মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

গাছ লাগানোয় আগ্রহ বাড়ছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গাছ লাগানোয় আগ্রহ বাড়ছে

করোনা সংক্রমণের এই সময়ে ঘরবন্দী মানুষ গাছ লাগাচ্ছে অনেক বেশি। লকডাউনের কারণে এবার বর্ষায় বৃক্ষমেলা না হলেও নার্সারিগুলোর বিক্রি জমজমাট। আগারগাঁওয়ের সবুজ বাংলা নার্সারি থেকে রবিবারের ছবি - রোহেত রাজীব

চিলেকোঠার টবে উঁকি দিচ্ছে লাল টমেটো, কাঁচামরিচ আর বেগুন। পাশেই কড়া রোদের আঁচ থেকে বাঁচতে মাচানের বেষ্টনীতে ঝুলছে মাঝারি গড়নের লাউ। সিঁড়ি ধরে নামতেই চোখ জুড়ায় কলা, সফেদা, পেয়ারা, আনার আর জাম্বুরা মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি গাছের কচি পাতা, ফুল আর মুকুলের ঘ্রাণ। বড় গাছের বৃত্ত থেকে মাথা তুলে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে পুঁইশাকের কোমল পাতা। আর ছাদের ধার ঘেঁষে হাওয়ায় শিমের কচি ডগা আর বাহারি মৌসুমি ফুলের শাখা-প্রশাখা।

রাজধানীর উত্তরা এলাকার সাজিয়া রহমানের বাড়ির ছাদ আর বেলকোনির দৃশ্য এটি। তার মতো এমন গাছপ্রেমী উদ্যোগী মানুষের সংখ্যা এখন বাড়ছে। করোনা মহামারীতে ঘরবন্দী মানুষের অবসর কাটানোর অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে গাছ। নার্সারি থেকে বিভিন্ন ধরনের টব, মাটি, চারা কিনে সবুজে ভরিয়ে তুলছে বাড়ির আনাচে-কানাচে। লকডাউনের এ সময়ে গাছ লাগানোয় ঝোঁক আরও বেড়েছে মানুষের। রাজধানীর গন্ডি পেরিয়ে এ বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে মফস্বল শহরের অলিগলিতে। শস্য-শ্যামল বাংলার প্রকৃতি চোখ জুড়ায় তার সবুজের অভয়ারণ্যে। কিন্তু সভ্যতার চাকায় ভর করে ইট-কাঠ, পাথরের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। তাই প্রকৃতি বাঁচিয়ে সবুজের স্পর্শ পেতে নীলাভ আকাশের নিচের খোলা ছাদ, গ্রিলে ঘেরা বেলকোনি কিংবা ঘরের কোণকেই বেছে নিচ্ছেন মহানগরের বাসিন্দারা। প্রথম দিকে ছাদের কোণায় টবে রকমারি মৌসুমি ফুল লাগানো ছিল মানুষের শখ কিন্তু এখন কৃষি খাতে অবদান রাখতে শুরু করেছে বাসাবাড়িতে লাগানো গাছের ফলমূল-সবজি। মানুষের এই আগ্রহের কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নার্সারির ব্যবসা। দেশি বিভিন্ন ফল-ফুলের সঙ্গে বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল-ফুলের চারা পাওয়া যাচ্ছে নার্সারিতে। লকডাউনে নার্সারিতে যেতে না পারলেও অনলাইন কেনাকাটা চলছে। ফেসবুক পেজে কিংবা ফোন করে মাটি, টব, চারা অর্ডার করছেন রাজধানীর বাসিন্দারা।

রাজধানীর আগারগাঁও-মিরপুরে সড়কের মাঝে গড়ে ওঠা সবুজে বাঁচো নার্সারির ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার হোসেন বলেন, মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি গাছ লাগাচ্ছেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ ট্রাক গাছ ও চারা যায় আমাদের নার্সারি থেকে। লকডাউনের কারণে অর্ডার থাকলেও পাঠানো যাচ্ছে না। এর মধ্যেও অনেকে এসে চারা কিনছেন। করোনা মহামারীর মধ্যে চারার পাশাপাশি বীজ, টব ও সার মেশানো মাটি বিক্রি বেড়েছে বলে জানান তিনি। গোবর মেশানো এক ব্যাগ মাটি বিক্রি করেন ৮০ টাকায়। সারের ধরন অনুযায়ী পাঁচ কেজি মাটির প্যাকেট ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি করি। নার্সারি এখন বেশ লাভজনক ব্যবসা।

রাজধানীর একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক রেজিয়া আহমেদ বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ। ছেলেমেয়েদের স্কুল না থাকায় অনলাইনে ক্লাস শেষে মোবাইল, কম্পিউটারে গেমসে ঝুঁকছিল। কিছুদিন পরে লক্ষ্য করি দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকায় শিশুদের মাথাব্যথা করছে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে উঠছে, ক্ষুধামন্দা দেখা দিচ্ছে। ওদের সময় কাটানোর অন্য ব্যবস্থা করতে বাসায় টব, মাটি, চারা গাছ এবং বিভিন্ন গাছের বীজ এনেছি। ওদের সঙ্গে নিয়ে গাছ লাগিয়ে গাছের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছি। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে গাছের যত্ন নিয়ে ছেলেমেয়েদের ভালো সময় কাটছে।  

রেডিয়েন্ট বনসাই সোসাইটির সদস্য রেহানা পারভীন হাসি বলেন, ‘করোনাকালে ঘরবন্দী মানুষ অবসর সময় কাটাতে গাছ লাগানোয় উৎসাহী হচ্ছে। অনেকে বনসাই করার আগ্রহ দেখিয়ে যোগাযোগ করছে। এর মধ্যে পাকুড়, প্রেমনার তিনটি বনসাই বিক্রি করেছি। মানুষ সবচেয়ে বেশি কিনছে দেশি-বিদেশি মানিপ্লান্ট। বেলকোনি থেকে ঘরের কোনায় সৌন্দর্য বৃদ্ধি করায় মানিপ্লান্টে মানুষের আগ্রহ বেশি।’ 

ক্রমাগত বৈশ্বিক উষ্ণতা রাজধানী ঢাকার টুঁটি চেপে ধরেছে। উষ্ণতা বাগে আনতে কমাতে হবে কার্বন নিঃসরণ, বাড়াতে হবে অক্সিজেন। ঢাকায় অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে ছাদবাগান হতে পারে বড় উৎস। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ছাদবাগানের মালিকদের গৃহকর রেয়াতের আওতায় এনে তাদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাদবাগান করলে ১০ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। গ্রিন সেভার্সের প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি বলেন, ‘করোনাকালে মানুষ সুরক্ষিত থাকতে ঘরে বেশি সময় কাটাচ্ছে। ছাদ, বেলকোনির ফাঁকা জায়গায় সবুজ শাক কিংবা মৌসুমি ফল-ফুলের গাছ লাগাতে উৎসাহিত হচ্ছে মানুষ। ফলে বৃক্ষমেলা না হলেও নার্সারিগুলোর বিক্রি মোটামুটি ভালোই হচ্ছে। অনেকেই গাছ কিনতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এখন অনেক শিশু ক্রেতা পাচ্ছি। অনেক অভিভাবক শিশুদের গাছ কিনে দিচ্ছেন অবসর কাটাতে, সবুজের প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে।’  

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর