মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ছাদবাগানে ফলছে স্বাদের ড্রাগন

মাহমুদ আজহার

ছাদবাগানে ফলছে স্বাদের ড্রাগন

দেশে এখন ড্রাগন ফলের চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অসংখ্য মানুষ ছাদকৃষিতে যুক্ত করেছেন জনপ্রিয় এই বিদেশি ফলটি। রাজধানীর শাহজাদপুরে সুবাস্তু টাওয়ারের ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ করছেন পুলিশ কর্মকর্তা এ কে এম লিয়াকত আলী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

লিয়াকত আলী জানালেন, অনেকেই তার কাছ থেকে চারা বা ডগা নিয়ে ড্রাগন চাষ করছেন। বিনামূল্যেই তিনি চারা বা ডগা দিচ্ছেন। ছাদবাগানে আগ্রহীদের তিনি শুধু ড্রাগনই নয়, অন্যান্য ফুল বা ফলের গাছও উপহার দেন

এ কে এম লিয়াকত আলী। পেশায় পুলিশ কর্মকর্তা। রাজধানীর শাহজাদপুরে সুবাস্তু টাওয়ার-৫ এ পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তিনি একজন প্রকৃতি প্রেমীও। নিজের বাসাটি বাহারি ফুল-ফলের গাছগাছালিতে ভরপুর। বাসার ছাদেও শত শত ফুল ফলের গাছের সমাহার। অবাক করার বিষয় হলো, তিনি কয়েক বছর ধরে ছাদবাগানে ড্রাগন চাষ করছেন। এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে। তার ছাদ বাগানে ৫০টি ড্রামে ২শ’ ড্রাগন গাছ আছে। প্রতিটি ড্রামে চারটি করে ড্রাগন গাছ লাগানো হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে নয়, শখের বসেই করা তার এই ড্রাগন চাষ। এ ছাড়াও বাসার ছাদে তার বিভিন্ন ধরনের সবজিসহ দেশী বিদেশী ফলও চাষ করেন তিনি। লিয়াকত আলী বর্তমানে পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসাবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম সার্কেলে কর্মরত আছেন। পেশায় চাকরীজীবী হওয়ায় তার অবর্তমানে এই শখের বাগান পরিচর্যা করেন তার সহধর্মিনী কানিজ ফাতিমা, শ্যালিকা ফারজানা হক ও শ্যালক এ বি এম সাইফুল হক বাপ্পী।

এ কে এম লিয়াকত আলী জানান, ২০১১ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সেখানে ‘হালদা ভ্যালী টি স্টেট’ এর ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন তাকে কিছু চা পাতা ও ‘ড্রাগন’ ফল উপহার দেন ওই ম্যানেজার। এরপর ম্যানেজারের সঙ্গে ড্রাগন চাষ দেখতে যান হালদা ভ্যালী টি স্টেটে। থাইল্যান্ড থেকে চারা এনে করা চা বাগানের মাঝে নানা রঙের ড্রাগন চাষ দেখে উদ্ধুদ্ধ হন এ কে এম লিয়াকত আলী। এরপর তিনি সেখান থেকে চারটি চারা নিয়ে আসেন ঢাকায়। জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে রপ্ত করে আসেন ড্রাগন চাষ পদ্ধতি।

এরপর তিনি সুবাস্তু টাওয়ার-৫ এর ছাদে ড্রামে চারটি চারা লাগান। শুরুতে যখন ছাদবাগান শুরু করেন তখন সুবাস্ত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। ছাদে পানির লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিচ থেকে ওপরে বিভিন্ন ফলজ গাছ নিতে বাধা দেওয়া হয়। তবুও দমে যাননি এ কে এম লিয়াকত আলী। শখের বাগান করার দৃঢ় প্রত্যয় ছিল তার। নানা বাধা ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে সফলও হন তিনি। এক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ তাকে বাধার পরিবর্তে ছাদবাগান করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এখন তিনি সবার সহযোগিতায় পুরো ছাদ জুড়েই ড্রাগন চাষের পাশাপাশি নানা ধরনের ফুল-ফলের চাষ করেছেন।

 

গতকাল বিকালে সরেজমিনে লিয়াকত আলীর ছাদ বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাগানে ৫০টি ড্রামে ২ শতাধিক ড্রাগন গাছ লাগানো হয়েছে। একটি ড্রাম কেটে দুই ভাগ করে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি ড্রামে চারটি করে গাছ লাগানোয় উপরে রিং বা টিউব ব্যবহার করা হয়েছে। কোন গাছে ফুল, কোন গাছে পরিপক্ক ফলও দেখা গেছে। লিয়াকত আলীকে সপরিবারে ছাদ বাগানের পরিচর্যা করতে দেখা যায়। সুবাস্তুতে সাতটি টাওয়ারের প্রায় সবগুলোর ছাদেই তার বাগান থেকে নেওয়া ড্রাগনের চারা লাগিয়েছেন অন্য বাসিন্দারা। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি লিয়াকত আলীর ছাদ বাগানে নানা প্রজাতির আম, পেপে, মাল্টা, জাম্বুরা, লেবু, ডালিম, ত্বীন, পেয়ারা, সুন্দরী কুল, অ্যাভাকাডো, আল মেরি, ব্ল্যাকবেরি, চেরি, আঙ্গুর, গন্ধরাজ, পার্সিমন (জাপানের জাতীয় ফল), রাম্বুটান, গোলাপ, জবা, কামিনী, এরোমেটিক জুঁই, অপরাজিতা, গান্ধা, টাইম ফুল, রেইন লিলি, সোর্ড লিলি, এভিনিয়ামসহ হরেক রঙের ফুল ও ফলের গাছ দেখা যায়। লিয়াকত আলীর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, বাসার ড্রইংরুম জুড়েই দেশী বিদেশী নানা ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে। তার প্রতিটি রুমেই প্রকৃতির ছোঁয়া।

এ কে এম লিয়াকত আলী বলেন, শৈশব থেকেই আমার ফুল ফলের গাছ লাগানোর প্রতি শখ। বিশেষ করে ড্রাগন চাষ শখের বসেই করা। এখানে কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই। এরমধ্যে অনেক ফল তুলেছি। আমরা নিজেরাও খেয়েছি। টাওয়ারের সিকিউরিটি থেকে শুরু করে প্রায় সব ফ্ল্যাটেই ফল দিয়েছি। সবাই খুশি হয়েছেন। এটাই আমার আনন্দ। 

তিনি জানালেন, তার ছাদে নানা রং ও স্বাদের ড্রাগন আছে। ফলের ওপরে লাল রং দেখা গেলেও ভেতরে মাংসালো অংশ লাল, কালো, পিংক, সাদা, হলুদ রঙের হয়। থাইল্যান্ড প্রজাতির হওয়ায় ড্রাগন ফল আকারে বড় ও খুবই মিষ্টি হয়। ড্রাগন চাষে কেমন খরচ হয় জানতে চাইলে এ কে এম লিয়াকত আলী বলেন, ড্রাম সিস্টেমে একটি ড্রামে চারটি গাছ লাগানো যায়। এতে প্রায় ১৭০০ টাকা খরচ হয়। এরমধ্যে ড্রাম খরচ বাবদ সাড়ে ৫০০টাকা, গোবরসহ চারবস্তা মাটিতে ৪০০টাকা, একটি পাইপ ২৫০টাকা, টায়ার বা রিং ৫০ টাকা, প্রতিটি চারা ১০০ টাকা খরচ হয়।

লিয়াকত আলী জানালেন, অনেকেই তার কাছ থেকে চারা বা ডগা নিয়ে ড্রাগন চাষ করছেন। বিনামূল্যেই তিনি চারা দিচ্ছেন। ছাদ বাগানে আগ্রহীদের তিনি শুধু ড্রাগনই নয়, অন্যান্য ফুল বা ফলের গাছও উপহার দেন। ছাদ বাগানে কিছুটা হলেও পরিবেশ রক্ষা ও অক্সিজেন পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা তার।

সর্বশেষ খবর