মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

সংবাদপত্র ব্যবসার সাত দশক

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

সংবাদপত্র ব্যবসার সাত দশক

১৮৮৩ সালে গুরুদয়াল সিংহ সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘ত্রিপুরা হিতৈষী’ কুমিল্লা জেলার প্রথম সংবাদপত্র। তার মৃত্যুর পর পত্রিকাটি যথাক্রমে তার পুত্র কমনীয় কুমার সিংহ এবং পুত্রবধূ ঊর্মিলা সিংহের সম্পাদনায় ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল। সম্ভবত ঊর্মিলা সিংহই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা সংবাদপত্র সম্পাদক। ওই সময়ে আরও কিছু সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক আমোদ। যা এখনো প্রকাশিত হচ্ছে। স্থানীয় সম্পাদক ও মালিকরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংবাদপত্র বিক্রি করতেন। ১৯৫২ সালের পর কুমিল্লা নগরীতে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র বিক্রির ব্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়া যায়। মুঘলটুলী এলাকায় হক লাইব্রেরি নামের প্রতিষ্ঠানে বইয়ের সঙ্গে সংবাদপত্রও বিক্রি হতো। কালিয়াজুরির আবদুল কাদের নামের এক ব্যক্তি ব্যবসা শুরু করেন। আবদুল কাদেরের সঙ্গে তার জামাতা শামছুর রহমান ভূইয়ার বড় ভাই ডুমুরিয়া চান্দপুর এলাকার মতিউর রহমান ভূইয়া ব্যবসা শুরু করেন। পরে শামছুর রহমান ভূইয়া (এস আর ভূইয়া) এসে দায়িত্ব নেন। তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে তাদের শো-রুম ছিল নগরীর ভিক্টোরিয়া কলেজের একাদশ শাখার সামনে। একাত্তরের পরে আসেন সোনালী ব্যাংকের পাশে।

এস আর ভূইয়ার এজেন্সি ছাড়াও বর্তমানে মোহাম্মদ আলী, আলমগীর হোসেন, আতিকুর রহমান, আবদুল বাতেন বাবু, আবুল কালাম মোল্লা, লিটন দাস, আবদুর রশিদ, আবুল বাশার নামের এজেন্টদের মাধ্যমে নগরীতে পত্রিকা প্রবেশ করে।

সরেজমিন আলেখারচর বিশ্বরোডে গিয়ে দেখা যায়, তখনো ভোরের আলো ফোটেনি। পত্রিকা গুনে বিলিকারীদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন এজেন্টরা। চারপাশে নতুন পত্রিকার মাদকতাময় গন্ধ। চলছে হাঁকডাক। পত্রিকার নতুন নতুন খবর নিয়ে সাইকেলযোগে পাঠকের বাসায় চলে যাচ্ছেন বিলিকারীরা।

এস আর ভূইয়া এজেন্সির পরিচালক সাইফুর রহমান মাসুম বলেন, আমার জেঠা এস আর ভূইয়ার শ্বশুর আবদুল কাদেরের মাধ্যমে কুমিল্লায় প্রথম ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র বিক্রি শুরু হয়। আগে নগরীতে ২০ হাজারের বেশি সংবাদপত্র বিক্রি হতো। করোনাসহ বিভিন্ন কারণে এখন তা ১০ হাজারে নেমে এসেছে।

পত্রিকার এজেন্ট মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এর আগে পত্রিকা বিলি করতাম। চার বছর ধরে এজেন্সি নিয়েছি। যত কষ্ট হোক সংবাদপত্র শিল্পের উন্নয়নে লেনদেন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নগরীতে যত সংবাদপত্র আসে সবগুলোর এক-চতুর্থাংশ বাংলাদেশ প্রতিদিন। এই পত্রিকার আরও চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, নগরীর এজেন্টদের অধিকাংশের পত্রিকা নামে আলেখারচর বিশ্বরোডে। বৃষ্টির সময় পত্রিকা ভিজে যায়। মহাসড়কের পাশে একটি শেড নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

ছড়াকার ও শিক্ষাবিদ জহিরুল হক দুলাল বলেন, ১৯৫৬-৫৭ সালের দিকে নগরীর রাজগঞ্জ দক্ষিণ গেটে ই-পাক স্টোর নামে একটি সংবাদপত্র বিক্রির দোকান ছিল। সেখান থেকে পত্রিকা কিনে পড়তাম। ১৯৬৭ সালের দিকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার খবর পড়তে ব্যাকুল হয়ে যেতাম। পত্রিকা বিকালে এসে রেলস্টেশনে নামত।

বাংলাদেশ সংবাদপত্র এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, দাউদকান্দিতে আমার পিতা আবদুর রশিদ ১৯৫৫ সালে সংবাদপত্রের ব্যবসা শুরু করেন। তখন ডাক বিভাগের মাধ্যমে পরের দিন পত্রিকা ঢাকা থেকে আসত। কখনো দুই-তিন দিন পরেও আসত। তিনি বলেন, নগরীর এজেন্টদের সুবিধার্থে মহাসড়কের পাশে একটি শেড নির্মাণের প্রয়োজন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সংবাদপত্র ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে শেড নির্মাণ করে দিতে আমাদের ইচ্ছা রয়েছে। স্থান নির্ধারণ করে তারা যোগাযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর