মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সচিবালয়ের চারপাশে কত জঞ্জাল!

সচিবালয়ে আসেন বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, কূটনীতিক ও উন্নয়নকর্মীরা। সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ৪৫টিই সচিবালয়ে। অথচ সচিবালয়ের চারদিকে মলমূত্র, আবর্জনায় পথচারীদের চলাই দায়। রাস্তায় রাখা সারি সারি গাড়ি। এটা যেন অঘোষিত পার্কিং

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সচিবালয়ের চারপাশে কত জঞ্জাল!

এভাবেই সচিবালয়ের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা ও জঞ্জাল। শুধু তাই নয় পথচারীরা প্রকাশ্যেই প্রস্রাব করছেন সচিবালয়ের দেয়ালে ছবি : জয়ীতা রায়

দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সেগুলো কার্যকর করার আদেশ-নির্দেশ এখান থেকে জারি হয়। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার চারপাশের সড়ক ও ফুটপাথ দিয়ে হাঁটাচলা করার অবস্থা নেই। ময়লার স্তূপ, জঞ্জাল, খোলা প্রসাবখানা, মলের দুর্গন্ধে ওই সড়কগুলোতে নাকে রুমাল চেপে হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়েছে পথচারীদের।

দক্ষিণ পাশের সড়ক ও ফুটপাথ কিছুটা ভালো হলেও পরিচ্ছন্ন বলার সুযোগ নেই। ধুলা-ময়লা, আবর্জনা এমনকি সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো গাছ ও লতাগুল্মের পরিচর্যাও করা হয় না। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানটির চারপাশের আবর্জনা পরিবেশ নষ্ট করছে। দেশের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, স্বাস্থ্যকর বাতাস ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দেওয়া হয়। অথচ সচিবালয়ের চারপাশের এই জঞ্জাল সেসব নির্দেশনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। রাজধানীর আবদুল গণি রোড ও তোপখানা রোডের মাঝে অবস্থিত সচিবালয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা হয়। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম এই স্থাপনায় প্রায় সব মন্ত্রীর অফিস। আছে প্রধানমন্ত্রীর অফিসও।

এ ছাড়া প্রতিদিন সচিবালয়ে আসেন বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, কূটনীতিক ও উন্নয়নকর্মীরা। সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ৪৫টিই সচিবালয়ে। দক্ষিণমুখী সচিবালয়ের সামনের অংশটি তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন। বাকি তিন দিকে দৈন্যদশা চোখে পড়ে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সচিবালয়ের উত্তর-পশ্চিম কোনার (জাতীয় প্রেস ক্লাবের পূর্ব পাশে) দেয়াল ঘেঁষে পথচারীরা প্রকাশ্যে প্রস্রাব করে। ওই দেয়ালের বেশ কয়েক জায়গায় সাদা কাগজে লেখা আছে ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’। এই সতর্কবাণীটি কারা টানিয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি। পাশেই পচা ভাত, সবজি, পলেথিন স্তূপ করে রাখা। নোংরা পানিতে রাস্তা সয়লাব। ফুটপাথ গড়িয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আবর্জনা। লাফিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে পথচারীদের। নোংরা পানি মাড়িয়ে সচিবালয়ে ঢুকছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাস্তা যেন অঘোষিত পার্কিং এরিয়া। পুরো রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাড়ি। মানুষের হেঁটে যাওয়ার মতো অবস্থাও নেই

এরপর মোড় ঘুরে সচিবালয়ের উত্তর-পূর্ব পাশে গিয়ে দেখা যায় প্রকাশ্যে প্রস্রাব করছেন, ময়লা ফেলেছেন অনেকে। উত্তর পাশের দেয়াল ঘেঁষে পূর্ব দিকে একটি নিরাপত্তা চৌকি রয়েছে। এখানে যেন কেউ নোংরা করতে না পারে তাই ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা চৌকিটি কাছে থাকার কারণে দিনের বেলায় কেউ নোংরা ফেলে না। এরপর নজর গেল সচিবালয়ের পূর্ব পাশে (মুক্তাঙ্গনের বিপরীত পাশে)। এই পাশের এক কোনায় সোনালী ব্যাংক, আরেক কোনায় নিরাপত্তা চৌকি। মাঝে সংবাদপত্রের স্টল এবং আরেকটি নিরাপত্তা চৌকি আছে। সোনালী ব্যাংক ও সংবাদপত্র চৌকির মাঝের জায়গাতে রয়েছে আরেকটি প্রস্রাবখানা। এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উৎকট গন্ধ নাকে আসে। রাতের বেলায় মলত্যাগ করে রাখা হয়েছে। কুকুর এসব নোংরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখায় রাস্তা দিয়ে যাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। সংবাদপত্র স্টলের পাশেই সচিবালয়ের পূর্ব পাশের দ্বিতীয় নিরাপত্তা চৌকি। পায়খানা-প্রস্রাবের গন্ধের কারণে এখানে নিরাপত্তারক্ষীরা বসতে পারেন না, তাই এটি খালি পড়ে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্য বলেন, ‘এদিকে পথচারীরা মাস্ক পরে, নাকে রুমাল দিয়ে যাতায়াত করে। আমাদের সারা দিন গন্ধের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ জায়গা থাকার কথা সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন। অথচ দেয়াল ঘেঁষে পায়খানা, প্রস্রাব করা হচ্ছে। আবর্জনা, ময়লায় সয়লাব পুরো এলাকা।’ সচিবালয়ের দক্ষিণ পাশটি পরিষ্কার থাকলেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যানার-ফেস্টুনে ঢাকা থাকে। সচিবালয়ের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. বদরুল আমিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নগর বিশ্লেষক ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সরকারের পলিসি তৈরির কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ প্রতিদিন এখানে আসেন। নিয়মিত তদারকি ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ময়লা ফেললে জরিমানার ব্যবস্থাও করতে হবে।

সর্বশেষ খবর