বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব সৌদির

নজরে তিন লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নজরে তিন লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ

বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার (প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা) বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সৌদি আরব। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভায় এ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। বিনিয়োগের জন্য দুই দেশের বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছিল। তবে তার পরেই করোনা মহামারির কারণে সবকিছু থমকে যায়। সারা বিশ্বেই শুরু হয় দীর্ঘ লকডাউন। ফলে প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ নিয়েও কোনো আলোচনা সম্ভব হয়নি। দুই বছর পর এখন আবার সেই বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আশার আলো দেখছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ। সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে যে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় সেখানে সৌদির পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, রাজনৈতিক সংলাপে আমি উপস্থিত ছিলাম। এ ধরনের সংলাপে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার সুযোগ ছিল না। তবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একটি বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর ফলে ইতোমধ্যে যেসব বিনিয়োগ প্রস্তাবের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে সৌদির কাছ থেকে সেগুলোর বিষয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা করার একটি কার্যকর প্ল্যাটফরম হতে পারে প্রস্তাবিত বিজনেস ফোরাম-এমনটাই মনে করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।    

সংশ্লিষ্টরা জানান, কভিড-১৯ অতিমারির আগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমে পাকিস্তান ও পরে ভারত সফরে আসেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। দুটি দেশের অবকাঠামোসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সে সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুবরাজকে ঢাকায় আনার জন্য কূটনৈতিক চেষ্টা করা হলেও সেটি সম্ভব হয়নি। তবে রিয়াদ প্রশাসন ঢাকাকে আশ্বস্ত করেছিল যে, যুবরাজ না গেলেও বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে। সৌদি আরবের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি ঢাকা সফরে গিয়ে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করবেন।

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সৌদি যুবরাজের পাকিস্তান-ভারত সফরের পরপরই গত বছরের মার্চে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি শক্তিশালী প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় পাঠানো হয় বড় আকারের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে। এ সফরে সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আল কোসাইবি এবং অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন মাজিদ আল-তাওজরি নেতৃত্ব দেন। ওই সময় ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সৌদির দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ বড় বড় প্রকল্পে সৌদি আরবের কাছে ৩৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ চেয়েছে বাংলাদেশ। সম্ভাব্য বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ বেশ কিছু প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরবকে। ওই প্রস্তাবগুলো নিয়ে সমীক্ষার পরই সৌদি আরব বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

যেসব প্রকল্পে বিনিয়োগ আসার কথা ছিল : ইআরডি সূত্র জানায়, মন্ত্রী পর্যায়ের সফর শেষে ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাছাই করা হয় সৌদি বিনিয়োগের জন্য। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের  (জেইসি) বৈঠকে সেই প্রকল্পগুলোতে সৌদিকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। জানা গেছে, সৌদির জন্য বাছাই করা এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি অবকাঠামো ছিল চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালুর লাইন নির্মাণ এবং ঢাকা-বরিশাল-পায়রা বন্দর হয়ে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। ওই বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, জেইসি বৈঠকে এসব প্রস্তাব তোলার পর গ্রাম পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় টেলিটকের ফোরজি সেবা সম্প্রসারণে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয় সৌদি। এ ছাড়া বড় বিনিয়োগের জন্য সরকারের কাছে এক হাজার একর জমি বরাদ্দ চায় দেশটির আল বাওয়ানি গ্রুপ। ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র (সোলার আইপিপি) নির্মাণে সৌদি আরবের আলফানার কোম্পানির সঙ্গে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) এবং ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনে সৌদি কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের সঙ্গে চুক্তি করে জেনারেল ইলেক্ট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। এ ছাড়া জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে সরকারি সংস্থা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ও সৌদি আরবের আল মাম ট্রেডিং এস্টেটের মধ্যে; ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্ল্যান্ট নির্মাণে সৌদি আরবের ইউসুফ আল রাজি কনস্ট্রাকশন এস্টেট ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন; ‘সৌদি-বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে সৌদি আরবের আল আফালিক গ্রুপ (এএইচ গ্রুপ) ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের মধ্যে; তার উৎপাদনের বিষয়ে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) এবং রিয়াদ কেবলস গ্রুপ অব কোম্পানির মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল।

 

সর্বশেষ খবর