন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছিল। বিকল হয়ে যাওয়া মেশিনটি কেনা হয়েছিল সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানি থেকে। প্রতিটি মেশিনের ম্যানুফেকচারিংয়ে লেখা থাকে কীভাবে মেশিনটি পরিচালনা করা হবে। আমাদের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের মেশিনটির যে স্থানে সমস্যা হয় তা কীভাবে মেরামত করতে হবে ম্যানুফেকচারিংয়ে সে বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। সিঙ্গাপুরের ওই কোম্পানি মেরামত ফি ও সম্মানী বাবদ প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা চেয়েছে। আমরা রাজি হইনি। টানা তিন দিন গবেষণা করে ১৬০ টাকা ব্যয় করে রেজিস্টর ক্রয় করে মেশিনটি সচল করি। মেরামতের পর আজ একমাস পাঁচদিন মেশিনটি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছে। এজন্য নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহাবুদ্দিন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী বেলাল হোসেন, উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী এ কে এম রেজাউল করিম ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. বশির উদ্দিনসহ উপকেন্দ্রের কারিগরি কর্মচারীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।

 

সর্বশেষ খবর