মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ভাঙাগড়ার ইউটার্নে বেড়েছে দুর্ভোগ

সমন্বয়হীনতায় জনদুর্ভোগ এবং আর্থিক ক্ষতি দুটোই হয়েছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ভাঙাগড়ার ইউটার্নে বেড়েছে দুর্ভোগ

রাজধানীর উত্তরায় ইউটার্নের সুফল পাচ্ছিল এলাকাবাসী। কিন্তু বিআরটি প্রকল্পের কারণে সেই ইউটার্ন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিআরটির কাজ চলার মধ্যেই কেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইউটার্ন নির্মাণ করা হলো, যেটি ভাঙতে হচ্ছে। উদ্বোধন ও ভাঙার পরের দুই ছবি তুলেছেন রোহেত রাজীব

রাজধানীর যানজট নিরসনে তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত ১০টি ইউটার্ন নির্মাণ করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গত বছরের এপ্রিলে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল ইউটার্নগুলো। বছর না ঘুরতেই গত জানুয়ারিতে দুটি ইউটার্ন ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে অর্থ গচ্চার সঙ্গে বেড়েছে জনগণের ভোগান্তি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের পরিকল্পনা করেন মেয়র আনিসুল হক। তার মৃত্যুর পর মেয়র আতিকুল ইসলামের উদ্যোগে সম্পন্ন হয় প্রকল্প। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি ইউটার্ন বাদ পড়লে ইউটার্নের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০টিতে। প্রকল্পের আওতায় উত্তরা রাজলক্ষ্মীর সামনে, উত্তরা র‌্যাব-১ অফিস, ফ্লাইং ক্লাব কাওলা, বনানী ওভারপাস, বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি, মহাখালী আমতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড় এবং সাতরাস্তার বিজি প্রেস এলাকায় ইউটার্ন নির্মাণ করা হয়। এতে খরচ হয় ৩০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। গত বছরের ২ এপ্রিল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ইউটার্নগুলো। ইউটার্ন উন্মুক্ত করায় এই সড়কের উভয় দিকে ডানে মোড় নেওয়ার সব পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

উত্তরা এলাকায় যানজট নিরসনে ইউটার্ন বেশ কাজে লাগলেও বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি, তেজগাঁও এলাকায় যানজট বাড়ানোর কারণ হয়ে উঠছিল ইউটার্ন। রাস্তা তুলনামূলক সরু হওয়ায় ইউটার্নে গাড়ির জট তীব্র আকার ধারণ করছিল। এই রোডে আগে থেকেই চলমান ছিল বিআরটি প্রকল্পের কাজ। ইউটার্নের ভিতর দিয়ে প্রকল্পের কাজ যাওয়ায় গত জানুয়ারিতে ভেঙে ফেলা হয়েছে উত্তরা এলাকার দুটি ইউটার্ন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ওই জায়গা আগে থেকেই বিআরটি প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ছিল। ইউটার্ন প্রকল্পের আগে বিআরটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। তাহলে কেন একই জায়গায় ইউটার্ন প্রকল্প নিয়ে অর্থের গচ্চা দেওয়া হলো। সমন্বয়হীনতায় এই আর্থিক ক্ষতি এবং জনভোগান্তি বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিন উত্তরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উত্তরার রাজলক্ষ্মীর সামনে এবং উত্তরা র‌্যাব-১ কার্যালয়ের সামনে দুটি ইউটার্নের অস্তিত্বই নেই। ইউটার্নের জায়গায় বিভাজক বসানো হয়েছে। তিন মাস আগে ইউটার্ন দুটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিভাজক পার হয়ে ডানে ঘুরছে গাড়ি। যানজট নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জামিল হোসেন বলেন, আমি এ মাস থেকে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। মাস তিনেক আগেই এ ইউটার্ন ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে শুনেছি। গাড়ির ভীষণ চাপ থাকায় প্রায় যানজট তৈরি হয়। এ জন্য এখানে নিয়মিত আমরা দায়িত্ব পালন করি।

শুধু এই দুই ইউটার্ন নয় অন্য ইউটার্নগুলোও তেমন কাজে আসছে না। ইউটার্ন থাকা সত্ত্বেও মহাখালী থেকে গুলশান-১ গামী ডানের মোড় খুলে দেওয়া হয়েছে। বনানী চেয়ারম্যান বাড়িতেও একই পরিস্থিতি। গুলশান-২ গামী গাড়ি যাওয়ার জন্য ডানে মোড় খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে কাজে আসছে না ইউটার্ন। বরং কিছু এলাকায় যানজট বেড়েছে ইউটার্নের কারণে। তেজগাঁও এলাকায় যানজটের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউটার্ন। দূরদর্শিতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে এ প্রকল্প।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই মেগা সিটি ইউটার্ন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া পুরো অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত। এসব ইউটার্ন কাজ করে যেসব শহরে যানবাহন অল্প। রাজধানীতে এত যানবাহনের চাপ এই ইউটার্নের মাধ্যমে সমাধান করা কখনই সম্ভব নয়। এই প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়াই সঠিক হয়নি। তিনি আরও বলেন, এই জায়গায় আগে থেকেই আরেক প্রকল্পের কাজ চলছিল। তাই নতুন প্রকল্প নেওয়ার আগে বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের জানা উচিত ছিল। সমন্বয়হীনতায় জনদুর্ভোগ এবং আর্থিক ক্ষতি দুটোই হয়েছে।

সর্বশেষ খবর