মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

পুথির জাদুঘর রামমালা পাঠাগার

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

পুথির জাদুঘর রামমালা পাঠাগার

রামমালা পাঠাগার। দেশের উল্লেখযোগ্য জ্ঞান ভান্ডারের একটি। কুমিল্লার এই পাঠাগারের তাকে তাকে সাজানো রয়েছে লালসালু মোড়ানো আট হাজারের বেশি পুথি। পুথির ঝাপসা হয়ে আসা লেখা অতীতের উজ্জ্বল ইতিহাসের খোঁজ করেন গবেষকরা। এটিকে ভারতীয় উপমহাদেশের উল্লেখযোগ্য জ্ঞান ভান্ডারও বলা হয়ে থাকে।

পাঠাগারের সূত্র জানায়, কুমিল্লা নগরীর লাকসাম রোডে ১৯১২ সালে শিক্ষানুরাগী মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য রামমালা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। শতবর্ষ বয়সী পাঠাগারে বিভিন্ন ধরনের ৩০ হাজার বই রয়েছে। এখানে রয়েছে প্রাচীন আট সহস্রাধিক পুথি। পুথি মানে হাতের লেখা প্রাচীন বই। পুথিগুলো বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় রচিত। পুথির বিষয় হচ্ছে ইতিহাস, প্রাচীন মহাকাব্য, বাংলা গীতি, সাহিত্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান। এখানে অনেকে গবেষণা করেন পুথি নিয়ে। লাল সালু মোড়ানো পুথির ভিতর থেকে বের করে আনেন শত শত বছর পুরাতন ইতিহাস ঐতিহ্য।

রামমালা পাঠাগারের আড়াই হাজার পুথি ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংরক্ষণের জন্য মাইক্রো ফিল্ম করে। রামমালা পাঠাগারের তিনটি বিভাগ রয়েছে। সাধারণ, পুথি ও গবেষণা বিভাগ। দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য জাতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৯২৯ সালে পুথি সংগ্রহের পরিকল্পনা করেন। বৃহত্তর কুমিল্লা, বৃহত্তর নোয়াখালী এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পুথি সংগ্রহ করা হয়। রামমালা সংলগ্ন ঈশ্বর পাঠশালার ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মচারীরা এসব পুথি সংগ্রহ করেন। অনেকে নিজ উদ্যোগে এখানে পুথি জমা দিয়ে যান। রামমালা পাঠাগার শুক্রবার ছাড়া প্রত্যেক দিন খোলা থাকে। মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকায় চলে পাঠাগারটি। ১৯২৬ সালে এ পাঠাগার পরিদর্শনে এসেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বর্তমান গ্রন্থাগারিক ইন্দ্র কুমার সিংহ এখানে ৭১ বছর ধরে বইয়ের সেবায় ব্যস্ত। ইন্দ্র কুমার সিংহ জানান, দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য ইচ্ছে করলে ঢাকা কিংবা কলকাতায় পাঠাগারটি স্থাপন করতে পারতেন। তিনি কুমিল্লায় পাঠাগার করার কারণ এ অঞ্চলের তরুণরা যেন জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে পারে। গবেষণা করতে মানুষ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে যায়, প্রয়োজনে তারা কুমিল্লায়ও আসতে পারবে।

মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য চ্যারিটেবল ট্রাস্টের সদস্য অধ্যাপক বিমল কুমার মজুমদার বলেন, পুথি বিভাগের অনেক বই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইক্রো ফিল্মের মাধ্যমে কপি করে রাখে। তিনি আরও বলেন, ট্রাস্ট যত দিন সম্ভব কারও সহযোগিতা ছাড়া চলতে চায়। তবে কেউ ইচ্ছে করলে আমাদের বই ডোনেশন করতে পারে। তার দাবি এখানে বিভিন্ন মনীষীর এমন অনেক বই আছে যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

সর্বশেষ খবর