মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

হাই কমোড হাই রিস্ক

কমোড ব্যবহারে মলত্যাগের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পাইলস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দীর্ঘদিন এ সমস্যায় ভুগলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

হাই কমোড হাই রিস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সপ্তাহখানেকের জন্য রাষ্ট্রকার্য পরিচালনা থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। কারণ, তিনি হেমোরয়েডসে (অর্শরোগ) আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর চিকিৎসক তখন বলেন, তিনি কমোড ব্যবহারের কারণে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মলত্যাগের জন্য কমোডে বসলে মলদ্বার প্রশস্ত হতে পারে না। পেটে স্বাভাবিকের বেশি চাপ পড়ে, পায়ুপথের শিরায় টান লাগে এবং ফুলে যায়। যারা দীর্ঘদিন কমোড ব্যবহার করেন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, হেমোরয়েডসের মতো রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। হাই কমোড উচ্চ ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে হাই কমোড ব্যবহারের কারণে শহরের বাসিন্দারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন।

কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কোঅর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানুষ নিজেকে আধুনিক প্রমাণ করতে সমসাময়িক বিষয়ের সঙ্গে তাল মিলায়। হাজার বছর আগে থেকে মানুষ উবু হয়ে বসেই মলত্যাগ করছে। এরপর রোগজীবাণু প্রতিরোধে প্যান ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৮৫১ সালে লন্ডনে বাণিজ্য মেলায় এক স্যানিটারি ব্যবসায়ী ফ্লাশ টয়লেট নামে প্রদর্শনী করেছিলেন। তখন জনপ্রিয় না হলেও আস্তে আস্তে কমোডের ব্যবহার বাড়তে থাকে। বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, দেখতে আধুনিক এবং সুবিধাজনক মনে হলেও এটা অবৈজ্ঞানিক। হাই কমোড ব্যবহার করলে পেরিনিয়াল রিজিউনের মাংসপেশি ঠিকমতো কাজ করে না। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, হেমোরয়েডসের মতো রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারিতে সমস্যা হচ্ছে, সিজারিয়ান করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, হাই কমোড ব্যবহার করলে হাঁটুর পেশিতে সমস্যা হচ্ছে, ব্যথায় ভুগতে হচ্ছে মানুষকে। কমোড ব্যবহার না করে প্যান ব্যবহার করলে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কোয়ান্টামে আমরা বঙ্গাসন বলি, এভাবে বসলে নারীদের গর্ভকালীন ব্যাকপেইন কমে, স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়বে। কমোডে দীর্ঘসময় বসে কাটাতে অনেকে মোবাইল নিয়ে যান।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১০ জন আমেরিকানের নয়জনই টয়লেটে ফোন নিয়ে যান। এতে হাই কমোড ব্যবহারের সময় বাড়ে। কমোড ব্যবহারে মলত্যাগের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পাইলস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দীর্ঘদিন এ সমস্যায় ভুগলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

প্রাকৃতিক কাজ বা মলত্যাগের জন্য অনেক আগে থেকে নিচু কমোডে উবু হয়ে বসার অভ্যাস চলে আসছে। তখন কোষ্ঠকাঠিন্য, হেমোরয়েডস (অর্শরোগ), অন্ত্রের ক্যান্সার এসব রোগের প্রকোপ তেমন ছিল না। তবে আধুনিক বসার পদ্ধতি বিশেষ করে উঁচু কমোডে, উঁচু হয়ে বসার পদ্ধতি স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করছে-এমনটাই বলা হয়েছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। গবেষণাটি প্রকাশ হয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ইসরায়েলি ম্যাগাজিন ‘জার্নাল অব মেডিকেল সায়েন্স’-এ। গবেষকরা বলছেন, অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা (হেমোরয়েডস, অন্ত্রের প্রদাহ, কোলন ক্যান্সার, পেলভিক ক্যান্সার, মলত্যাগে সমস্যা ইত্যাদি) শহরে বেশি প্রচলিত। গ্রামাঞ্চলে তেমনটা নয়। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য আধুনিক বসার পদ্ধতিকে বা উঁচু কমোডে বসার পদ্ধতিকে।  

আমেরিকান কলেজ অব গ্যাসট্রোএন্ট্রোলজির পরিসংখ্যান মতে, বয়স ৫০ হওয়ার আগে আমেরিকার অর্ধেক মানুষ হেমোরয়েডসে ভুগতে শুরু করেন। কারণ কমোডের ব্যবহার। ১৯ শতকে ইউরোপ-আমেরিকায় হাই কমোড নামে এক ধরনের স্যানিটেশন চালু করে কিছু ব্যবসায়ী। এতে হাজার বছর ধরে উবু হয়ে বসে মলত্যাগের পদ্ধতি বদলে ফেলতে শুরু করে মানুষ। আমাদের দেশে কমোড এলো ৮০ দশকে। এটা যেন জাতে ওঠার প্রতীক।

গ্যাসট্রোএন্টোলজির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বই ‘বোকাস গ্যাস্ট্রোএন্টোলজি’তে বলা হয়েছে, পেটের সঙ্গে দুই উরু মলত্যাগের সময় লেগে থাকবে। প্যানে বসলে মলদ্বার ও রেকটামের মাঝের অ্যাঙ্গেল থেকে ১২৬ ডিগ্রি। কমোডে বসলে এ দূরত্ব কমে দাঁড়ায় ১০০ ডিগ্রি। প্যানে বসলে টক্সিকসহ অন্যান্য বর্জ্য ঠিকমতো বের হয়, যা কমোডে যায় না। মলত্যাগে সঠিকভাবে বসার অভ্যাস অর্থাৎ প্যান ব্যবহার করতে হবে। ব্লাডার খালি করে দিতে উবু হয়ে বসা বেশ ভালো। বিশেষত নারীদের প্রস্রাব সঠিকভাবে নিঃসরণ হয় এভাবে বসলে। উঁচু কমোডে বসলে ব্লাডার পুরোপুরি খালি হয় না। প্রস্রাব থেকে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, যা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন সৃষ্টি করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর