বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

চুল পড়ার সমাধান

লকডাউনে থেকে বেশির ভাগ মানুষের খুবই দ্রুত চুল পড়ে যাচ্ছে। অনেকের তো আবার টাক হওয়ার অবস্থা। যেকোনো সমস্যার সমাধান করার আগে খুঁজতে হবে এই সমস্যা হওয়ার কারণ।

চুল পড়ার সমাধান

মডেল: সিঁথি ছবি: আর্কাইভ

চুল দ্রুত পড়ে যাওয়ার কারণ

০. দুশ্চিন্তা করা।

০. ভিটামিন ই ও ডি এর অভাব। বিশেষ করে চুলে সূর্যের আলো না লাগলে এবং ভিটামিন-ই জাতীয় খাবার না খেলে।

০. প্রোটিন জাতীয় খাবারের অভাব।

০. বংশগত কারণ।

০. দীর্ঘমেয়াদি কিটো ডায়েট অথবা লো-কার্বস ডায়েট করলে।

০. চুলে অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা বিশেষ করে রিবন্ডিং, হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করা।

০. সময়মতো না ঘুমানো এবং ঘুম কম হওয়া।

০. চুলের যত্ন না নেওয়া।

০. ঠিকমতো চুল না আঁচড়ানো। 

০. হরমোনের দ্রুত পরিবর্তন।

০. গর্ভাবস্থায় ও বাচ্চা প্রসবের পর।

০. অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন ইত্যাদি। 

 

যেভাবে চুলপড়া কমবে

১. প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে দুই ধরনের প্রোটিন আছে যেমন- প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন।  প্রথম শ্রেণির প্রোটিন ডিম, দুধ, মাছ প্রতিদিন খাবেন এবং সপ্তাহে দুই দিন মাংস খাবেন। দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিনে আছে ডাল, যে কোনো লিজিউম জাতীয় খাবার যা চুল গজাতে সাহায্য করবে। দুধ যেহেতু আদর্শ খাবার, তাই প্রতিদিন দুধ পান করবেন।

২. যেকোনো মাছের তেলে ভিটামিন ‘ই’ থাকে। ভিটামিন-ই চুলের হরমোনাল বৃদ্ধি করে। ভেজিটেবল ওয়েল যেমন অলিভ ওয়েল, সরিষার তেল, সূর্যমুখীর তেল ইত্যাদিতে ভিটামিন-ই আছে। যেকোনো বাদামে ভিটামিন-ই আছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম বাদাম খেতে পারবেন। বায়োটিনযুক্ত খাবার চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বায়োটিন সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আছে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম,  আখরোট, টমেটো ও পালং শাকে। ভিটামিন-ই  ও বায়োটিন যুক্ত খাবার চুলকে করে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, ঘন ও মসৃণ।

৩. সূর্যের আলো চুলের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে চুলে যখন সরাসরি রোদ পড়ে চুলের স্কাল্প সহজেই তখন ভিটামিন-ডি পায় এবং এতে চুল পড়া বন্ধ হয়। তাই প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে আট মিনিট সকালের রোদে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ ছাড়াও টকদই, পনির, ছানা, দুধ, কাঠবাদাম, পালংশাক, সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি মাছ ইত্যাদিতে ভিটামিন-ডি আছে। ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে চুল পড়া বন্ধ হয়।

৪. সামুদ্রিক মাছ, কাঠবাদাম, আখরোট, ডিম, অলিভ ওয়েল ইত্যাদিতে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ যুক্ত ফ্যাটি এসিড আছে, যা চুলের হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখে, চুল পড়া রোধ করে ও ফাংগাল ইনফেকশন থেকে চুলের স্কাল্পকে রক্ষা করে।

৫. আমলকীতে ১০০% ভিটামিন-সি আছে। প্রতিদিন আমলকী খাবেন এতে করে চুলের ফাংগাল ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, চুল সুন্দর ও মসৃণ হবে। চুলের পুষ্টি অ্যাবসরবেশনের জন্য ভিটামিন-সি এর প্রয়োজন আছে যেমন লেবু, কাঁচামরিচ, কাঁচা আম, লিচু, পেয়ারা, বাতাবি লেবু, তেঁতুল, যেকোনো টক জাতীয় ফল ইত্যাদি। 

৬. ভিটামিন-এ হলো চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। মিষ্টি আলু, গাজর ইত্যাদি জাতীয় খাবার চুলের জন্য উপকারী। এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন চুলকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। যেকোনো শাক এবং ভিটামিন-এ যুক্ত সবজি তেলের সঙ্গে রান্না করলে সহজেই শোষিত হয় এবং চুল পড়া রোধ করে নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে।

 

যেভাবে চুলের যত্ন নেবেন

১. নিয়মিত সপ্তাহে দুই-তিন দিন চুলে তেল লাগিয়ে স্কাল্পে ভালোভাবে মাসাজ করবেন। যেমন-নারিকেল তেল, বাদাম তেল, সরিষার তেল, অলিভ ওয়েল, তিলের তেল, ভিটামিন-ই, ক্যাস্টার ওয়েল। এই তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ম্যাসাজ করলে খুব দ্রুত চুল লম্বা হবে এবং চুল পড়া ১০ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।

২. প্রতিদিন পাঁচ-ছয়বার চুল আঁচড়াবেন। যত বেশি স্কাল্পে চিরুনি পড়বে তত বেশি চুলের ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে।

৩. চুলের জন্য কোনো মেডিসিন খাবেন না। চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক খাবার ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে যত্নের মাধ্যমে চুল নতুন করে গজানোর।

৪. ভালো ব্র্যান্ডের তেল এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

৫. নিয়মিত পানি পান করুন। দুশ্চিন্তা পরিহার করুন।

৬. ভেজা চুল বাঁধবেন না। চুল শুকানোর জন্য ফ্যানের নিচে থাকুন।

৭. নিয়মিত দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম, ভেজিটেবল অয়েল ইত্যাদি খাবেন।

 

লেখক : রুবাইয়া পারভীন রীতি

ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান, ফরাজী হাসপাতাল লিমিটেড।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর