বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে প্রয়োজন রেগুলেটরি কাঠামো

সেলিম আর এফ হোসেন, চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্র্যাক ব্যাংক

আলী রিয়াজ ও সাইফ ইমন

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে প্রয়োজন রেগুলেটরি কাঠামো

প্রথাগত ব্যাংকিং ধারণার বাইরে এবার বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংকিং। বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত গাইড লাইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। গাইড লাইন তৈরি শেষ হলে লাইসেন্স প্রদান করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, ৫০০ কোটি টাকা পেইডআপ ক্যাপিটাল লাগবে ডিজিটাল ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমতি পেতে। প্রথাগত ব্যাংকিং পদ্ধতির বাইরে এ ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হলে গ্রাহকদের ঘরে বসেই সব ধরনের লেনদেন করা সম্ভব হবে। ক্যাশলেস সোসাইটির ধারণাকে বাস্তব রূপ দিতে ডিজিটাল ব্যাংকিং এখন বিশ্বের অনেক দেশে চালু আছে। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেও এ ব্যাংকিং কার্যক্রম রয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকিং চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকিং গাইড লাইন চূড়ান্ত করেছে। ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, প্রথমত রেগুলেটরি ফ্রেম ওয়ার্ক তৈরি করাটা ভালো কাজ। এটা পুরো দুনিয়ায় আছে। এমন না যে আমি মনে করি আগামীকালকেই বাংলাদেশে চালু হবে। তবে এ কাজটা করা প্রয়োজন। রেগুলেটরি ফ্রেম ওয়ার্ক করাটা এখনই প্রয়োজন। কেউ ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর পরও এটা করতে পারে। তাই ফ্রেম ওয়ার্ক তৈরি করে দেওয়া দরকার। তাহলে আগামীতে যে বা যারা করতে চায় তারা পারবে। এ বিষয়ে ঝুঁকি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝুঁকি নয়, চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে কমার্শিয়াল ভায়াবিলিটি। একটা ডিজিটাল ব্যাংক তখন কার্যকরী হয় যখন কোনো দেশে ক্যাশের ব্যবহারটা উঠে যায় অথবা একেবারে ন্যূনতম থাকে। এখন ওই পর্যায়ে অনেক দেশ চলে গেছে। পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোতে দেখবেন মানুষ অনেকভাবে লেনদেন করছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ক্যাশলেস সোসাইটিতে। কার্ডের মাধ্যমে অথবা মোবাইলের মাধ্যমে কিংবা অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করা যায়। বাংলাদেশে ক্যাশলেস সোসাইটি হতে এখনো বেশ কিছু বছর সময় লাগবে। তবে আমাদের দেশেও ব্যাংকিং সেক্টরে ডিজিটালাইজেশন এবং ডিজিটালাইজেশন অব পেমেন্ট সার্ভিসেস চালু আছে। গত দুই বছরে করোনা মহামারির কারণে আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে বিশাল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনলাইনে লেনদেন করা এখন আগের তুলনায় অনেক অনেক বেড়ে গেছে। এ ধারা চলতে থাকবে। গতি বাড়তে থাকবে। তবে একই সঙ্গে আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে শুধু ঢাকা-কেন্দ্রিক চিন্তা করলে হবে না। ঢাকার বাইরে আমাদের চিন্তা করতে হবে। আপনি যখন একটা ডিজিটাল ব্যাংক তৈরি করবেন সেটা কতটুকু কার্যকরী হবে তা উদ্যোক্তাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে। যেহেতু আমরা এখনো ক্যাশলেস সোসাইটি নই। একই সঙ্গে খেয়াল করবেন বাংলাদেশে সব ব্যাংকেই কমবেশি ডিজিটাল ব্যাংকিং বা ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমটা চালু রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হাইব্রিড বা মাল্টি চ্যালেঞ্জ ব্যাংকিং স্ট্র্যাটিজি চালু হয়ে গেছে। আমাদের দেশেও মোটামোটি তাই। ফলে বাংলাদেশে এটা কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে কিছুটা চিন্তার বিষয় আছে। ব্র্যাক ব্যাংকে এ ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আমরা এটা নিয়ে চিন্তা করেছি। বিভিন্ন রকম ডিজিটাল ব্যাংকিং সার্ভিসেস ব্র্যাক ব্যাংক চালু করে দিয়েছে। বছর দুয়েক হলো এসএমই, রিটেইল, করপোরেট সেগমেন্টে এ সার্ভিসগুলোকে আমরা অনেক বাড়াচ্ছি। সক্ষমতা ও পরিধির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশে ক্যাশলেস সোসাইটি হতে এখনো বেশ কিছু বছর সময় লাগবে। তবে আমাদের দেশেও ব্যাংকিং সেক্টরে ডিজিটালাইজেশন এবং ডিজিটালাইজেশন অব পেমেন্ট সার্ভিসেস চালু আছে। গত দুই বছরে করোনা মহামারির কারণে আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে বিশাল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

জানা গেছে, ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা পেমেন্ট সার্ভিস ডিরেক্টিভ-২ পদ্ধতির মতো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৫ সালের ডিজিটাল এ নীতিমালা অনুমোদন করে। ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশ এ সেবা চালু করে। পিএসডি-২ নির্ভর সেবায় গ্রাহক চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়ে কাঠামো তৈরি করা হয়। গ্রাহকরা কোন সেবা নেবেন, তা পছন্দ করতে পারবেন। বর্তমানে প্রচলিত ব্যাংকিং সেবা নিতে যেভাবে গ্রাহককে শাখায় যেতে হয় ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে তা আর দরকার হবে না। ডিজিটাল ব্যাংকের একজন গ্রাহক সব ব্যাংকের সেবা নিতে পারবেন। যদি বৈদেশিক লেনদেনে সেবা মাশুল কোনো ব্যাংক কম খরচে দেয়, ডিজিটাল ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহক ওই ব্যাংকের সেবা নিতে পারবেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মতো গ্রাহক যেকোনো সেবা পছন্দ করার ও নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এ ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু হলে বর্তমানের ব্যাংক ডিজিটালাইজেশন যেভাবে চলছে তা কমে আসবে। ঝুঁকি কমবে গ্রাহক ও ব্যাংক সবারই। নিজের হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইলে যে কানেকশন থাকবে এখানেই সব ধরনের লেনদেন চলবে। বর্তমানে যেসব ব্যাংকিং অ্যাপ চালু আছে সেগুলো নির্দিষ্ট ব্যাংকের নিদিষ্ট সার্ভিস বা পণ্য কেন্দ্রিক। অন্যদিকে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে। সেখানে ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম বা সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। চলতি অ্যাকাউন্ট, সেভিংস অ্যাকাউন্টের যে ধরনের হিসাব পরিচালনা করা হয় তা হবে স্বাভাবিক।

সর্বশেষ খবর