শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
একান্ত সাক্ষাৎকারে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবসা বৃদ্ধি পেলে বিনিয়োগকারী বাড়বে

রুহুল আমিন রাসেল, দুবাই থেকে

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবসা বৃদ্ধি পেলে বিনিয়োগকারী বাড়বে

বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আগ্রহী দুবাই। সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের অন্যতম একটি শ্রমবাজার। দেশটিতে প্রকৌশলী, চিকিৎসক, নার্সসহ সম্মানজনক পেশায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশ দুটির বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। সেখানে দুই দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি।  

তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের টোটাল এক্সপার্টিস যে বাইরে থাকেন তাদের ১৭% এই সংযুক্ত আরব আমিরাতে। কয়দিন আগেও দেখা যায় টোটাল যে রেমিটেন্স আসে তার সাড়ে ৬ মিলিয়নের ওপর রেমিট্যান্স আসে শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। এখানে বাংলাদেশিদের ব্যবসার ভালো সুযোগ রয়েছে।

দুবাইকে হাব হিসেবে ব্যবহার করার কথা জনিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্য এখানে একটা স্টেশন করে আমরা ডিস্ট্রিবিউশন করতে পারি। তারাও কিন্তু এখন এক্সপ্লোর করছেন, বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসা বাড়াচ্ছেন। বাংলাদেশে তাদের ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে এ হিসেবে তাদের অবস্থান আমাদের দেশে ১৭তম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এবার ভিজিটে আমাদের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা আছেন। সব সেক্টরের লোকজন রয়েছে। এখানে একটা বিজনেস কউন্সিল হবে। আবার দুবাই চেম্বারের সঙ্গে আমাদের একটা সমঝোতা স্মারক হবে। এখানে চারটা সেক্টর সরাসরি প্রেজেন্টেশন দেবে। ব্যাংক অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, আইসিটি, ফুড প্রসেসিং, প্লাস্টিক। যৌথভাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে সমঝোতা স্মারক হচ্ছে দুবাই চেম্বারের সঙ্গে এফবিসিআইর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি একটা প্রেজেন্টেশন দেব ওভারঅল বাংলাদেশের ইনভেস্টমেন্টের পসিবিলিটিটা কী তা নিয়ে। এই দুবাই চেম্বারটা অনেক বেশি অ্যাকটিভ। এবার আমরা দুবাই চেম্বারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করব। এতে উভয়েরই ভালো হবে। আরও একটা বৈঠক হচ্ছে আমাদের সিকিউরিটি এক্সেস কমিশন আর কিছু অর্গানাইজেশনসহ। যেখানে সরকার থেকে আমাদের পসিবিলিটি আসলে কী। আমাদের বিজনেসকে প্রোমোট করার জন্য আমাদের অ্যাডভানটেজগুলো কী আছে। এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। এখন তো বাংলাদেশে অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। এক সময় ঘাটতি ছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল অবকাঠামোর। এখন ১০১টি ইকোনমিক জোনসহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অবকাঠামো রয়েছে আমাদের। এ ছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক বছরে যে মেগা প্রজেক্টগুলো করলেন তা দিয়ে বিশ্বের দরবারে আমাদের অবস্থান তুলে ধরা যায়। আমাদের দেশের মার্কেটও দিন দিন বড় হচ্ছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্র প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং দুবাইয়ের ব্যবসায়ীরা যদি বাংলাদেশে আসেন তাহলে আমাদের দেশের ব্যবসায়িক প্রসার বৃদ্ধি পাবে বহু গুণ। আমাদের দেশের মার্কেট হলো ১৭ কোটি লোকের মার্কেট। এখানে নানা রকম প্রোডাক্ট নিয়ে বাইরের দেশের ইনভেস্টররা কাজ করতে পারেন। আবার তাদের কিছু বিষয় রয়েছে যেমন ফুড প্রসেসিং, হালাল খাবার ইত্যাদি নিয়ে তারা আগ্রহী যে কোথায় ব্যবসার প্রসার করা যায়। আমি মনে করি উন্নতমানের প্রোসেস সার্টিফিকেশন করা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রোডাক্ট তৈরি করা।

মুসলিম দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি হালাল ফুড চলে। পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা হালাল ফুড আসে ব্রাজিল থেকে।  ওরা কিন্তু মুসলিম দেশ নয়। আমাদের দেশে ভেজিটেবল আছে। আমাদের শাকসবজি রয়েছে। এই জায়গায় আমাদের ইনভেস্ট লাগবে প্রোসেসিংয়ের জন্য। আমাদের ফার্মিং যদি সায়েন্টিফিক ওয়েতে করা যায়, হাউসগুলো যদি আরও উন্নত করা যায়; হালাল সার্টিফিকেশনটাকে যাতে আরও ইজি করতে পারি- এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করছি

এসব ক্ষেত্রেও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হতে পারে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের যে এশিয়ান কান্ট্রিগুলো ধরেন ভারতসহ অন্যান্য দেশ যারা আছে তারও কিন্তু চাইলে এক্সপ্লোর করতে পারে। দুবাই থেকে আমরা যেমন সিএস কান্ট্রিতে যেতে পারি, আফ্রিকাতে যেতে পারি তেমনি বাংলাদেশেও যদি কেউ ইনভেস্ট করে তারা বাংলাদেশের লোকাল মার্কেট, ইন্ডিয়ার মার্কেট এবং এশিয়ার মার্কেট, চায়নার মার্কেট ধরতে পারে হাব হিসেবে। ফুড প্রোসেসিংয়ে আমাদের টার্গেট কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনেকগুলো সেক্টর রয়েছে। যেমন লজিস্টিকস এবং শিপিং- এই জায়গাগুলোতে তারা কাজ করতে পারেন। দুবাইয়ের ফুড কিন্তু অনেক প্রশংসিত। আমাদের ব্যাংকের ইন্স্যুরেন্সে তারা ফাইন্যান্স করতে পারে। ইসলামিক ব্যাংকিং বাংলাদেশে শুরু হয়েছে। অনেকেই ইসলামিক ব্যাংক চালাচ্ছে। এই জায়গায় কিন্তু তারা আসতে পারে। তারপর ফুড প্রোসেসিং বলেন হালাল ফুড বলেন এসব জায়গায় আসতে পারে। ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে অপার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে রয়েছে অনেক সম্ভাবনা। ১২ সেক্টরে মোটামুটি আমরা এখন কাজ করে যাচ্ছি। ইলেকট্রনিক্সসহ আইসিটি সেক্টরে অনেক কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশে সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যারা তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। তারা কিন্তু ভালো করছে। তারা কোথায় ছিল কোথায় আসছে কোথায় যেতে চায়। আমরা কিন্তু তাদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে পারি। আউটসোর্র্সিং অথবা অল্টারনেটিভ সোর্সিংয়ের অনেক বড় একটা জায়গা কিন্তু আমাদের হয়েছে। পার্টিকুলার কোনো সেক্টরে ইনভেস্টমেন্টের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে বলতে হয় আমরা তো ওভারঅল তুলে ধরব। যার যার যে সেক্টরে ইন্টারেস্ট আছে সে সেই সেক্টরে কাজ করতে পারবে। এখানে অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী যাচ্ছেন। তাদেরকে আমরা লিস্ট দিয়েছি কারা কারা যাচ্ছেন। সেই সেক্টরের লোক নিয়েই তারা বসবেন আমাদের সঙ্গে। এই বৈঠকে যারা পোটেনশিয়াল ইনভেস্টর আছে তাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করব। আমরা আরও চেষ্টা করছি কীভাবে ট্রেড পটেনশিয়ালিটি বাড়ানো যায়। আমরা ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে শুধু চিন্তা করছি না কিন্তু। যখন আপনার ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে তখন এমনিতেই বিনিয়োগকারী বাড়বে। মার্কেট না বুঝে কেউ কিন্তু ইনভেস্ট করতে আসবে না। বাংলাদেশের মেজর প্রোডাক্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ইউরোপ এবং আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা করব। মিডলইস্টের মার্কেটও কিন্তু ছোট নয়। এখানে বসে আপনি ইউরোপ, মিডলইস্ট এবং সিএস কান্ট্রি এবং আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও ভালোভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন। ইউএস চায়না ইজ মাচ বেটার দ্যান আমেরিকান প্রাইস। আমেরিকায় যে দামে একটা প্রোডাক্ট সেল করবেন তার চেয়ে বেশি দাম পাবেন আপনি চায়নাতে। আমাদের একজন ব্যবসায়ী কিছুদিন আগে লন্ডনে বলছিলেন যে, আমাদের জুতাটা যদি বগুড়ার মার্কেটে সেল না করে জার্মান মার্কেটে সেল করি তাহলে আমার প্রোফিট বেশি হবে। এখন কিন্তু মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার রেডি আছে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্সে কিন্তু ভালো করছে বাংলাদেশ। প্লাস্টিক সেক্টরেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কোটি কোটি টাকা এক্সপোর্ট করছি। এ ক্ষেত্রে এসব মার্কেট একটা বড় জায়গা হতে পারে। তারপর আমাদের আইসিটি। মুসলিম দেশগুলোয় সবচেয়ে বেশি হালাল ফুড চলে। পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা হালাল ফুড আসে ব্রাজিল থেকে। ওরা কিন্তু মুসলিম দেশ নয়। আমাদের দেশে ভেজিটেবল আছে। আমাদের শাকসবজি রয়েছে। এই জায়গায় আমাদের ইনভেস্ট লাগবে প্রোসেসিংয়ের জন্য। আমাদের ফার্মিং যদি সায়েন্টিফিক ওয়েতে করা যায়, হাউসগুলো যদি আরও উন্নত করা যায়, হালাল সার্টিফিকেশনটাকে যাতে আরও ইজি করতে পারি- এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করছি।

সর্বশেষ খবর