বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ইমিউনিটি বাড়ানোর কয়েকটি উপায়...

ইমিউনিটি বাড়ানোর কয়েকটি উপায়...

ছবি : ইন্টারনেট

বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। প্রতিদিন COVID-19 রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এবং মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমাদের দেশের পরিস্থিতিও এর ব্যতিক্রম নয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে এত বিপুল পরিমাণ রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে। এমতাবস্থায় আমাদের উচিত প্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং এজন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো বা Immunity Boost করার দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। তাই আজকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে Immunity Boost করার কয়েকটি কার্যকর উপায় সম্পর্কে জানব।

 

খাদ্যাভ্যাস : সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর শাকসবজি ও ফল খান। ফলের রসের পরিবর্তে গোটা ফল খাওয়া ভালো। এতে পুষ্টির সঙ্গে ফাইবারও পাওয়া যাবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন ৮-১০ গ্লাস। ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও মসলা খাবার যতটুকু সম্ভব পরিহার করুন।

 

ভিটামিনস ও মিনারেল : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

০. প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে টক জাতীয় ফল, যেমন- লেবু, কমলা, মাল্টা, আমড়া, জাম্বুরা ইত্যাদি। এ ছাড়াও বাজারে ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়, যা ফ্লু উপসর্গে আপনি দিনে ১-২ বার চুষে খেতে পারেন। তবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া ভিটামিন সি-এর কার্যকারিতা বেশি।

০. ভিটামিন ডি-এর প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে সূর্যরশ্মি যা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শরীরের কিছু অংশ উন্মুক্ত করে (যেমন মুখম-ল, হাত বা ঘাড় আপনি কাজে লাগাতে পারেন। এ ছাড়াও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডিমের কুসুম, মাছের তেল, গরুর কলিজা এগুলো খেতে পারেন।

জিংক : ফ্লু বা সর্দি-কাশি উপসর্গে, জিংকের বেশ উপকারিতা রয়েছে। জিংকসমৃদ্ধ খাবারগুলো হচ্ছে- আদা, রসুন, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি। বাজারে লজেন্স আকারে জিংক সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন ২-৩ ঘণ্টা পর পর।

 

মধু : মধুতে এমন কিছু জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছে যেমন- হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড যা RNA Virus এর বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই ফ্লু উপসর্গে মধু বেশ উপকারী তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সাবধানে খেতে হবে।

 

প্রো-বায়োটিক্স : দই, চিজ ইত্যাদি খাবারে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

 

মানসিক চাপমুক্ত থাকুন : অতিরিক্ত মানসিক চাপে আমাদের শরীরের Sympathetic activity বেড়ে যায় এবং কর্টিসল/Cortisol হরমোন নিঃসরণ হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। টিভি, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খবরগুলো আপনাকে মানসিক চাপে ফেলছে সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। মনকে Divert করার জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটান, গান শুনুন, বই পড়ুন, মুভি দেখুন বা নতুন কিছু শিখতে মনোনিবেশ করুন। এ ছাড়া যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন একটি খুব ভালো উপায় মনকে শান্ত রাখার।

 

শরীরচর্চা : শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ইমিউনিটি বাড়াতে শরীরচর্চা অপরিহার্য। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন আমরা সবাই ঘরে অবস্থান করছি। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট এবং বাচ্চাদের অন্তত ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করা উচিত। ঘরে থেকে আপনি যা করতে পারেন হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং, ইয়োগা, ওয়েট শিফিটং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা শরীরচর্চার উপায় হতে পারে।

 

ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার : বিশেষ করে ধূমপান, যা সরাসরি আপনার শ্বাসতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যেহেতু করোনাভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের রোগ, এতে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ধূমপান পুরোপুরি বাদ দিন ও Respiratory Exercise করুন। মদ্যপান পুরোপুরি পরিহার করুন।

 

ওজন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা : শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি অটুট রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প নেই। তাই প্রতিদিন পরিমিত খাবার খান ও শারীরিকভাবে সচল থাকুন। পাশাপাশি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।

 

লেখক : ডা. আফরিন সুলতানা

কনসালট্যান্ট, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর