মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

অলিগলিতে হকার্স মার্কেট

বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে যানজট লাগছে। রাজধানীর হকাররা পুলিশি নির্যাতন ও নির্বিচারে আটক বন্ধ এবং পুনর্বাসনের দাবিতে উত্তরা এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন। হকাররা তাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

অলিগলিতে হকার্স মার্কেট

মূল সড়ক ও ফুটপাথে বাধা পেয়ে হকাররা অলিগলিতে ঢুকে পড়েছে। রাজধানীর উত্তরা থেকে তোলা ছবি : বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীতে হকারদের স্থায়ীভাবে কোথাও বসে ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই। আজ এখানে তো কাল ওখানে। নিজস্ব কোনো ঠিকানা নেই। ভাসমান এই হকাররা মূল সড়কে বাধা পেয়ে এখন অলিগলিতে ঢুকে পড়েছেন। ফলে গলিতেও যানজটের বিস্তার ঘটছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে যানজট লাগছে। রাজধানীর হকাররা পুলিশি নির্যাতন ও নির্বিচারে আটক বন্ধ এবং পুনর্বাসনের দাবিতে উত্তরা এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন। হকাররা তাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। 

রাজধানীর উত্তরায় ফুটপাথে, মূল সড়কের পাশে কিংবা সড়কদ্বীপে ভ্যান লাগিয়ে ব্যবসা করেন ভ্রাম্যমাণ হকাররা। তবে কোনো কোনো এলাকায় সেই সুবিধা এখন আর নেই। সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হকারদের মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সড়কগুলো দখলমুক্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষ এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেও স্বল্প পুঁজির হকাররা পড়েছেন বিপাকে। তারা রাস্তা থেকে ভ্যান সরিয়ে এখন অলিগলিতে ঢুকে পড়েছেন। রাজধানীর উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরের কাপড় ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, ফুটপাথে হলেও আগে আমার একটা নির্দিষ্ট জায়গা ছিল যেখানে প্রতিদিন বসে কাপড় বিক্রি করতাম। অনেক বাঁধা কাস্টমার ছিল যারা সেখানে আমাকে পেতেন। এখন এমন অবস্থা হয়েছে, আজ এখানে তো কাল ওখানে বসি। কাস্টমার আমাদের খুঁজে পায় না। আমরাও কাস্টমারকে খুঁজে পাই না। এক গোলক ধাঁধার মধ্যে আছি।

উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরার প্রতিটি সেক্টরের ফুটপাথ, সড়কদ্বীপ থেকে হকার উচ্ছেদ করে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা নিয়মিত কোথায় বসবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। ফলে, সড়কে বাধা পেয়ে তারা অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট কোনো স্থানে বসার জায়গা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন হকাররা।

ফুটপাথের ব্যবসায়ী কাশেফ মাহমুদ বলেন, সরকার ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশে জায়গা দিয়েছে। অথচ আমাদের বসার কোনো জায়গা নেই। আমরা বৈধভাবে ব্যবসা করতে চাই। আমাদের জন্য স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ চাই। আমাদের মধ্য থেকেই এক সময় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা বেরিয়ে আসবে। এদিকে হকার নির্যাতন, নির্বিচারে আটক বন্ধ এবং পুনর্বাসনের দাবিতে রাজধানীর উত্তরায় বিক্ষোভ, সমাবেশ করেছেন হকাররা। সম্প্রতি উত্তরার আজমপুর রবীন্দ্র সরণি থেকে মিছিল নিয়ে তারা রাজলক্ষ্মী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন, উত্তরা হকার্স লীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার, ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক উজ্জ্বলসহ হকার নেতারা। বক্তারা বলেন, যখন-তখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে, হকাররা গরিব মানুষ। তারা সমিতি থেকে কিস্তিতে টাকা তুলে ফুটপাথে ব্যবসা করে সামান্য যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালান। অথচ বিনা কারণে হকারদের আটক করে মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হচ্ছে। তারা আরও বলেন, হকাররা এ এলাকার ভোটার। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, হকার্স লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এবং যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এ হকাররাই অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

হকার নেতাদের দাবি, তারা কোনো অন্যায়, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন। কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের উচ্ছেদ এবং জেল-জুলুম না করে পুনর্বাসন করা হোক। এ সময় ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসান বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে দুই দিনের মধ্যে আলোচনা করে হকার পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে হকাররা বিক্ষোভ তুলে নেন। তবে এই আশ্বাসের পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও হকারদের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর