মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

নাগরিক বিনোদনে গণপরিসর সংকট

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নাগরিক বিনোদনে গণপরিসর সংকট

ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে মানুষ ছুটে বেড়িয়েছেন নানা বিনোদন কেন্দ্রে। কিন্তু কোথাও নেই সুস্থ বিনোদনের স্থান। পার্কগুলোর অধিকাংশই অবরুদ্ধ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল। পান্থকুঞ্জ পার্ক বেষ্টনী দিয়ে আটকে রাখা। ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে নামফলকে লেখা পান্থকুঞ্জ পার্ক। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা কোনো পার্ক। কিছুদূর পর পর মাটির ঢিবি। একপাশ টিন দিয়ে ঘেরা, আরেক পাশ পুরো খোলা। জঙ্গলে পরিণত হয়েছে পুরো জায়গা। দীর্ঘদিন সংস্কারের জন্য বন্ধ হয়ে আছে এই পার্কটি। সংস্কারও শেষ হয় না, পার্কও চালু হয় না।

ঘনবসতির এই রাজধানীতে মানুষের বিনোদনের জায়গা একেবারেই নগণ্য। উৎসবে কিংবা অবসরে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার মতো জায়গা খুব কম। তাই ঈদের ছুটিতে দেখা যায় জাতীয় চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল, ধানমন্ডি লেকে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের ছুটিতে ঢাকা থাকে ফাঁকা। গ্রামে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ে ৫০ লাখের বেশি মানুষ। এরপরও ঈদের ছুটিতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের ঢল।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, উত্তর সিটিতে মাঠ ছয়টি এবং পার্ক ২১টি, শিশু পার্ক চারটি। এ ছাড়া ঈদগাহ মাঠ রয়েছে তিনটি। বেশ কয়েকটি মাঠ ও পার্কে চলছে উন্নয়নকাজ। এর মধ্যে আধুনিকায়ন শেষে খুলে দেওয়া হয়েছে ৫টি পার্ক ও একটি খেলার মাঠ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অন্য তিনটি মাঠ মগবাজারের মধুবাগ, রায়েরবাজার ও সলিমুল্লাহ রোডে অবস্থিত।

ঢাকা দক্ষিণের কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মাঠেই উন্নয়নকাজ চলছে। ডিএসসিসি থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ১০টি মাঠের মধ্যে ছয়টিতেই উন্নয়নকাজ চলছে। খুব দ্রুতই মাঠ ও পার্ক আধুনিকায়ন করে খুলে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। সিটি করপোরেশনের মাঠ বা পার্কে যেন কোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি না হয় সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাঠ তৈরির জন্য বিভিন্ন সংস্থার যেসব জমি আছে, সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর রমনা পার্ক, হাতিরঝিল ও ধানমন্ডি লেকে এবার ঈদের ছুটিতে হাজার হাজার মানুষ পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছিল। ঈদের পরদিন ধানমন্ডি লেকে গিয়ে দেখা যায়, লেকের পাড়ে তরুণ-তরুণীরা যেমন বসে ছিলেন, তেমনি পরিবার নিয়েও অনেকে এসেছেন। চুড়ি, মালা, খেলনা, ওয়াটার রাইড, ফাস্ট ফুডের দোকান, ঝালমুড়ির দোকানসহ নানা আয়োজনে মেলায় রূপ নিয়েছে লেকের পাড়।

হাতিরঝিলে দেখা যায়, ঝিলের দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুলসহ বাহারি ফুলে ফুটে আছে। বিকাল হতেই বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর ভিড়। নাগরিক জীবনের এক চিলতে অবসর কাটাতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনেকেই এসেছিলেন হাতিরঝিলে। কেউ পাড়ে বসে গল্প করছেন। অনেকে নৌকায় করে ঘুরছেন। গিটার বাজিয়ে গানের আসর জমিয়েছে একদল তরুণ। পাড়ে থাকা খাবারের দোকানগুলোতে ছিল বেশ ভিড়। খেতে খেতে গল্প করছেন তারা। বাচ্চারাও ছুটছে ইচ্ছেমতো।

এবার ঈদের ছুটিতে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায়। ঈদের কয়েকদিন বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চিড়িয়াখানায় ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। ঈদের ছুটিতে প্রায় ৩ লাখ মানুষ চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছেন। চিড়িয়াখানার তথ্য কর্মকর্তা জানান, অন্য সাধারণ সময়ে সরকারি ছুটির দিন চিড়িয়াখানায় প্রায় ২০ হাজার দর্শনার্থী আসে। তবে ঈদের দিন এ সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর পরের দুই দিনও লাখ ছাড়িয়ে যায়।

নগর বিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে এখন যত লোক বাস করে, তাদের জন্য যে সংখ্যক খেলার মাঠ বা পার্ক দরকার, এখন তা ৯০ ভাগের ১ ভাগ রয়েছে। শুধু শিশুদের জন্য নয়, সব বয়সী মানুষের জন্য পার্ক, মাঠ, উন্মুক্ত স্থান দরকার। খাসজমি চিহ্নিত করে এবং খাল ও নদীর পারের জায়গাগুলোকে পাবলিক স্পেস বা গণপরিসর হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এখানে খেলার মাঠও বানানো যায়। ভালো শহর বানাতে হলে অবশ্যই গণপরিসর বাড়াতে হবে। শারীরিক-মানসিক বিকাশে শিশুদের জন্য বাড়াতে হবে খেলার মাঠ, পার্ক।

সর্বশেষ খবর