মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

অরক্ষিত নালা অরক্ষিতই থাকল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অরক্ষিত নালা অরক্ষিতই থাকল

চট্টগ্রাম নগরের অরক্ষিত উন্মুক্ত নালা-নর্দমাগুলো অরক্ষিতই থেকে গেল। গত এক বছরে উন্মুক্ত খাল ও নালা-ড্রেনে পড়ে অকালে ঝরে গেল পাঁচটি প্রাণ। এই পাঁচটি প্রাণের বিনিময়েও টনক নড়েনি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার। ফলে ঝুুঁকিপূর্ণ নালা-নর্দমা ও খালের পাড় দিয়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই চলাফেরা করতে হয় পথচারীদের। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরের খাল, নালা-নর্দমা ও ড্রেনগুলো সংস্কার করে থাকে।    

অভিযোগ আছে, নগরের বিভিন্ন সড়কের পাশে উন্মুক্ত অবস্থায় থাকা বড় নালা-নর্দমা সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। সড়কের কোনো চিহ্নই থাকে না। এ সময় পথচারী ও যানবাহন চলাচল করে চরম ঝুুঁকি নিয়েই। কিন্তু এ নিয়ে সেবা সংস্থাগুলোর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। দুর্ঘটনা ঘটলে সামান্য তোড়জোড় শুরু হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ থাকে না।  

জানা যায়, গত বছরের ৩০ জুন নগরের ষোলশহর চশমা হিল এলাকায় অটোরিকশা উন্মুক্ত খালে পড়ে নিখোঁজ হন তিনজন। পরে চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগমের (৬৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ২৫ আগস্ট সালেহ আহমদ (৫০) নামের এক সবজি ব্যবসায়ী মুরাদপুরে জলাবদ্ধতায় নালার পানির তীব্র স্রোতে পা পিছলে তলিয়ে যান। খোঁজ মেলেনি তার। গত ২৮ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদ মোড়ে নালায় পড়ে মারা যান আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া (১৯)। গত ৭ ডিসেম্বর পাঁচলাইশ থানার দুই নম্বর গেট এলাকার নালায় পড়ে মো. কামাল উদ্দিন (১০) নামের এক শিশু নিখোঁজের তিন দিন পর লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ১৫ এপ্রিল নগরের কালুরঘাট এলাকার ওসমানিয়া খাল থেকে এক নারীকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। ২০১৮ সালের ৯ জুন নগরীর আমিন জুট মিল এলাকায় নালায় পড়ে মারা যায় আল আমীন নামের এক শিশু। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই হাটহাজারীর বাড়ি থেকে নগরের বাকলিয়ায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে পা পিছলে নালায় পড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন শীলব্রত বড়ুয়া নামের সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, নালা নর্দমায় স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ২৫ হাজার বর্গফুট ছোট নালা ড্রেনে স্ল্যাব বসানো হয়েছে এবং ১৫ হাজার বর্গফুট ঝুঁকিপূর্ণ খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। তবুও অনেক এলাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে হবে। পর্যায়ক্রমে এসব কাজ সম্পন্ন করা হবে। তাছাড়া মেগা প্রকল্পের আওতায় থাকা নালা-খালগুলো প্রকল্পের অধীনে থাকবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের চাক্তাই খালের বিভিন্ন পয়েন্টে এখনো খোলা। বৃষ্টি হলেই খাল ও পাড় একাকার হয়ে যায়। বৃষ্টি হলে চশমা খালের পাড়েও চলতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। নগরের ষোলশহর রেল স্টেশনের সামনে থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের উত্তর পাশের খালের বিভিন্ন পয়েন্টে সংস্কার কাজ চলছে। সড়কের পাশে রিটার্নিং ওয়াল কোথাও নির্মিত হয়েছে, কোথাও কাজ চলছে। বহদ্দারহাট থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের পাশে, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেটসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কের পাশে নিরাপত্তা দেয়াল ছাড়া নালা নর্দমা আছে। ফলে নগরের নালা-নর্দমা এবং সড়কের পাশে থাকা খালগুলো এখন মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে। বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় নগর। পানিতে একাকার হয়ে যায় সড়ক-নালা-নর্দমা ও ছোট ছোট খাল। এসব খাল-নালায় রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান উল্টে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। পথচারী ও যানবাহন পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।

সর্বশেষ খবর