মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

নগরীজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক

বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নগরীজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক

করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর বিস্তার নগরীতে নতুন আতঙ্ক। শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। রবিবার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি চার বছরের শিশু ইয়ামিন। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীর। ছটফট করছে ছোট্ট ইয়ামিন, সরে যাচ্ছে হাতে লাগানো ক্যানুলা। মা-বাবার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। পাশের বেডে আরেক শিশু রাইজা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে।

রাজধানীজুড়ে জুলাই মাস থেকে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগী। চলতি মাসেও ঊর্ধ্বমুখী আক্রান্ত হার। এর একটি বড় অংশ শিশু। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে শাবাব মেহেদী (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শাবাব বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সারওয়ার হোসেনের একমাত্র ছেলে। গত বুধবার রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মৃত্যুও ডেঙ্গুর কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ বছর ১৪ জনের মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু বলে শনাক্ত হয়েছে। তবে আইইডিসিআর এখনো তাদের পর্যালোচনা সম্পন্ন করেনি।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক শফি আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন প্রায় ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নিয়ে অনেক শিশু আসছে। এ পর্যন্ত চারজন শিশু মারা গেছে। আউটডোরেও অনেক রোগী আসছে। জুলাই মাসে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে, এ মাসেও ঊর্ধ্বমুখী।

এই শিশু বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, শিশুদের জন্য করোনাভাইরাসের চেয়ে ডেঙ্গু বেশি বিপজ্জনক। করোনায় শিশুদের মাইল্ড সিম্পটম হয় এবং তাদের ঝুঁকিটা কম থাকে। কিন্তু ডেঙ্গুতে শিশুরা অনেক ঝুঁকিতে থাকে। শিশুদের শরীরে কামড়াতে মশার সুবিধা হয়। প্রায় বিনা বাধায় শিশুর পাতলা চামড়া ভেদ করে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কামড়ায়। মশার কামড় থেকে বাঁচাতে মশারির পাশাপাশি ক্রিম ও রিপেলেন্ট মাখানো যেতে পারে। তাই জ্বর এলে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্টও করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জ্বর কমানোর কিংবা ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, আগস্ট মাসের আট দিনে ১ হাজার ৮৮৫ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত ২১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে রাজধানীর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মানুষ। 

ডেঙ্গু থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এপ্রিল-অক্টোবর পর্যন্ত সময় ডেঙ্গু মৌসুম হওয়ায় সতর্কতা খুব জরুরি। জুলাইয়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নগরীর বাসিন্দারের ঘরের ভিতরের জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে এবং সিটি করপোরেশনকে বাইরে পরিষ্কারে তৎপর হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা ও জ্বর আসতে পারে। এ ছাড়া শরীরে এলার্জির মতো র‌্যাশ উঠতে পারে। এ সময় জ্বর এলে করোনা টেস্টের পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্টও করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না। জ্বর এলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়ে রোগ ঠেকানো সম্ভব নয়। এ জন্য আক্রান্তের হার কমাতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে। এ জন্য সতর্ক থাকতে হবে।’ সিডিসি থেকে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ করতে জরিপ চালানো হয়েছিল। সে তথ্য সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার মৌসুমে লার্ভার ঘনত্ব নির্ণয়ে জরিপ শুরু হয়েছে। রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোড এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের নিচের তলায় দেখা যায়, জমে থাকা পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে এডিস মশার লার্ভা। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এ চিত্র দেখতে পান। তাঁর উপস্থিতিতে ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে ভবন মালিককে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, এডিস মশার বংশবিস্তারে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। ব্যক্তিগত, সরকারি কিংবা বেসরকারি যে কোনো ভবনেই এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেলে জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর