কুমিল্লা রেলস্টেশন ও আশপাশের এলাকায় রয়েছে ডজনখানেক আবাসিক হোটেল ও বোর্ডিং। এখানে ২০০ বছর আগে অধিকাংশ হোটেল বোর্ডিং গড়ে ওঠে। কিছু হোটেলে কম ভাড়ায় থাকা যায়, সেগুলো কাতচিৎ হোটেল নামে পরিচিত। রয়েছে মাঝারি মানের কিছু হোটেলও। তবে ট্রেন কমায় ও বাস রুট সহজ হওয়ায় রেলস্টেশন সংলগ্ন হোটেল বোর্ডিংগুলোর গ্রাহক কমেছে।
কুমিল্লা রেলস্টেশনের আগে বাগিচাগাঁও রোডে রয়েছে কিছু হোটেল। স্টেশন রোড পার হয়ে স্টেশনে ঢুকতে বাম পাশে রয়েছে কিছু হোটেল। কম ভাড়ার হোটেলের সঙ্গে খাবার ব্যবস্থাও রয়েছে। হোটেলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খিদমাহ, আজমীর রেস্ট হাউস, চাঁদ হোটেল, তাজ হোটেল, সবুজ রেস্ট হাউস, হোটেল ময়নামতি। তাজ হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, সামনে খাবারের দোকান। সাথে পেছনের দিকে কয়েকটি খাট। সেখানেই গ্রাহকরা রাত কাটিয়ে দেন। প্রতি সিট ৫০ টাকা। এই ভাড়া ২০ বছর আগে আরও অনেক কম ছিল। সকালের খাবারে ভাত, ডাল ও আলু ভর্তা। দাম ২০ টাকা। তার পাশে রয়েছে চাঁদ হোটেল। তাজ হোটেলের দায়িত্বে থাকা নুরুল হক বলেন, যাদের কম আয় তারা এখানে ঘুমায় ও খায়। অনেকে এক মাস ধরেও থাকেন। খিদমাহ হোটেলে রয়েছে ছোট ছোট রুম। ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া।
খিদমাহ হোটেলের ম্যানেজার মো. রিপন বলেন, আমাদের এখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফেরি করে মালামাল বিক্রি করা গ্রাহকরা বেশি থাকেন। বর্তমানে কাস্টমার একটু কম। হবিগঞ্জ থেকে কুমিল্লায় এসে দা বঁটি শান দেন কালাম মিয়া। তিনি চাঁদ হোটেলের গ্রাহক। তিনি বলেন, এখানে কম দামে থাকা ও খাওয়া যায়। তাই কুমিল্লায় এলে এখানে থাকি।
দীর্ঘদিন ওই এলাকায় বসবাস করেন গণমাধ্যমকর্মী মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, বুড়িচংয়ের শংকুচাইল আমাদের বাড়ি। রাজাপুর রেলস্টেশনে এসে নামতাম। এ ছাড়া স্টেশন এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করেছি। এখানে আবাসিক হোটেলগুলো ও বোর্ডিংগুলো সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। যখন উপজেলাগুলোর বা পাশের জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না তখন মানুষ আদালতসহ বিভিন্ন অফিশিয়াল কাজে শহরে আসতেন। আগের দিন বিকালে এসে এসব কম দামের হোটেলে উঠতেন। সকালে উঠে কাজে চলে যেতেন। তিনি আরও বলেন, এখানের কিছু হোটেল কাতচিৎ হোটেল নামে পরিচিত। ধারণা করছি, কম জায়গা ঘুমাতে হয় বলে এই নাম হয়েছে।
নগরীর দ্বিতীয় মুরাদপুরের বাসিন্দা সাবেক ক্রিকেটার রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, খেলার পরে ইপিজেডে চাকরি করেছি। অতিথিদের থাকার জায়গা দিতে হতো। নগরীতে ৩০ বছর আগে চকবাজার, কান্দিরপাড়, রেসকোর্স ও নজরুল এভিনিউতে হাতেগোনা কয়েকটি আবাসিক হোটেল ছিল। স্টেশন রোডে ছিল বেশি হোটেল। যদিও সেখানে কর্মজীবী ও ট্রেন যাত্রীদের অবস্থান বেশি ছিল।
রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াতক আলী মজুমদার বলেন, এই অঞ্চলে ১৮১৮ সালে রেললাইন চালু হয়। নিশ্চয়ই সেই সময় থেকে এখানে বাজার ও হোটেল গড়ে ওঠে। কম আয়ের মানুষ এই হোটেলগুলোতে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন। এদিকে নগরীতে সম্প্রতি ভালো মানের কিছু আবাসিক হোটেলও গড়ে উঠেছে।