শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

দেয়ালে ডানা মেলছে পাখি-প্রজাপতি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

দেয়ালে ডানা মেলছে পাখি-প্রজাপতি

কুমিল্লা নগরীর সাদা দেয়াল। রংতুলির স্পর্শে সেখানে ডানা মেলছে পাখি-প্রজাপতি। দেয়ালে আরও স্থান পেয়েছে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি ঐতিহ্য। টেপাপুতুল, নকশিকাঁথা, পুতুল নাচ, সার্কাস, গাজিরপট, বাউল হাতে একতারা, শখের হাঁড়ি ইত্যাদি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রংতুলির আঁচড়ে দেয়ালের জড় দেহে প্রাণ দিচ্ছে শিশু এবং তরুণ চিত্রশিল্পীরা। কুমিল্লা নগরীর প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সেন্টমাইকেল স্কুলের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে স্টেশন ক্লাব পর্যন্ত ৭১টি দেয়াল। প্রতিটি দেয়ালে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের চিত্র। সেখানে চলতে গিয়ে অনেকে চোখ আটকে যায়। এদিকে কুমিল্লা ইপিজেডের পাশের ৪০টি দেয়ালেও চিত্রাঙ্কনের কাজ চলছে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মুনিরা মাকে নিয়ে এসেছে ছবি দেখতে। সে জানায়, চিত্রগুলো দেখে খুব ভালো লাগছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ বই-পুস্তকে ইতিহাস পড়েছে। দেয়ালচিত্রে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। গাজিরপট, পুতুল নাচ, টেরাকোটা, টেপাপুতুল কী তা আগে কখনো দেখেনি, আজকে এই দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো সম্পর্কেও জানতে পেরেছে।

মুনিরার মা বলেন, এই উদ্যোগটি ব্যতিক্রম। এতে আমাদের সন্তানরা সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পাবে। নগরীর প্রত্যেকটি দেয়ালে বাঙালির ইতিহাস এবং লোকসংস্কৃতির চিত্র তুলে ধরা প্রয়োজন। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আল-আমিন বলেন, একটি চিত্র হাজার শব্দের চেয়েও অর্থবহ। এই দেয়ালচিত্র নতুন প্রজন্মের কাছে নান্দনিক উপায়ে মেলে ধরবে আমাদের ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি। দেয়াল চিত্রাঙ্কনের উদ্যোক্তা শিল্পী মো. শাহিন জানান, আমরা মোট ৭১টি দেয়াল অঙ্কনের জন্য নির্দিষ্ট করেছি। এর নামকরণ করেছি ‘দেয়াল ’৫২ থেকে ৭১’। উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের বিলুপ্ত হওয়া ঐতিহ্য। এর মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। বিলুপ্ত হওয়া সংস্কৃতির পরিচিতি পাবে। নগরীতে এমন বৃহৎ পরিসরে দেয়াল চিত্রাঙ্কন এটাই প্রথম। এই উদ্যোগের খরচ বহন করছেন মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু। এ ছাড়া কুমিল্লা ইপিজেডের পাশের ৪০টি দেয়ালেও চিত্রাঙ্কনের কাজ চলছে। সেখানে বিমূর্ত ও কালার কম্বিনেশনের কাজ গুরুত্ব পাচ্ছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, দেয়াল চিত্রে স্থান পেয়েছে আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সঙ্গে রয়েছে আমাদের বিলুপ্ত হওয়া ঐতিহ্য। দেয়ালে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার সঙ্গে নগরীর শোভা বর্ধনেরও কাজ হচ্ছে। এই জন্য অঙ্কনশালার শিক্ষক ও শিল্পীদের ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, নগরীর আরও দেয়ালের শোভা বর্ধনের কাজ করতে পারব।

সর্বশেষ খবর