মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মানবিক সেবায় নার্স-চিকিৎসক

চিকিৎসকদের অনেকেরই দায়িত্ব ছিল না। তবুও মানবিকতার টানে একটানা ১২ ঘণ্টা ছিলেন চিকিৎসায়

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

মানবিক সেবায় নার্স-চিকিৎসক

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স ও চক্ষু বিভাগে রাতের শিফটে সাধারণত ১৫-২০ জন নার্স কাজ করেন। কিন্তু সীতাকুন্ড ট্র্যাজেডি থেকে রোগী আসার পর এক ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতালে চলে আসেন অন্তত ২০০ নার্স। যে যেখানে ছিলেন ছুটে এসেছেন। চিকিৎসকদের অনেকেরই দায়িত্ব ছিল না। তবুও মানবিকতার টানে একটানা ১২ ঘণ্টা ছিলেন চিকিৎসায়।   

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে গত ৪ জুন বিএম কনটেইনার বিস্ফোরণের ঘটনায় ৪৮ জন দগ্ধ হয়ে মারা যান, আহত হন তিন শতাধিক। ঘটনার পরপরই আহত-দগ্ধ রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসে চমেক হাসপাতালে। ওয়ার্ডে আসতে থাকে ক্ষতবিক্ষত শরীর, নাড়িভুঁড়ি বের হওয়া, পেটে-পিঠে লোহার রড ঢুকানো, ঝলসে যাওয়া ক্ষতবিক্ষত রোগী। প্রত্যেক রোগীকে পরম যত্ন, মমতায় সেবা দিয়েছেন নার্স-চিকিৎসকরা। তাদের মানবিক তাড়নায় এক রাতেই এত অপারেশন এবং এত রোগী আর দেখেনি চমেক হাসপাতাল। ওইদিন কখন রাত শেষ হয়ে সকাল-বিকাল-দুপুর হয়ে গেল তা অনেকে বুঝতেই পারেননি। প্রায় সব চিকিৎসক-নার্সই ওই দিন ছুটে আসেন হাসপাতালে। সবার অক্লান্ত পরিশ্রম, সেবায় ক্রমে ভালো হওয়ার পথে আহতরা।   

চমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোস্তাফা আরাফাত ইসলাম বলেন, আমার ডিউটি ছিল মেডিসিন বিভাগে। ওই দিনের দায়িত্বও শেষ। এমন সময় বিস্ফোরণের খবরটা পেলাম। প্রথমেই যাই সার্জারিতে। সেখানে সব প্রস্তুত। এরপর যাই বার্ন ইউনিটে। কিন্তু সেখানকার অবস্থা ভয়াবহ। কারও নাড়িভুঁড়ি বের হওয়া, কারও শরীর ঝলসে গেছে- এমন রোগী অসংখ্য আসছে। একটার পর একটা রোগী আসতেছে- হাতে ক্যানোলা করে ফ্লুইড রানিং দিয়ে, ক্যাথেটার, থ্রি লেয়ার ড্রেসিং, সবকিছুই হচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়, ভলান্টিয়ার সবাই কাজ করছেন মেশিনের মতো। ওই রাতে আর বাসায় যাইনি। চমেক হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক মোছা. ইনসাফি হান্না বলেন, তখন রাত ১০টা। ঢাকার সঙ্গে একটা অনলাইন মিটিং শেষ করছিলাম। এরপরই হাসপাতাল থেকে ফোন। তখনই চলে আসলাম। সব নার্সকে ফোন করে বলে দিলাম ‘যে যেখানে আছেন দ্রুত হাসপাতালে আসেন।’ এক ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ২০০ নার্স হাসপাতালে হাজির। আমাদের নার্সদের ভূমিকায় ঊর্ধ্বতন স্যাররাও সন্তুষ্ট।

সর্বশেষ খবর