মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

মহাখালীতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্য সিটি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মহাখালীতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্য সিটি

চিকিৎসা, উচ্চশিক্ষা গবেষণাসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে আনার পরিকল্পনা চলছে। রাজধানীর মহাখালীতে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্য সিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার। স্বাস্থ্য খাতের ১০০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে মহাখালীতে ১৫৩ একর জায়গায় এ স্বাস্থ্য নগরীর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অধীনস্থ সব সংস্থাকে এক আঙিনায় আনা হবে। চিকিৎসা, উচ্চশিক্ষা, গবেষণাসহ মোট ছয়টি জোনে ভাগ করে নির্মাণ করা হবে নতুন অবকাঠামো। তবে কবে নির্মাণকাজ শুরু হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। বিশাল ব্যয়ের এই প্রকল্প বিভিন্ন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। একটি আধুনিক স্বাস্থ্য নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুরনো ও ভগ্নদশা ভবনগুলো ভেঙে তৈরি করা হবে আধুনিক সুউচ্চ ভবন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, বঙ্গবন্ধু হেলথ সিটি বাস্তবায়ন করা গেলে হেলথ সেক্টর আরও গোছানো হবে। রেগুলেটরি ও মনিটরিং সব প্রতিষ্ঠান এক জায়গায় থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করতে এখন অনেক সময় নষ্ট হয়। হেলথ সিটি হলে একই আঙিনায় সব প্রতিষ্ঠান থাকবে, তখন ফিজিক্যালি মিটিং করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সিটি হলে অবৈধভাবে দখলকৃত জমিগুলো উদ্ধার করা যাবে।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী মহাখালীতে বঙ্গবন্ধু হেলথ সিটি স্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। যদিও এর আগ থেকে নকশা প্রণয়নে প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কাজ শুরুর ১০ বছরের মধ্যে এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হলেও কবে নির্মাণকাজ শুরু হবে, সেটি নির্ধারিত হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের তহবিলের অর্থায়ন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। গত বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এক থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এই পরিকল্পনা। ফলে একসঙ্গে অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে না বলেও জানান কর্মকর্তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হেলথ সিটি হলে এক জায়গায় মাল্টিপল সার্ভিস পাওয়া যবে। দেশের জন্য এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। তবে ম্যাক্রো ইকোনমিক কন্ডিশন দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ প্রজেক্ট থেকে রাতারাতি লাভ আসবে না, দীর্ঘমেয়াদে এটি ভালো সহযোগিতা করবে।’

মহাখালীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন ২১২ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে চারপাশের ৫৯ একর ভূমি বেদখল হয়ে গেছে। দখল হওয়া ভূমি বাদ দিয়ে ১৫৩ একরের জায়গায় এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য নগরীতে অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি প্রদান করবে। বিসিপিএস হাসপাতাল ও মা ও শিশু হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনো হাসপাতাল হবে না। শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্ট বিল্ডিংয়ের মধ্যে থাকবে। নগরীতে হাসপাতাল, সার্ভিসেস, প্রশাসন, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র, পাবলিক হেলথ এরিয়া, ডিজি, এডিজি এবং অন্য কর্মীদের আবাসনে পূর্ণাঙ্গ ও সুনির্দিষ্ট এলাকা থাকবে। জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট ও গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নিপসম, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর, স্টাফদের জন্য আবাসিক সুবিধা থাকবে।

প্রস্তাবিত প্রশাসনিক অঞ্চলে থাকবে স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর (ডিজিএইচএস), পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, চিকিৎসা শিক্ষা অধিদফতর (ডিজিএমই), ডিজিএফপি, ডিজিএমই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সচিবালয় (স্বাস্থ্য পরিষেবা), সচিবালয় (স্বাস্থ্য শিক্ষা), স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর। ইনস্টিটিউট এবং রিসার্চ জোনে থাকবে ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাব, ইনস্টিটিউট অব রিউমাটোলজি, শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক হেড কোয়ার্টার, বিএমআরসি, বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি।

প্রস্তাবিত হাসপাতাল ও চিকিৎসাসেবায় থাকবে সিভিল সার্জন অফিস, আইডিএইচ ও কুষ্ঠ, এনআইসিআরএইচ ক্যাম্পাস, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল, রোবোটিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ত্বক ও ভিডি ইনস্টিটিউট, অ্যান্ডোক্রাইনোলজি ইনস্টিটিউট বিসিপিএস হাসপাতাল। পাবলিক হেলথ জোনে থাকবে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন, নিপসম, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই), নার্সিং ইনস্টিটিউট। আবাসিক সুবিধায় থাকবে নার্সিং ডর্ম, স্টাফ কোয়ার্টার, ডাক্তারের কোয়ার্টার। ইউটিলিটি সার্ভিসেসে থাকবে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপো (সিএমএসডি), গুদাম, ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট রক্ষণাবেক্ষণ।

সর্বশেষ খবর