রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও লেখক আবুল কাসেম সরকার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন কারমাইকেল কলেছে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। কারমাইকেল কলেজে ঢোকার মুখেই রংপুর নগরীর দক্ষিণ পাশে বিশাল লালবাগ হাট। হাটের প্রবেশ মুখে রয়েছে একটি বাঘের ভাস্কর্য। বাঘের ভাস্কর্যটি দেখে মেয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল, বাবা এখানে কী লাল বাঘ ছিল। বাবা লালবাগের ইতিহাস জানা সত্ত্বেও কোনো উত্তর দিতে পারলেন না। তিনি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললেন, রংপুরে ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদ করার কি মানুষ নেই। প্রায়ই লালবাগের বাঘকে নিয়ে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। লালবাগে বাঘের ভাস্কর্য থাকায় এই প্রজন্মের অনেকেই মনে করেন, এখানে এক সময় লাল বাঘ ছিল। আসলে বিষয়টি তা নয়। লালবাগের নামকরণ হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শহীদ লালবিবির নামে। তখন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ফুলচৌকি ছিল রাজধানী। প্রবীণ ইতিহাস লেখক মতিয়ার রহমান বসনিয়া বলেন, মুঘল সম্রাট শাহ আলমের বড় চাচাত ভাই এবং ভগ্নিপতি ছিলেন নবাব নূর উদ্দিন বাকের মোহাম্মদ জং। সে সময় এ অঞ্চলের রাজধানী ছিল ফুলচৌকি। এখানকার শাসক ছিলেন তিনি। বাকের জং ১৭৬০ থেকে ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংরেজদের সঙ্গে অসংখ্যবার যুদ্ধ করেছেন। সর্র্বশেষ লালমনিরহাটের আদিতমারীর মুঘলহাটে ব্রিটিশ সেনাদের অতর্কিত হামলায় আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে রাজধানী ফুলচৌকিতে নেওয়া হয়। আহত অবস্থায় ১৭৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ফুলচৌকির নিজ বাসভবনে মারা যান। বাকের জংয়ের দুই কন্যা শাহাজাদি লালবিবি ও শাহাজাদি চাঁদ বিবি। লালবিবিও ছিলেন পিতার মতো ইংরেজ বিরোধী। ১৮৩২-৩৩ সালে রংপুর নগরীর মীরগঞ্জ তামপাট এলাকায় প্রজা, ফকির বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধে লালবিবিকে হত্যা করে ইংরেজরা। তামপাটে লালবিবিকে সমাহিত করা এলাকাটির নাম এখন সমর দীঘি। বর্তমানে যেখানে লালবাগ হাট। কালের পরিক্রমায় লালবিবির নাম হারিয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু ২০১৫ সালে লালবাগ হাটের প্রবেশমুখে একটি বাঘের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। বাঘের ভাস্কর্য নির্মাণের পর থেকে অনেকে মনে করছেন এখানে কোনো এক সময় বাঘ ছিল। রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এটি বিগত মেয়র করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত।