মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

থার্ড টার্মিনাল ঘিরে বিশাল কর্মযজ্ঞ

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ কাজ বেশি সম্পন্ন হয়েছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

থার্ড টার্মিনাল ঘিরে বিশাল কর্মযজ্ঞ

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। রাত-দিন টানা দুই শিফটে কাজ করছেন শত শত কর্মী ও প্রকৌশলী ছবি : রোহেত রাজীব

করোনা মহামারীর চোখ রাঙানি, বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে এগিয়ে চলছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ। দুই শিফটে কাজ চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি জুন পর্যন্ত থার্ড টার্মিনালের ১৪ দশমিক ৫ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে সাড়ে ১৭ ভাগ।

থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনাল ভবনের ভিত্তির কাজ সম্পূর্ণ শেষ। মাটির নিচে পাইলিং থেকে শুরু করে মেঝে তৈরির কাজ পর্যন্ত শেষ হয়েছে। ভবনের মূল কাঠামো তৈরির জন্য পিলার বানানোর কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি পিলার এর মধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে। থার্ড টার্মিনালের সংযুক্ত হওয়া রানওয়ের কাজও এগিয়ে চলছে। রানওয়ে তৈরির জন্য ঢালাই কাজ চলছে। ৮ ঘণ্টা করে দুই শিফটে প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা টানা কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করার জন্য দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকরা। করোনা মহামারী থেকে শ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। প্রকল্প এলাকাতেই শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে টেস্ট, আইসোলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য অল্প পরিসরে হাসপাতালের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিছু শ্রমিক আক্রান্ত হলেও নিয়মিত চিকিৎসায় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনায় সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন তারা। ফলে কাজে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। করোনার থাবায় অনেক প্রকল্প পিছিয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে এই মেগা প্রকল্পের কাজ।

গত শনিবার বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, এ টার্মিনালের আকার বর্তমান বিমানবন্দরের ২ গুণের বেশি। টার্মিনালের কাজের সঙ্গে আশকোনার হজক্যাম্প থেকে একটি টানেল করা হবে। এটা দিয়ে হাজীরা হজক্যাম্প থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় উন্নয়নের মহাসড়কে পা রেখেছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে দৃষ্টিনন্দন থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এই টার্মিনালের সঙ্গে মেট্রোরেল সংযুক্ত থাকবে। টার্মিনালটি হবে সম্পূর্ণ অটোমেটেড। দৃষ্টিনন্দন এ বিমানবন্দরে পা রেখেই একজন বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের সৌন্দর্য অনুধাবন করতে পারবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কভিড আগ্রাসনে সারা বিশ্ব যখন থমকে ছিল তখন এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি থার্ড টার্মিনালের কাজ। ২০২৩ সালের জুনে এই টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে।

জানা যায়, ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) নির্মাণ করা হচ্ছে। টার্মিনাল ভবন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের। ভবনের ভিতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে মেট্রোরেল। তৈরি হবে পৃথক একটি স্টেশনও। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রোরেলে করে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবে। এ ছাড়া ঢাকার যে কোনো স্টেশন থেকে মেট্রোরেলের মাধ্যমে সরাসরি বিমানবন্দরে বহির্গমন এলাকায় যাওয়া যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ২৮ ডিসেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কারিগরি মূল্যায়ন, আর্থিক মূল্যায়ন শেষে প্রকল্পের কাজ পেয়েছে মিৎসুবিশি, ফুজিতা ও স্যামসাং কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)। এই প্রকল্প ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। প্রথম সংশোধনীর পর প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি এবং ঋণ হিসেবে জাপানের সংস্থা জাইকা দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। থার্ড টার্মিনালের নকশায় রাখা হয়েছে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজ। এর মধ্যে ১২টি প্রথম ধাপে নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে। বাকিগুলো পরে প্রয়োজন অনুযায়ী নির্মাণ করা হবে। বোর্ডিং ব্রিজের সঙ্গে থাকবে ১৩টি চেক ইন বেল্ট। পর্যাপ্ত সংখ্যক এক্সেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট সংযুক্ত রাখা হবে। থাকবে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন, বহুতল কার পার্ক। তিন তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্য রীতিতে আনা হবে অনন্য নান্দনিকতা। টার্মিনাল ভবনের বহির্বিভাগে থাকবে চোখ ধাঁধানো নকশা।

সর্বশেষ খবর