রংপুর নগরীর অদূরে নব্দিগঞ্জে এক সময় বাড়ি ছিল আমিনুর রহমানের। তিন মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। তারা কেউ খোঁজ রাখেন না। এক পর্যায়ে ভিক্ষা করতে রাস্তায় নামেন। সারা দিন ভিক্ষা করে যা পান তা দিয়ে কোনো রকমে পেট চলে। সারা দিন ভিক্ষা শেষে রাতে রংপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফরমে এসে ঘুমান। সকালে আবার বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। এভাবেই চলছে আট বছর ধরে। মোমেনা বেগমের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। দুই পা অচল। এই অবস্থায় সারা দিন ভিক্ষা করে রাতে এসে স্টেশনে ঘুমান। ইব্রাহিম মিয়ার বাড়ি জয়পুরহাটে। তিনি ২০ বছর ধরে ভিক্ষা করে চলেন। এক ছেলে থাকলেও বাবাকে দেখেন না। স্ত্রী গত হয়েছে অনেক আগে। শনিবার গভীর রাতে রংপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের মতো শতাধিক ছিন্নমূল মানুষ স্টেশনের প্ল্যাটফরমে ঘুমাচ্ছেন। রাত ফুরালে কেউ ভিক্ষায় আবার কেউ ছোটখাটো কাজের জন্য বেরিয়ে যান।
নব্দিগঞ্জের আমিনুর রহমান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, একসময় তার কৃষি জমি ছিল। চাষাবাদ করে সংসার চলত। সংসার এবং পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে একে একে সব জমি বিক্রি করতে হয়। তিন মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর কেউ তার দায়িত্ব নেয়নি। বাঁচার জন্য রাস্তায় নামেন। এভাবেই ১১ বছর ধরে চলছে তার জীবন।
মোমেনা বেগমের গল্প অন্য রকম। একমাত্র ছেলে এবং স্বামী মারা যাওয়ার পরে নিঃসঙ্গ এবং নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। এর মধ্যে দেখা দেয় অসুস্থতা। দুই পা প্রায় অচল। তিনি আট বছর থেকে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে পেট চালাচ্ছেন। রাত হলেই চলে আসেন রেলস্টেশনে। ইব্রাহিম মিয়ার এক ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রী রয়েছেন। তিনি গত ২০ বছর ধরে ভিক্ষা করে পেটের ক্ষুধা মেটাচ্ছেন। তাদের মতো শতাধিক ছিন্নমূল মানুষ রাতে স্টেশনে ঘুমান। তাদের অধিকাংশের পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। কেউ কেউ রয়েছেন ছোটখাটো শ্রমজীবী। তারাও দিনে কোন হোটেল কিংবা গ্যারেজে কাজ করে রাতে ঘুমান রেলস্টেশনে। শীতকালে তাদের খুব কষ্ট হয় শীতবস্ত্রের অভাবে।