মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

উৎসবে অবহেলায় স্বাস্থ্যবিধির কোরবানি

রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাসটার্মিনালে হাজার হাজার মানুষ ছিল বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। বাড়িফেরা মানুষের অধিকাংশের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউই

মাহমুদ আজহার

উৎসবে অবহেলায় স্বাস্থ্যবিধির কোরবানি

করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুতে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। অথচ ঈদ উৎসবের উচ্ছ্বাসে করোনার স্বাস্থ্যবিধিই মানছে না কেউ। রাজধানীর পশুর হাট, বাস ও লঞ্চ যাত্রায় ছবি -রোহেত রাজীব

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই ঈদুল আজহার উৎসবকে ঘিরে বাড়ি ফিরছে লাখ লাখ মানুষ। করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই মানুষের এভাবে বাড়ি ফেরাকে ‘চরম বিপজ্জনক’ হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ঢাকাসহ সারা দেশে ঈদকে ঘিরে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। সেখানেও বালাই নেই স্বাস্থ্যবিধির। হাট-বাজার ঠিকমতো তদারকিও হচ্ছে না। এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন তুলে নেওয়ার পর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শপিং মল, মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানসহ কাঁচাবাজারে। কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধি। গণপরিবহন বিশেষ করে বাস, লঞ্চ এমনকি আকাশপথেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। আবার ঈদের ছুটির পরদিন থেকে ঢাকায় ফেরা নিয়ে চলবে মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা। উৎসবে অবহেলায় স্বাস্থ্যবিধিকেই যেন কোরবানি দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে মানুষের অবাধ যাতায়াতে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানুষ যেভাবে বাড়ি ফিরছে তাতে জনগণের সহযোগিতা ছাড়া স্বাস্ব্যবিধি কার্যকর করা সম্ভব নয়। করোনা যেহেতু জনস্বাস্থ্যের সমস্যা, এর সমাধানও জনগণকে নিয়েই করতে হবে। কোরবানির ঈদে বাড়ি ফেরাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে। মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, মাস্ক না পরে, বাড়ি গিয়ে বিয়ে-শাদীসহ নানা জনসমাগমমূলক কর্মসূচিতে যোগ দেয় তাহলে তো সংক্রমণ বাড়বেই। ঈদ-পরবর্তী এটা সামাল দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। শপিং মলসহ বিপণিবিতানগুলোতেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। পর্যটন কেন্দ্রগুলো খোলা যাবে না। কোরবানির ব্যাপারেও মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।’

গত তিন দিন ধরে পথে পথে ভোগান্তি আর ঝক্কি-ঝামেলা থাকলেও যেন বাড়ি ফেরার প্রতিযোগিতা চলছে মানুষের মধ্যে। তবে এসব মানুষের কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে সবার মধ্যেই চরম উদাসীনতা চলছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে মহাসড়কও স্বরূপে ফিরে গেছে। অপরদিকে আন্তঃনগর ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও বাস ও লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি রীতিমতো উপেক্ষিত। এ ছাড়া শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে নেমেছে মানুষের ঢল।

গতকাল রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাসটার্মিনালে হাজার হাজার মানুষ ছিল বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। বাড়িফেরা মানুষের অধিকাংশের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউই। অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। দূরপাল্লার বাসে দুই সিটে একজন করে নেওয়া হলেও ট্রাক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে মানা হচ্ছে না এই দূরত্ব। এসব যানে গাদাগাদি করে রাজধানী ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ। অনেক বাসকাউন্টারেও টিকিট না পেয়ে বিকল্প উপায়ে মানুষকে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হতে হবে। করোনার এই দুঃসময়ে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর গণপরিবহনগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জুলুম থেকে মুক্তি দিতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাচ্ছি।’

ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়ে নৌরুটেও উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। ফেরিতে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বাড়ছে। বাংলাবাজার ঘাটে পণ্যবাহী অসংখ্য ট্রাক আটকে আছে। পদ্মায় স্রোত বেড়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। শিমুলিয়া থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পথ ঘুরে ফেরিগুলোকে বাংলাবাজার ঘাটে আসতে হচ্ছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে স্রোতের তীব্রতা। স্রোতের কারণে দুটি ডাম্প ও একটি ছোট ফেরি বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য ফেরি পারাপারে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে। এতে চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন পারাপার সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঘাটে আটকে থাকা যানবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

গোপালগঞ্জগামী বাসযাত্রী শফিক আহমেদ জানালেন, অফিস থেকে ছুটি দিয়েছে। তাই ঢাকায় বসে থেকে লাভ নেই। অন্য সহকর্মীরা বাড়ি চলে গেছেন। তাছাড়া মা-বাবাকে ছাড়া ঈদ করার কথা ভাবা যায় না। তাই কষ্ট করেই গাদাগাদি করে বাসে বাড়ি যাচ্ছি। তবে বাসে যেভাবে যাত্রী তোলা হয়েছে তাতে দুই-একজন যাত্রীর করোনা থাকলে তা সবার মাঝেই ছড়াতে পারে।

সর্বশেষ খবর