বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

মাত্র ৫ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি

এম এ রাজ্জাক খান রাজ, চেয়ারম্যান, মিনিস্টার গ্রুপ

মাত্র ৫ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি

ইলেক্ট্রনিকস খাত নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম রাজ্জাক খান রাজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলী রিয়াজসাইফ ইমন। ছবি তুলেছেন জয়ীতা রায়

 

মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান রাজ ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করেন ২০০২ সাল থেকে। প্রথম টার্গেট ছিল প্রতিদিন ১০টি  টেলিভিশন তৈরি করে তা বাজারজাত করা। সফলভাবেই সেই টার্গেট প্রথম এক বছর সম্পন্ন হয়। একসময় টেলিভিশন থেকে অন্যান্য ইলেক্ট্রনিকস পণ্য নিয়ে বাজারে আসেন মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক। ২০১৩ সালে মিনিস্টার নামে যাত্রা শুরু হয় নতুন করে। এখন বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে যাচ্ছে মিনিস্টারের পণ্য। মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক জানান, শুরুটা হয়েছিল ব্যক্তিগত জেদ থেকে। তখন তিনি সিঙ্গাপুরে ছিলেন। দেশে ফিরেই শুরু করেন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যবসায়িক অগ্রযাত্রার শুরু?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : আমি বাংলাদেশে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমাই। সেখানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম জব শুরু করি। যেখানে আমি পার্টটাইম জব করতাম সেখানে একজন সিঙ্গাপুরিয়ান ছিলেন। তিনি বাঙালিদের সঙ্গে কারণে-অকারণে খারাপ ব্যবহার করতেন। আমিও তার খারাপ আচরণের শিকার হয়েছিলাম। এ বিষয়টি আমার মধ্যে জেদ তৈরি করেছিল। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই যে বাংলাদেশে ফিরে দেশীয় ব্র্যান্ড শুরু করব। যেন দেশের মাটিতে দেশের প্রোডাক্ট তৈরি করা যায়। সেই আলোকেই আমার মাথায় আসে সাদা-কালো টেলিভিশনের আইডিয়া। সে সময় টেলিভিশনের ভালো চাহিদা ছিল। আমার লক্ষ্য ছিল সুলভ মূল্যে সবার কাছে টেলিভিশন পৌঁছে দেওয়া। এভাবেই নিজের ব্যবসায়িক জীবনের শুরু হয় আমার।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলেন কীভাবে?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : তখন টেলিভিশনের কিছু ত্রুটি ছিল, যেমন কম ভোল্টেজ হলেই স্ক্রিন ছোট হয়ে আসত। এসব ত্রুটি দূর করার পাশাপাশি তখন ওয়াইড ভোল্টেজ রেঞ্জ এবং সাউন্ড সিস্টেমের ডেভেলপ করে তা বাজারজাত শুরু করি আমি। মার্কেটে যে প্রাইস আছে তার থেকে অল্প দামে বিপণন করতে থাকি। যা আমাকে সফলতা দিয়েছে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : প্রথম বিনিয়োগ কত ছিল?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : শুধু ৫ লাখ টাকার প্রাথমিক বিনিয়োগ ছিল আমার। সে সময় তিনটি রুমের অফিসে একজন টেকনিশিয়ানসহ পাঁচজন কর্মী নিয়ে শুরু করি আজকের মিনিস্টার গ্রুপ। তৈরি করা শুরু করি সাদা- কালো টেলিভিশন। মিনিস্টার গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ২০০২ সাল থেকে। রঙিন টেলিভিশন সে সময় প্রচলিত, তাই একটা চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। প্রতি এক বছর পরেই আমার রঙিন টেলিভিশন নিয়ে চিন্তা শুরু করি। অ্যাসেম্বল শুরু করি। খরচ কমিয়ে উন্নতমানের টেলিভিশন তৈরিতে মনোযোগী হই।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  নিজেই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় ইলেক্ট্রনিক ব্যবসায় সুবিধা কী পেলেন?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : অনেক। আমি রাত- দিন কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে শুরু করেছিলাম এবং সেভাবেই কাজ করি। স্বল্প মূল্যে উন্নতমানের পণ্য সবার হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে যেতে থাকি। দেশের বাইরে পড়াশোনা ও কাজ করার সময় আমি যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম তা কাজে লাগিয়েই আজ সফল হয়েছি। ফজরের নামাজ পড়ে কাজ শুরু করতাম। একদম শেষ রাত অবধি কাজ করেই যেতাম। আমার নেশা ধ্যান জ্ঞান সবই ছিল আমার প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে। পণ্য তৈরি থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ, সবই আমাকে দেখতে হতো। এভাবেই যাত্রার শুরু থেকে প্রথম মাসে আমাদের টার্গেট ছিল ৩০০ পিস বিক্রি করা। প্রতি দিন ১০ পিস করে। সেটা পূরণ করতে সক্ষম হই।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : মাই ওয়ান থেকে মিনিস্টার গ্রুপে যাত্রা প্রসঙ্গে কিছু বলুন।

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : টানা বছরের পর বছর ইলেক্ট্রনিকস পণ্যে সফলভাবে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। একসময় শুরু হয় মাই ওয়ান টেলিভিশনের যাত্রা। সাদা-কালো টেলিভিশন তৈরি করে সফল হওয়ার পরে আমি দ্রুতই রঙিন টেলিভিশন তৈরিতে মনোযোগী হয়েছিলাম। যেই কথা সেই কাজ। শুরু করে দিলাম রঙিন টেলিভিশন তৈরির কাজ। ২০০৩ সালে দক্ষ জনবল নিয়োগ করে তৈরি করতে শুরু করি রঙিন টেলিভিশিন। মাই ওয়ান ব্যান্ডটি নিয়ে আমরা বাজারজাতকরণ শুরু করি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সাফল্যের মুখ কীভাবে দেখলেন?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : প্রতিষ্ঠান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জনবলও বাড়তে থাকে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হতে থাকে। একসময় আমরা ৯ হাজার ৯৯৯ টাকায় টেলিভিশন দিতে সক্ষম হই। তখন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ছিল টেলিভিশনের দাম। এটা ছিল অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো একটা বিষয়। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেখানে পাঁচ বছরের গ্যারান্টি দিচ্ছে সেখানে আমি সাত বছরের গ্যারান্টি দিয়েছি। কারণ আমার আস্থা ছিল আমার পণ্য নিয়ে। মালয়েশিয়া থেকে পিকচার টিউব ইমপোর্ট করতাম। আমার মধ্যে একটা জেদ কাজ করেছে যে আমি রাত-দিন কাজ করে যাব। আমি চেয়েছিলাম দেশীয় একটি নাম দেশীয় একটি প্রোডাকশন দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। এক সময় আমরা প্রোডাকশনে চলে আসি। ২০১৩ সালে বাজারে নিয়ে আসি মিনিস্টার ব্র্যান্ড। এটি এখন দেশব্যাপী পরিচিত। আমার সহধর্মিণী দিলরুবা তনু আমার অনুপ্রেরণা। তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পেরে আমরা গর্বিত।

সর্বশেষ খবর