মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পাহাড় ধসে মৃত্যু দিয়ে বর্ষা শুরু

১৫ বছরে ৩৫৪ জন নিহত

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

পাহাড় ধসে মৃত্যু দিয়ে বর্ষা শুরু

এবার বর্ষা শুরু হয় গত ১৫ জুন। কিন্তু মাত্র তিন দিন পর ১৭ জুন রাতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে দুই বোনসহ চারজনের মৃত্যু হয়। নগরের আকবর শাহ থানাধীন বরিশাল ঘোনা এবং ফয়’স লেক এলাকার বিজয়নগর এলাকায় পাহাড় ধসে আহত হন আরও ১১ জন। ফলে এবার বর্ষা মৌসুমই শুরু হয়েছে পাহাড় ধসের ঘটনায় চারজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। গত ১৫ বছরে পাহাড় ধসে অন্তত ৩৫৪ জন মারা গেছেন। গত শনিবার রাতে পাহাড় ধসের ঘটনায় চারজনের মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী ১৮০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে। গত রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত পূর্ব ফিরোজশাহ ১ নম্বর ঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। তাছাড়া এসব স্থানে মাইকিং করা হয়। কিন্তু অভিযানের পর তারা আবারও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস শুরু করে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কাঁটাতার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ এবং বৃক্ষরোপণ করা হবে। কেউ সীমানা ভেঙে বসতি গড়লে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বলেন, পাহাড় প্রাকৃতিক সম্পদ। এটিকে কোনোভাবেই বিরক্ত করা যাবে না। বিরক্ত করলেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। বর্তমানে পাহাড়কে বিরক্ত করার কারণেই ধসের ঘটনা ঘটছে।

চট্টগ্রামে ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসে বিপর্যয়ের একটি সকাল কেড়ে নিয়েছিল ১২৭টি প্রাণ। এরপর গঠিত হয় ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’। এ কমিটি গত ১৫ বছরে ২৩টি সভা করেছে। কমিটির বৈঠক হয়, সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পাহাড়গুলোর কান্না থামে না। প্রতিবছর রুটিন করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু তারা আবারও ফিরে আসে। ২০০৭ সালে এক দিনে ১২৭ জনের মৃত্যুর পর ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখানবাজার মতিঝরনা এলাকায় পাহাড় ধসে চার পরিবারের ১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ১ জুলাই টাইগার পাসে বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও দেয়াল ধসে মারা যান ১৭ জন। ২০১২ সালের ২৬-২৭ জুন মারা যান ২৪ জন। ২০১৩ সালে মতিঝরনায় দেয়াল ধসে মারা যান দুজন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে মারা যান তিনজন, একই বছর ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় মা-মেয়ের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ১২ ও ১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণ হারান ১৫৮ জন। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর নগরীর আকবর শাহ থানাধীন ফিরোজশাহ কলোনিতে মারা যান চারজন। ২০১৯ সালে কুসুমবাগ এলাকায় মৃত্যু হয় এক শিশুর।

সর্বশেষ খবর