মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে প্রাচীন উজিরদিঘি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

অস্তিত্ব সংকটে প্রাচীন উজিরদিঘি

কুমিল্লা নগরীর প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন উজিরদিঘি ভরাট চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। সার্কিট হাউস ও জেলা পুলিশ সুপারের বাসভবনের পাশে এটির অবস্থান। দিঘির পানি নিষ্কাশন দেখে এটি ভরাটের আলোচনা ওঠে। পানি নিষ্কাশনের পর মাটি ভরাট করে দিঘিতে কমিউনিটি সেন্টার, কফি হাউস ও মার্কেট স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সরেজমিন উজিরদিঘির পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, দিঘির পানি প্রায় শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। এর দক্ষিণ পাড়ে সেচের মেশিন বসানো রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই দিঘির পানি তারা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন। এটি ভরাট হয়ে গেলে বেকায়দায় পড়বেন তারা।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম থেকে ১০০ গজ পূর্ব দিকে উজিরদিঘি। এর পশ্চিম পাড়ে পুলিশ সুপারের বাসভবন, উত্তর পাড়ে কুমিল্লা সার্কিট হাউস, পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে বাসা-বাড়ি। ২০০ গজ পূর্বে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা ভূমি কার্যালয়, কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও রাজগঞ্জ বাজার। এই দিঘিতে মাছ চাষ হয়। সম্প্রতি নগরীর মোগলটুলীর বাসিন্দা ব্যবসায়ী এ কে এম মহসিন এই দিঘিটি ক্রয় করেন। এদিকে কুমিল্লার সন্তান কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর ফেসবুকে উজিরদিঘি ভরাটের তোড়জোড় নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি আলোচনায় আনেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুকুর ও দিঘি ভরাট করে কুমিল্লা নগরীর পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা বাড়ছে। আগুন নেভানোর কাজে পানির সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। অবিলম্বে দিঘি ভরাট বন্ধ করা প্রয়োজন। দিঘিটি ভরাট হলে রাজবাড়ী ও মনোহরপুরসহ আশপাশের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, কুমিল্লাকে বলা হয়-ব্যাংক ও ট্যাংকের (পুকুর) শহর। সেই পুকুর-দিঘির শহর আজ পুকুরশূন্য হতে চলেছে। নগরীতে কিছু পুকুর ভরাট হলেও, কখনো এই দিঘি ভরাট হয়নি। এখন উজিরদিঘি ভরাটেরও আয়োজন খুবই উদ্বেগজনক।

অভিযোগের বিষয়ে এ কে এম মহসিন বলেন, আমরা আইনের বাইরে নই। দিঘি ভরাট করা হচ্ছে না। পূর্ব পাড়ের ময়লা দিঘিতে প্রবেশ করছে। তেমন মাছ উৎপাদন হচ্ছে না। দিঘির পাড় বাঁধার জন্য পানি কমানো হচ্ছে। এ ছাড়া এখানে পানির ওপরে বিনোদনমূলক কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, আমরা পানি সেচের মেশিন বন্ধ করে দিয়েছি। দিঘির মালিককে নোটিস করেছি। পুকুর-দিঘি ভরাটেরও কোনো সুযোগ নেই। কুমিল্লা সিটি মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নগরীর ভিতরে দিঘি ভরাটের কোনো সুযোগ নেই। তারা দিঘির পানি কমানোর অনুমতি চান। পানি ময়লা হয়ে গেছে বলে জানান। তাই অনুমতি দিয়েছি।

সর্বশেষ খবর