মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মানুষের হাটে ভিড় বাড়ছে

দামদর ঠিক হয়ে গেলে শ্রমজীবী মানুষগুলো রওনা হন মালিকের গন্তব্যে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়ে কাজ করেন কঠোর পরিশ্রমী মানুষগুলো।

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মানুষের হাটে ভিড় বাড়ছে

বাড়তি রোজগারের আশায় অনেকেই কাজের সন্ধানে হাটে অপেক্ষা করছেন। রাজধানীর আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে মানুষের হাট থেকে তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীতে মানুষের হাটে শ্রমজীবীদের ভিড় বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ভোরে শ্রমজীবী মানুষের হাট বসে। গত কয়েক মাস ধরে এসব শ্রম বিক্রির হাটে কর্মপ্রার্থী মানুষের কাফেলা বড় হচ্ছে। কারণ, নিম্নআয়ের মানুষের উপার্জনের তুলনায় ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের মানুষ দিশাহারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম হু হু করে বাড়ছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, পিঁয়াজসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। একের পর এক পণ্যমূল্য বাড়লেও তাদের আয় কিন্তু বাড়েনি। কম দামে পণ্য পেতে টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের দীর্ঘ সারি ছিল। বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলাও হচ্ছিল। সেই টিসিবির ট্রাকসেল এখন বন্ধ। কোটি মানুষকে কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য দেওয়ার উদ্যোগ আছে সরকারের। কিন্তু বাজারে নিত্যপণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্নবিত্তের সারির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মধ্যবিত্তের সারিও লম্বা হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষ খাবারের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। খাবারে মাছ, মাংস কমিয়ে টাকা সাশ্রয়ের চেষ্টা তাদের। বাড়তি রোজগারের আশায় তাদের অনেকেই দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজের সন্ধানে হাটে অপেক্ষা করছেন।

বাঁশের টুকরি আর কোদাল হাতে মানুষগুলো ভিড় জমাচ্ছে ‘মানুষের হাটে’। প্রাচীনকালে ও মধ্যযুগে সমাজে মানুষ কেনাবেচার হাট বসত। সেই আদিকালের দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে কবেই। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের নির্মম আঘাতে নিম্নআয়ের মানুষগুলো দুই বেলা খাবারের জন্য আজও নিজেকে বেচে দেন মানুষের হাটে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন সকালে বসে মানুষ ক্রয়-বিক্রয়ের হাট। রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, স্যানিটারি মিস্ত্রি, দিনমজুরসহ নানা পেশার শ্রমজীবী মানুষে সরগরম হয়ে ওঠে এ বাজার।

শ্রমের এই বাজারে শ্রমিক কিনতে আসেন অনেকে। অনেক শ্রমজীবী বিক্রি হলেও অনেকে থেকে যান অবিক্রীত। কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ভেঙে যাওয়া ঘর, রায়েরবাজার বেড়িবাঁধের পেট্রোল পাম্পের পাশে ভাড়া বাড়িতে এসে আবাস গড়েছেন এনামুল হক। সংসার চালানোর জন্য নিজেকে প্রতিদিন বিক্রি করতে আসেন মানুষের হাটে, কোনো কোনো দিন কাজ পেয়ে যান। আবার কোনো দিন থেকে যান অবিক্রীত। দিনমজুর এনামুল হক বলেন, ‘আট বছর আগে ব্রহ্মপুত্র নদে বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় ঢাকায় চলে আসি। যখন যে কাজ পাই সেই কাজ করি। প্রতিদিন কামলা দিতে হয়। কামলার হাটে দাম একটু বেশি পাই। কেউ কিনলে, কোনো দিন ৫০০ আবার কোনো দিন ৬০০ টাকা থাকে। বেচা না হলে সেদিন রিকশা চালাই।’ এখন জিনিসপত্রের দাম এত বেড়ে গেছে যে, কিছু একটা কাজ করেই বাঁচতে হবে।

উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ভবন মালিক আবদুল হামিদ আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে মানুষের হাটে এসেছেন রংমিস্ত্রি কিনতে। তিনি বলেন, বাড়ির সামনের দেয়ালে রং করতে হবে, তাই এই বাজার থেকে রংমিস্ত্রি নিতে এসেছি। অল্প সময়ের কাজ। আলোচনা করে নিজের পছন্দমতো নিতে পারব বলে এখানে এসেছি। তিনি বলেন, শ্রমিকের দাম একটু বেশি হলেও এখানে সহজে কাজের লোক পাওয়া যায়। একজন রংমিস্ত্রি নিয়েছি ৮০০ টাকায় আর দুজন সহকারী মিস্ত্রি নিয়েছি ১২০০ টাকায়।

রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে বাজারের পাশে, ব্যস্ত এলাকায় মানুষের এই হাটে বেচাকেনা চলে ভোর থেকে সকাল ৮টা, ৯টা পর্যন্ত। দামদর ঠিক হয়ে গেলে শ্রমজীবী মানুষগুলো রওনা হন মালিকের গন্তব্যে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়ে কাজ করেন কঠোর পরিশ্রমী মানুষগুলো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর