মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সবুজ অবয়বে নতুন লালদীঘি মাঠ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

সবুজ অবয়বে নতুন লালদীঘি মাঠ

১ হাজার ২৫০ বর্গফুট দেওয়ালের দুই পাশে লেখা আছে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি। মঞ্চের মাঝখানে আছে ঐতিহাসিক ছয় দফার ছয়টি ছবি। দেওয়ালের সামনে আছে বড় পরিসরের মুক্তমঞ্চ। আছে ১৮টি টেরাকোটার ম্যুরাল। ম্যুরালে শোভা পাচ্ছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস। আছে চট্টগ্রামসহ দেশের উন্নয়নের নানা চিত্র। শিশুদের জন্য আছে একটি মিনি পার্ক। সবুজ ঘাসে পরিপূর্ণ হচ্ছে পুরো ময়দান। মাঠকে  মাঠ নয়নাভিরাম করতে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন গাছ। করা হয়েছে সোলার প্যানেল দিয়ে আলোকসজ্জা। এভাবে সাজানো হয়েছে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠকে। অবয়ব পেল সবুজের। আমূল পরিবর্তন হয়েছে মাঠটির। বদলে গেছে কার-মাইক্রোর দখলে থাকা মাঠটি।

জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ‘নগরীর লালদীঘি মাঠ সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠটির নতুন রূপ দেওয়া হয়। প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হওয়া কাজটি আগামী ৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা। লালদীঘির মাঠের দুই পাশে থাকবে লোহার নিরাপত্তা বেষ্টনী, দুটি ২০ ফুট প্রস্থের সাধারণ ফটক, একটি ভিআইপি ফটক, প্রতি বেঞ্চে পাঁচজন বসতে পারে এমন ৩৯টি বেঞ্চ। ৩৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে ওয়াকওয়ে।

আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, অবহেলিত লালদীঘি মাঠকে নতুন করে অবয়ব দেওয়া হয়েছে। এখন কাজ প্রায় শেষ। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এটি উদ্বোধন করার কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাঠটির ঐতিহাসিক চিত্র ও চরিত্র প্রস্ফুটিত হচ্ছে। সঙ্গে শিশু-কিশোররা খেলাধুলার একটা মনোরম পরিবেশ পাচ্ছে।  

জানা যায়, লালদীঘি মাঠের সঙ্গে দেশের আন্দোলন-সংগ্রাম ও ইতিহাস-ঐতিহ্য যুক্ত। ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লালদীঘি ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথ ভাষা শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হওয়ার পরদিন লালদীঘি ময়দানে একুশের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ পাঠ করা হয়েছিল। 

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদীঘির ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে ২৪ জন নিহত ও আহত হন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। ঘটনাটি ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ হিসেবে পরিচিত। এই লালদীঘি মাঠেই ১৯০৯ সালে বলী খেলার প্রচলন করেন ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর। প্রতি বছর বাংলা সনের ১২ বৈশাখ ‘জব্বারের বলী খেলা’ নামে সপ্তাহব্যাপী আয়োজনটি হয় এই মাঠেই। তাছাড়া অনেক আলোচিত ইতিহাসের নীরব সাক্ষী এ লালদীঘি মাঠ। রাজনৈতিক পালাবদলের অনেক কাহিনির চিত্রায়ণ এ ময়দানকে ঘিরেই। আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু এ ময়দান। রাজনৈতিক কোনো সমাবেশ মানেই লালদীঘির মাঠ। দাবি আদায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম, বিক্ষোভে লাখ লাখ জনতার পদভারে মুখরিত হওয়ার ইতিহাসও লালদীঘি ময়দানের। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাসের কালের সাক্ষী এই মাঠ।

সর্বশেষ খবর