মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

হোস্টেলের ছাত্রীরা কেমন আছে

ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ছাত্রী হোস্টেল। জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে টার্গেট করে মূলত এ ধরনের হোস্টেল করা হচ্ছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

হোস্টেলের ছাত্রীরা কেমন আছে

রাজধানীতে ছাত্রী হোস্টেলের নামে খুপরি কক্ষে একাধিক সিট ফেলে মেয়েদের রাখা হচ্ছে। নিম্নমানের খাবার, পানির সমস্যা, গাদাগাদি করে থাকাসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাদের -ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর ঝিগাতলায় অবস্থিত ড্রিমস স্কলারস হোস্টেলে ছাত্রী ভর্তি নেওয়ার সময় অফেরতযোগ্য এককালীন ৯ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি খাট, টেবিল, বিছানার চাদর দেওয়া হয়। যদিও হোস্টেল ছাড়ার সময় এগুলোর কোনোটাই নিতে পারেন না ছাত্রীরা। খাবারের মান খারাপ এবং হোস্টেলে কর্মরত দায়িত্বশীলদের নানারকম অশোভন আচরণে অতীষ্ঠ হয়ে ছাত্রীদের অনেকেই হোস্টেল ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এ সুযোগের অপেক্ষায় থাকে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ। কারণ, নতুন ছাত্রী এলেই অফেরতযোগ্য ৯ হাজার টাকা নেওয়ার সুযোগ পায় তারা। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং মৌসুমে ছাত্রীর অভাব হয় না। সিট খালি হতেই নতুন ছাত্রী চলে আসে। এভাবেই হোস্টেল ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের অর্থ পকেটে পুরছে প্রতিনিয়ত।

রাজধানীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ছাত্রী হোস্টেল। জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে টার্গেট করে মূলত এ ধরনের হোস্টেল করা হচ্ছে। উদ্যোক্তারা বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে প্রথমে এ কাজ শুরু করে। ফলে এর নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা থাকে। ছোট খুপরি কক্ষে একাধিক সিট ফেলে মেয়েদের রাখা হচ্ছে গণরুমে। বেশির ভাগ ঘরই স্যাঁতসেঁতে। সবচেয়ে বড় বিষয় এগুলো ছাত্রী হোস্টেল হিসেবে নাম দেওয়া হলেও এখানে থাকে অনেক কর্মজীবী নারী।

রাজধানীর ফার্মগেট, গ্রিনরোড, রাজাবাজার, মনিপুরী পাড়া, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, মিরপুর, মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় ভর্তি কোচিং, কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের লক্ষ্য করে গড়ে উঠেছে হোস্টেল। ছাত্রীদের জিম্মি করে চলছে জমজমাট ব্যবসা। বেসরকারি হোস্টেলের অনেক ছাত্রী জানায়, তারা কোনো বিষয়ে মুখ খুললে হোস্টেল মালিকরা স্থানীয় সন্ত্রাসী দিয়ে নানা হুমকি দেয়। তাই নীরবে তাদের সব অত্যাচার সহ্য করতে হয়। হোস্টেলে অবস্থানকারী ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওঠার সময় একবারে বেশি টাকা নেওয়া হয়, যাতে তারা থাকতে বাধ্য হয়। আবার বিভিন্ন নির্মাণাধীন বাড়িতে অসম্পূর্ণ অবস্থায় হোস্টেলের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এসব হোস্টেলের বেশির ভাগ সিঁড়িতে আলোর ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে নারীদের আবাসিক সংকট গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এই সংকট নিরসনে সরকারি হোস্টেলগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন হোস্টেলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এসবের বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে কোনোরকম নীতিমালা ছাড়াই।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে এসব হোস্টেল। এদের বেশির ভাগই তাদের প্রচারে চটকদার বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। খাবারের নিম্নমান, পানির সমস্যা, স্বল্প পরিসরে গাদাগাদি করে থাকাসহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় প্রতি মুহূর্তে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। বেশির ভাগ হোস্টেলেরই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুক। ফলে হোস্টেলে অবস্থানকারী মেয়েদের যৌন নিপীড়নের মতো ভয়াবহ ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। সম্মানহানির ভয়ে এসব বিষয়ে কেউই কথা বলতে চায় না। ফলে ঘটনাগুলো রয়ে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে, যে কারণে এসবের কোনো প্রতিকার কিংবা প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না।

পশ্চিম রাজাবাজারে ছয় তলা বাসায় রয়েছে আজিজা মহল ছাত্রীনিবাস। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং মৌসুমের ব্যবসা ধরতে ভাড়াটিয়া সরিয়ে বানানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ মেস। মেসের নিচতলায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট দুই রুমে আটটি বেড পাতা হয়েছে। রান্নাঘরেও বসানো হয়েছে ছোট্ট একটা চৌকি। এটাকে সিঙ্গেলরুম হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। রুমের ভিতরে এক হাত জায়গা পর্যন্ত ফাঁকা নেই।

এ হোস্টেলের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এক রুমে থাকতে হয় চারজনকে। কোনোরকমে চারটি চৌকি রাখা গেছে। বইপত্র রাখার জন্য কাঠের একটি টেবিল রাখার জায়গা নেই। তিন বেলা খাবারসহ একেকজনকে দিতে হয় ৫ হাজার ৫ শত টাকা। তার মানে, বাড়িওয়ালা একটি রুমের ভাড়া ও খাওয়া বাবদ পাচ্ছেন ২২ হাজার টাকা। মাসে এক দিনও যদি কেউ হোস্টেলে না খায়, তবু পুরো টাকাই দিতে হয়। ব্যালকনিতে হার্ডবোর্ড দিয়ে ছোট ছোট রুম বানিয়ে তা-ও ভাড়া দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর