মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে ঢোপকল

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

হারিয়ে যাচ্ছে ঢোপকল

রাজশাহীর মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে রানী হেমন্ত কুমারী নিজ অর্থায়নে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে স্থাপন করেন সুপেয় পানির ‘ঢোপকল’। এ ঢোপকলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজশাহীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কিন্তু দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঢোপকলগুলো। প্রাণ বাঁচানো ঢোপকলগুলো এখন শুধুই ঐতিহ্য। এখন এসব ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো রক্ষণাবেক্ষণেরও উদ্যোগ নেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, রাজশাহী নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য একসময় প্রসিদ্ধ ছিল এই ঢোপকল। সেসময় রাজশাহী শহরে পানযোগ্য পানির খুবই অভাব ছিল। এখন এগুলো শুধু রাজশাহীর ঐতিহ্য। অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনের মতো ঢোপকলগুলোও বিলুপ্তির পথে। নগর উন্নয়ন ও রাস্তা প্রশস্তকরণের কারণে এক এক করে ভেঙে ফেলা হচ্ছে ঢোপকলগুলো। অথচ এগুলোর সংরক্ষণ করা উচিত।

ইতিহাস বলছে, ১৯৩৪-৩৯ সাল পর্যন্ত রায় ডিএন দাশগুপ্ত ছিলেন রাজশাহী পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান। সুপেয় পানির অভাবে কলেরাসহ পেটের পীড়া ও মৃত্যুর বিষয়টি চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন রাস্তার মোড়ে মোড়ে পানির কল স্থাপন করা হবে। নগরবাসীকে সরবরাহ করা হবে সুপেয় পানি। এতে কমবে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। ১৯৩৭ সালের আগস্ট মাসের দিকে মিনিস্ট্রি অব ক্যালকাটার অধীনে রাজশাহী ওয়াটার ওয়ার্কস নামে পানি সরবরাহ ও বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এই কাজে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের নামকরা ধনীদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধও করা হয়। সেই সূত্র ধরে পুঠিয়ার মহারানী হেমন্ত কুমারী নিজেই দান করেন ৬৫ হাজার টাকা। তিনি সমাজের ধনী ব্যক্তিদের সাহায্যের আহ্বান জানান। এতে সাড়াও মেলে বেশ। পরে রাজশাহী জেলা বোর্ডের দান করা জমিতে পুঠিয়ার মহারানী হেমন্ত কুমারীর নামে নগরীতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০টি ওয়াটার ওয়ার্কস স্থাপিত হয়। কালক্রমে ‘রানী হেমন্ত কুমারী ঢোপকল’ নামেই পরিচিত হয় ঢোপকলগুলো। রাজশাহীর ইতিহাস গবেষক ড. তসিকুল ইসলাম রাজা বলেন, ২০১০ সালের দিকেও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০টি ঢোপকল ছিল। রাস্তা প্রশস্তকরণ ও বর্তমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ না খাওয়ায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এসব ঢোপকলের বেশিরভাগই ভেঙে ফেলেছে, যা আছে সেগুলোও প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. এ বি এম শরিফ উদ্দিন জানান, ব্যবহার না থাকায় এই ঢোপকলগুলো সবই অচল। এ ছাড়া রাস্তা সম্প্রসারণকালে বেশ কিছু ঢোপকল ঠিকাদার না বুঝেই ভেঙে ফেলেছে। তবে অবশিষ্ট ঢোপকলগুলো যা আছে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর