মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

জাতিসংঘ পার্ক এখন নিঃসঙ্গ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

জাতিসংঘ পার্ক এখন নিঃসঙ্গ

অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে কমছে উন্মুক্ত স্থান। বহুতল অট্টালিকার দাপটে কমছে জায়গা। প্রতিনিয়তই হারিয়ে যাচ্ছে খোলা জায়গা, উন্মুক্ত মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র, পুকুর ও জলাশয়। ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের নান্দনিক অনুষঙ্গ সমূহ।        

উন্মুক্ত স্থানের এমন আকালের সময়েও চরম অবহেলা-অনাদর-অযতেœ পড়ে আছে চট্টগ্রামের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র জাতিসংঘ পার্কটি। বর্তমানে অনেকটা পরিত্যক্ত এবং জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। কোলাহলপূর্ণ জাতিসংঘ পার্ক এখন নিঃসঙ্গ পার্কে পরিণত হয়েছে। নগরের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় পার্কটির অবস্থান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এটি পরিচালনা করে আসছে। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকত।    

নগরবাসীর অভিযোগ, চট্টগ্রাম শহরে প্রতিনিয়তই বাড়ছে জনসংখ্যা। জনসংখ্যার তুলনায় বিনোদন কেন্দ্র অত্যন্ত অপ্রতুল। কোথাও নতুন করে কোনো উন্মুক্ত স্থান গড়ে উঠছে না। তবুও জাতিসংঘ পার্কটির মতো একটি ব্যস্ত বিনোদন কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। অথচ চসিক কেন্দ্রটি নিয়ে অতীতে একাধিকবার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি। কেবল জনগণের করের টাকার অপচয় হয়েছে। চসিক একটু আন্তরিক ও উদ্যোগী হলেই পার্কটিকে নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করা খুবই সম্ভব। এর মাধ্যমে ইট-পাথরের এই শহরের মানুষ অন্তত একটু মুক্ত বাতাস নেওয়ার সুযোগ পেত। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাসনাত নাবিলা বলেন, নগরে এমনিতেই মুক্তাঙ্গনে আকাল চলছে। এমন সময়ে জাতিসংঘ পার্কটি ‘মরুভূমিতে এক চিলতে ছায়া’র ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু এটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। যা দুঃখজনক। 

চসিকের পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ ওমর বলেন, পার্কটি নিয়ে চসিক নতুন করে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেনি। তবে গণপূর্ত বিভাগ বড় আকারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সংস্থাটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে পরে চসিকে হস্তান্তর করবে। তিনি বলেন, চসিক নগবাসীর বিনোদনের জন্য ২৯টি উন্মুক্ত স্থানে সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করবে। এসব উন্মুক্ত স্থানে নাগরিকরা মুক্ত বাতাসে সময় কাটাতে পারবে। 

চসিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে গণপূর্ত বিভাগ পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় এক একর জায়গায় পার্কটি গড়ে তোলা হয়। ২০০২ সালে এটি জাতিসংঘ পার্ক নামকরণ করা হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কের একাংশে দুটি সুইমিং পুল এবং একটি জিমনেসিয়াম নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ২০১৫ সালে এ কাজ শেষ হয়। কিন্তু পরবর্তীতে পরিচর্যার অভাবে এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে এটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। পার্কের ভিতরের বিভিন্ন অংশে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে মাটির স্তূপ। নেই সীমানা প্রাচীর।

সর্বশেষ খবর