বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

শাড়িতে অনন্যা

শাড়িতে অনন্যা

ছবি: আর্কাইভ

পোশাকের আধুনিকায়ন হলেও বাঙালি নারীর শাশ্বত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে কেবল শাড়িতেই। শাড়ির চিরন্তন আবেদন আজও অমলিন। ১২ হাত একখানা শাড়ির সৌন্দর্যের কাছে যেন হার মানে অন্য সব পোশাকই। আর তাই তো বাঙালি নারীদের কাছে শাড়ি খুব শখের একটি পোশাক।

 

নারীর স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন এখন অনেকটাই পূর্ণ। বর্তমানে ঘরে-বাইরে সবখানেই বেড়েছে নারীর কর্মব্যস্ততা। নারীর সঙ্গে যোগ হয়েছে দক্ষতা, কর্মমুখিতা, উৎসাহ, উদ্যোগের মতো সংজ্ঞা। অন্যদিকে নারীর জীবন থেকে বাদ পড়েছে পিছিয়ে থাকা আর আড়ষ্ঠতা নামক কিছু বৈশিষ্ট্য। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নারী আজ ঘরের বাইরে শুধু পা রাখেননি, সেই সঙ্গে রাখছেন সফলতার শিখরে পদচিহ্ন। এসব সফল নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম সঙ্গী ১২ হাতের শাড়ি।

শাড়ি বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের নারীদের ঐতিহ্যবাহী ও নিত্যনৈমিত্তিক পরিধেয় বস্ত্র। অনেক লম্বা ও সেলাইবিহীন কাপড় দিয়ে তৈরি এই পোশাকটি নারীদের কাছে খুব শখের একটি পোশাক। যদিও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাল্টে যায় এই পোশাকের ধরন। যোজন-বিয়োজনে শাড়ির ফ্যাশন আর পরিধেয় স্টাইলে আসে আমূল পরিবর্তন। যা নারীর শাড়িকে করে আরও আকর্ষণীয়।

 

নারীদের সারা দিন কাজের অন্ত নেই! সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে চলতে থাকে একের পর এক দায়িত্বের ভার। এই ঘরদোর পরিষ্কার তো খানিক বাদেই কাপড় ধোয়া। তার ওপর রান্নাবান্নার নৈমিত্তিক কাজকর্ম তো আছেই! করোনাকালের জন্য এখন হয়তো অফিস যাওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু তাই বলে কি কাজ থেমে আছে? হয়তো না, আজকালের কর্মজীবী নারীর হোম অফিস তো আছেই। এর মধ্যে নেই কোনো সাহায্যকারীও। উপরন্তু করোনার সময়ে বাড়তি যোগ হয়েছে বারবার হাত ধোয়া, জিনিসপত্র, আসবাব, বাজার সবকিছু জীবাণুমুক্ত করা। ঠিক আছে, কিন্তু সবই তো করা যায় শাড়ি পরে। অনভ্যাসে শুরুতে মন সায় না দিলেও পরেই দেখুন আলমারিতে তুলে রাখা কনে দেখার শাড়িটি। নিজেই কেমন চমকে যাবেন নতুন নিজেকে দেখে।

 

আজ নারী বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে আপন মহিমায় ভাস্বর। তাই নারী আজ ঘরের কোণে সেকালের মতো বন্দী  থেকে অন্ধ অনুকরণ ও বিশ্বাসকে আঁকড়ে না ধরে শিক্ষা তাদের অন্তর-বাহিরকে জাগরিত করেছে। তাই আজ নারী পুরুষের মতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারছে। যারা এই সময়ে বাড়ি থেকেই অফিস করছেন তাদের কাজের মধ্যে আবশ্যিকভাবেই চলে আসে ভিডিও কনফারেন্স কিংবা অনলাইন মিটিং। অফিসের পরিবর্তে বাসায় বসে কাজটি করতে হলেও তার জন্যও তো চাই পরিপাটি থাকা। যারা এমন মিটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন তারা বেছে নিতে পারেন সুতি বা শিফনের কোনো শাড়ি। খুব জমকালো না হলেই ভালো। তবে শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে হালকা সাজের কথা ভুলবেন না যেন। নিঃসন্দেহে আপনার লুক বাড়তি ইম্প্রেশন দেবে।

ঘরের কাজে দিনের বেশির ভাগ সময় পার করছেন। ধোয়া কাপড় নিয়ে ছুটছেন ছাদ কিংবা বারান্দায়। কিন্তু দিনের বেশির ভাগ সময় যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, নিজের জন্য একটু সময় বের করে নিন। তাতে নিজেকে সময় দেওয়াও হবে, পাশাপাশি মনও থাকবে উৎফুল্ল। কারণ, নিজের সঙ্গে সময় কাটানো এই জীবনে সত্যি জরুরি। আর কোয়ারেন্টাইনের এই সময়ে নানা কারণে বন্দী মন থাকছে বিক্ষিপ্ত। আকাশের নিচে খোলা ছাদে একলা সময়, খারাপ লাগবে না। কিংবা বসে পড়ুন গিটার বা হারমোনিয়াম নিয়ে। নিজের মনে গেয়ে ফেলুন পছন্দের  কোনো গান। চাইলে ভিডিও করে ইউটিউবে নিজের চ্যানেলে আপলোডও করে দিতে পারেন। শাড়িতে কমনীয় আপনার সঙ্গে গান হবে ভিউয়ারদের জন্য বাড়তি পাওনা।

 

বিয়ের পর থেকে সেই শাড়িটি পরা হয়নি। প্রায়ই ভাবেন একবার পরবেন। কিন্তু সে সময়টি আর মেলে না। চলছে লকডাউন। ঘরেই তো আছেন। কোয়ারেন্টাইনের সময় বের করে নিন শাড়িটি। ভাঁজ খুলে নেড়েচেড়ে খানিক স্মৃতি রোমন্থন করে আবার তুলে রেখেছেন সযতনে। এবার চাইলে সেই শাড়িটি পরিধান করে আপনার সঙ্গীকে চমকে দিন। পুরনো রোমান্স আবারও নতুন করে জেগে উঠবে। এ ছাড়া এক সন্ধ্যায় ইচ্ছা করেই রান্না করে নিন সঙ্গীর পছন্দের খাবার। দুজনে মিলে কিছু সময় সুন্দর কাটান। হালকা মেকআপে, চুলের আলতো বাঁধনে সঙ্গীর মনও ভালো হয়ে যাবে।

 

বাঙালি নারীরা শাড়িই বেশি পছন্দ করেন। শাড়ির পাশাপাশি অনেক নারী কুর্তি-কামিজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীকে সম্পূর্ণ করপোরেট সাজে সেজে উঠতে হয়। যদিও বাঙালি নারীর চিরন্তন শাড়ির সৌন্দর্য এমন সব ওয়েস্ট বা মিশ্র কালচারে ফুটে ওঠে না। শাড়ি পরলে চেষ্টা করুন এক রঙের পরিধান করার। অর্থাৎ এসব অনুষ্ঠানে প্রিন্টের কাপড় না পরাই ভালো। পোশাকের রঙের ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে। উজ্জ্বল বা শকিং কোনো রঙের পোশাক না পরাই উত্তম। শাড়ি পরলে ব্লাউজের কাটের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে শাড়ির ওপর ব্লেজার পরতে পারেন, যা স্মার্টনেস বাড়িয়ে দেবে। তবে কর্মজীবী নারীরা যেমন পোশাক পরিধান করুন না কেন পোশাক নির্বাচনের সময় মাথায় রাখবেন আপনার পোশাকটি যেন মার্জিত রুচির হয়। পোশাক থেকে সাজগোজে কখনই যেন উগ্রতা প্রকাশ না পায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর