মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

টয়লেটের পাশে খাবার হোটেল!

টয়লেটের পাশে, খোলা ড্রেনের পাশে, হাসপাতালের পাশে আবর্জনার স্তূপ তার সামনে খাবারের হোটেল, জুসের দোকান, চায়ের দোকান রয়েছে অসংখ্য জায়গায়

জয়শ্রী ভাদুড়ী

টয়লেটের পাশে খাবার হোটেল!

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত পাবলিক টয়লেটের পাশে খাবার হোটেল বসিয়ে অবাধে ব্যবসা চলছে। হোটেলে ব্যবহার করা হচ্ছে টয়লেটের পানি। উত্তরা আজমপুর বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে তোলা ছবি : রোহেত রাজীব

রাজধানীর উত্তরা আজমপুর এখন কোলাহলমুখর ব্যস্ত এলাকা। এখানকার বিডিআর বাজারে প্রতিদিন চলে জমজমাট বেচাকেনা। মানুষের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেনাকাটা, আড্ডা চলে মানুষের। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকেই খাবার জন্য যান বাজারসংলগ্ন রুচি হোটেলে। কিন্তু হোটেলে খেতে গিয়ে রুচির বদলে অরুচিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

হোটেলের সঙ্গেই লাগানো টয়লেট। মাঝে মাঝেই বাতাসে আসছে দুর্গন্ধ। পাশে গামলায় রাখা খাবার। খাবারের পাত্রে ভনভন করছে মাছি। খোলা ফেলে রাখা হয়েছে। যানবাহনের ধুলা উড়ে আসছে বাতাসে। এ পরিস্থিতির মধ্যে খাওয়া-দাওয়া করছেন অনেক নিম্নবিত্ত মানুষ। এ রকম নোংরা পরিবেশে খাবার খাওয়ার কারণে বাড়ছে নানারকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। রাজধানীতে এ রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার হোটেল চালানোর চিত্র হরহামেশায় চোখে পড়ে। টয়লেটের পাশে, খোলা ড্রেনের পাশে, হাসপাতালের পাশে আবর্জনার স্তূপ তার সামনে খাবারের হোটেল, জুসের দোকান, চায়ের দোকান রয়েছে অসংখ্য জায়গায়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (খাদ্যভোগ ও ভোক্তা অধিকার) মো. রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমরা অভিযানে গেলে তাড়াতাড়ি খাবার ঢেকে ফেলে, সরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আবার খুলে রেখে বিক্রি শুরু করে। জীবাণুমুক্ত খাবার পরিবেশনের জন্য খাবারের দোকানের কর্মীদের হাতের গ্লাভস, মাথার ক্যাপ দিয়েছি আমরা। কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করেন না তারা। অনেকে বলে গরম লাগে, কেউ বলে খারাপ লাগে। ভোক্তাদেরও ব্যবসায়ীদের বলতে হবে খাবার ঢেকে রাখার কথা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিক্রি হওয়া খাবার কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। সবাই সচেতন না হলে শুধু কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা দুরূহ।’     

এসব দোকানে রান্নার পরিবেশ থেকে পরিবেশন সবকিছুতেই অস্বাস্থ্যকর ছোঁয়া। কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের অবিক্রীত অর্ধপচা সবজি কম দামে কেনেন এসব হোটেলের মালিকরা। সেখান থেকে কোনোরকম কাটছাঁট করে চলে রান্না। এরপর রাস্তার কাছে নোংরা পরিবেশে খাওয়ার ব্যবস্থা।

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম জায়গা বিমানবন্দর রেলস্টেশন। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া-আসা করে মানুষ। বিমানবন্দর রেলস্টেশনের পাশে শাহী খাবার হোটেল। ক্ষুধার্ত মানুষ ট্রেন থেকে নেমে কিংবা কোথাও রওনা হওয়ার আগে খাবার খেতে আসছেন এখানে। হোটেলের বাম পাশেই পাবলিক টয়লেট। টয়লেট থেকে আসা দুর্গন্ধ ভাসছে বাতাসে, মেঝে দিয়ে গড়িয়ে আসা পানিতে কাদাকাদা পুরো এলাকা। নামে শাহী হোটেল হলেও খাবারের গুণ, মান এবং পরিবেশন খুবই অস্বাস্থ্যকর। গ্রাহকের খাওয়া শেষে প্লেট নিয়ে যাচ্ছে হোটেলের কর্মী। বাসনের ভাত, তরকারি ফেলে দিয়ে প্রথমে ডুবানো হচ্ছে ডিটারজেন্ট পাউডার গুলিয়ে রাখা পানি ভর্তি বালতিতে। সেখান থেকে তুলে আরেক বালতিতে রাখা পানিতে চুবিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে একের পর এক প্লেট একই পানিতে ধোয়া হচ্ছে। পানির রং লাল-হলুদ হলেও বদলানোর নাম নেই। এভাবে প্লেট ধুয়ে খেতে দেওয়া হচ্ছে সবাইকে।  

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সারি সারি খাবারের দোকান। ফুটপাথের ওপরে টেবিল, বেঞ্চ পেতে চলছে বেচাকেনা। পাশে মানুষের প্রস্রাবের দুর্গন্ধ আসছে। নাক চেপে রাস্তা পার হতে হয় মানুষকে। এর মধ্যে দিব্যি চলছে কেনাবেচা। এসব হোটেলের বেশির ভাগ ক্রেতা রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে আসা স্বজন এবং রিকশা, ভ্যান, সিএনজিচালকরা।

মেহেরপুর থেকে আসা এক রোগীর স্বজন সোহেল রানা বলেন, ‘আমার চাচা ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। অপারেশনের জন্য কয়েকদিন থাকতে হচ্ছে হাসপাতালে। আমরা চাচা-ভাতিজা মিলে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। দিনমজুরের এই আয়ে চিকিৎসা খরচ মিটিয়ে বেশি খরচ করে খাওয়া সম্ভব নয়। এখানে অল্প দামে খাবার পাওয়ায় কষ্ট হলেও খাচ্ছি। কী করব ক্ষুধার জ্বালা তো সহ্য করা যায় না।’ 

এ ব্যাপারে ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গরম বাড়ায় পিপাসায় মানুষ বাইরের বিভিন্ন দোকান থেকে শরবত, আখের রস কিনে খাচ্ছে। স্কুল গেটের বাইরে শিশুরা বিভিন্ন খাবার কিনে খাচ্ছে। ফুটপাথে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাত ধুয়ে খাবার খেতে হবে। পানি অবশ্যই ফুটিয়ে পান করতে হবে। এসব কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত বাড়ছে। বমি বমি ভাব, গলা শুকিয়ে যাওয়া, বারবার পাতলা পায়খানা, খিঁচুনি হলে দ্রুত হাসপাতালে আসতে হবে। পর্যাপ্ত স্যালাইন খেতে হবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যাবে না।

সর্বশেষ খবর