মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

দৃশ্য দূষণে বিপন্ন চোখ

রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ হিসেবে চিহ্নিতরাও জাতীয় নেতা, মহানগরের শীর্ষ নেতা, মেয়রদের ছবি দিয়ে বিশাল বিশাল পোস্টার, প্যানাফ্লাক্স টানিয়ে রাখছে

রফিকুল ইসলাম রনি

দৃশ্য দূষণে বিপন্ন চোখ

রাজনৈতিক দলের সম্মেলনকে সামনে রেখে ঢাকাজুড়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। বাদ যাচ্ছে না ফুটওভার ব্রিজ, ট্রাফিক পুলিশ বক্স, যাত্রী ছাউনি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছপালা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন। অলি-গলি, রাস্তা, ফুটপাত থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, ফুটওভার ব্রিজ, নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের পিলারও রক্ষা পায়নি এসব  থেকে। রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে স্কুল কমিটির নির্বাচন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি থেকে শুরু করে ধর্মীয় উৎসব ঘিরে শুভেচ্ছা সংবলিত লেখা রয়েছে এসব পোস্টারে। সেতু নির্মাণের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে লাগানো পোস্টারও চোখে পড়ে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, ইউনিট সম্মেলনকে সামনে রেখে ঢাকাজুড়ে এসব পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন থেকে বাদ যাচ্ছে না ফুটওভার ব্রিজ, ট্রাফিক পুলিশের বক্স, যাত্রী ছাউনি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছপালা। বিপজ্জনকভাবে বৈদ্যুতিক তারেও ঝোলানো হচ্ছে পোস্টার ও ব্যানার। অনেক জায়গায় বিলবোর্ড, সরকারি নোটিস বোর্ডও ঢাকা পড়ে গেছে। রাস্তার দুই পাশের ডিভাইডারেও লাগানো হয়েছে বিলবোর্ড। এসব বিলবোর্ড অতি বিপজ্জনক। যে কোনো সময় পথচারীর মাথায় পড়তে পারে। এভাবে পোস্টারে নগর ছেয়ে ফেলাকে ‘দৃশ্য দূষণ’ বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং আশপাশের এলাকায় চোখ ধাঁধানো পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন চোখে পড়ে। এখানে সব পোস্টার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মৎস্যজীবী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ নেতা-কর্মীদের। কেউ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা, কেউ পদ্মা সেতু নির্মাণের শুভেচ্ছা, কেউ সাঁটিয়েছেন অমুক ভাইকে নেতা হিসেবে চাই-স্লোগান সংবলিত ফেস্টুন, ব্যানার ও পোস্টার। একই চিত্র আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়েও। কার্যালয়ের সামনে বিদ্যুতের তারে, দেয়ালে, গাছের ডালে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। আবার নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়েও হরেকরকমের পোস্টার দেখা যায়।

রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ হিসেবে চিহ্নিতরাও জাতীয় নেতা, মহানগরের শীর্ষ নেতা, মেয়রদের ছবি দিয়ে বিশাল বিশাল পোস্টার, প্যানাফ্লাক্স টানিয়ে রাখছে। এসব পোস্টার দেখে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি পীড়াদায়ক হয়ে উঠছে। রাজধানীর ফার্মগেট, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ডেমরা, সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট, আজিমপুর, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, গাবতলি, মিরপুর, মহাখালী, কুড়িল বিশ্বরোড, নতুনবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, নয়াপল্টন, কমলাপুর, খিলগাঁও, সদরঘাট, উত্তরা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, বিমানবন্দর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় উঠতি নেতা, পাতি নেতা, হবু নেতা, মহানগর-থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট নেতাদের পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুন চোখে পড়ে।

এ ছাড়াও উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে মিরপুর-১২ নম্বর, ফার্মগেট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের যতগুলো পিলার আছে সবকটিতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পোস্টার লাগিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। সৌন্দর্য হারাচ্ছে মেট্রোরেল ও রাজধানীর বিভিন্ন ওভারব্রিজ। রাজধানীতে লাগানো পোস্টার ও ব্যানারের বক্তব্য ও ছবিতে দেখা যায়, অধিকাংশ পোস্টার ও ব্যানার রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের। কার্যকর তদারকি না থাকায় রাজধানীতে মেট্রোরেল চালুর আগেই পিলার দখল করে নিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

মালিবাগ আবুল হোটেল থেকে কুড়িল বিশ্বরোর্ড পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে এবং ডিভাইডারের মধ্যেও বড় বড় বিলবোর্ড চোখে পড়ে। রাস্তার মাঝের বিলবোর্ডগুলোকে বিপজ্জনক বলছেন পথচারীরা। রামপুরা বাজারে কথা হয় সালেহ উদ্দিন সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তার ডিভাইডারের মধ্যে রাজনৈতিক দলের বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড, ইউনিট সম্মেলনকে সামনে রেখে বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। সম্মেলন হলেও বিলবোর্ডগুলো সরানো হয়নি। যে কোনো সময় একটু জোরে বাতাস বইলেই বিলবোর্ডগুলো পথচারী কিংবা গাড়ির ওপর পড়বে। এসব বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন না সরানোর জন্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনও দায়ী। শুধু রাজনৈতিক প্রচারণাই নয়, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক পোস্টার লাগেনি এমন দেয়াল, রাস্তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কোচিং সেন্টার, চাকরির বিজ্ঞাপন-কতকিছুর পোস্টার পড়ে দেয়ালে দেয়ালে। আগস্ট মাসে শোকবার্তার ব্যানার-পোস্টারেও ভরে যাবে। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এসবের একটা মাত্রা থাকা দরকার। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া উচিত। বিজ্ঞাপন প্রচারের একটা আইন থাকা উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর