মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের দৌরাত্ম্য

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে যেখানে-সেখানে রাখা এসব অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স সরিয়ে রোগীর যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করতে গলদঘর্ম অবস্থা হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসারদের

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের দৌরাত্ম্য

সরকারি হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের দৌরাত্ম্যে হয়রানি হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দাপটে অসহায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা ছবি -জয়ীতা রায়

টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে বুকে তীব্র ব্যথা নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এসেছিলেন এনায়েত হোসেন। হাসপাতালে ভর্তির পরদিন মারা যান তিনি। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হাসপাতালের বাইরে আসতেই তার ছেলেকে ঘিরে ধরেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। কিছুক্ষণ পর অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া না করে ফিরে আসেন তিনি।

সমস্যা জানতে চাইলে এনায়েত হোসেনের ছেলে শাহিনুর হোসেন বলেন, বাড়ি থেকে হাসপাতালে আসার সময় ৫ হাজার ৫০০ টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিয়েছিলাম। এখন মধুপুর যেতে ৮ হাজার টাকা চাইছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। দরকষাকষির সুযোগ নেই। একজন যে ভাড়া বলছে, অন্য কেউ আর তার কমে যাবে না। মানুষের অসহায় অবস্থা নিয়ে ফায়দা লুটছে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট।

শুধু এই হাসপাতাল নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালগুলোর সামনে চোখে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। হাসপাতালের সামনে হযবরল হয়ে দাঁড়িয়ে রোগী প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে তারা। হাসপাতালের গেটকে বাস টার্মিনাল বানিয়ে ফেলতে বেসরকারি এসব অ্যাম্বুলেন্সের জুড়ি মেলা কঠিন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে যেখানে-সেখানে রাখা এসব অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স সরিয়ে রোগীর যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করতে গলদঘর্ম অবস্থা হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসারদের। গতকাল সকাল ১০টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা অ্যাম্বুলেন্স। রোগী নেওয়ার আশায় ধরনা দিয়ে হাসপাতালে জটলা তৈরি করছে তারা। অ্যাম্বুলেন্সের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন সিএনজি কিংবা রিকশায় আসা রোগীরা। হাসপাতালের আনসার সদস্যরা বাশি ফুঁ দিয়ে লাঠি নিয়ে তাড়াচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরেই অন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স এসে সে জায়গায় দাঁড়াচ্ছে। হাসপাতালের গেটে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে চোখে পড়ে এ চিত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বরত আনসার সদস্য বলেন, হাসপাতালে জটলা পাকানো অ্যাম্বুলেন্স সরাতে আমাদের সারা দিন চলে যায়। বাশি ফুঁ দিতে দিতে গলা শুকিয়ে যায়। কিন্তু তারা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের কিছু বলারও উপায় নেই। হাসপাতালের গেটের সামনে দাঁড়াতে না দিলে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জোটবদ্ধ হয়ে আমাদের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় জড়ায়। বহুবার তাদের চাকা পাংচার করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। তাদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট থাকায় এ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান হয় না। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাসপাতালের গেটে অ্যাম্বুলেন্সের দৌরাত্ম্য আছে। এতে হাসপাতালে যেতে-আসতে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৫০টি অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন পড়ে। প্রতিদিন প্রায় ৩৫-৪০ জন রোগী মারা যান। তাদের লাশ বহন করতে ১৫-২০টি অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন পড়ে। হাসপাতালে নিয়মিত ২০০-২৫০ জন রোগী ভর্তি হন। এসব সংকটাপন্ন রোগীর অধিকাংশ অ্যাম্বুলেন্সে আসেন। তাই এই বিপুল পরিমাণ রোগীর যাতায়াতে হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্সের আনাগোনা বেশি থাকে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে এত রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। এখানে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের একটা বাজার আছে। তাদের সেবার পাশাপাশি দৌরাত্ম্যও আছে। তিনি আরও বলেন, এ জন্য আমরা ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স অ্যাপস’ নামে একটি সেবা চালু করছি। অ্যাপসের মাধ্যমে রোগীদের আমাদের হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স বুকিং দিতে হবে। এ পর্যন্ত ৭০-৮০টি অ্যাম্বুলেন্স নিবন্ধন করেছে। অ্যাম্বুলেন্স সমিতির নেতাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। অ্যাপসে নিবন্ধন করে তবেই এই হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে যেতে হবে চালকদের। অ্যাম্বুলেন্সের প্রবেশ এবং বের হওয়ার ব্যবস্থা তৈরি করতে কিছুটা সময় লাগছে। খুব দ্রুতই অ্যাপসটি চালু হলে এ সংকট নিরসন হবে বলে আমরা আশাবাদী।

সর্বশেষ খবর