বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

বর্ষায় কেশকাহন

বৃষ্টির দিনগুলোয় চুলের যত্নআত্তি অন্যান্য মৌসুমের থেকে আলাদা। স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখা থেকে সবকিছুতেই এ সময়ের প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সামলানোর চর্চা অব্যাহত রাখতে হয়।

বর্ষায় কেশকাহন

♦ মডেল : জাকিয়া বারী মম ♦ ছবি : মোহসীন আহমেদ

বর্ষা চলছে প্রকৃতির নিয়মেই। এই রোদ, এই বৃষ্টির খেলা। বর্ষার অতিরিক্ত আর্দ্রতায় বা বৃষ্টিতে বারবার ভিজে চুল হারায় প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা। এ সময়টায় চুলের চাই বাড়তি যত্ন। কেননা বর্ষার দিনগুলোতে প্রাকৃতিকভাবেই চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

 

অনেকের ধারণা, বর্ষায় চুল ভেজানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ সময় প্রতিদিনই চুল ধোয়া উচিত! কেননা, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় চুলের গোড়া ভিজে যায়। যার ফলে চুলের গোড়ায় ফাঙ্গাস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে বৃষ্টির পানিও চুলের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, বৃষ্টির পানির সঙ্গে বাতাসের প্রচুর জীবাণুও ঝরে পড়ে। যা স্ক্যাল্পে চুলকানিসহ খুশকির সৃষ্টি করে। অনেকের চুলও ঝরে যায়। তাই প্রতিদিনই চুল ধোয়া বাঞ্ছনীয়। বর্ষায় যেসব শ্যাম্পু চুলকে শুষ্ক করে দেয় সেগুলো এড়িয়ে চলুন। এ সময় হার্বাল বা আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

 

বর্ষায় বৃষ্টিতে চুল ভিজে গেলে ঘরে ফিরে দ্রুত শুকাতে হবে। একইভাবে গোসলের পর পরই সাধের চুলকে শুকিয়ে ফেলতে হবে। চুল শুকানোর ক্ষেত্রে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিতে পারেন।  এ সময়ে চুলে স্ট্রেটনার, কার্লিং মেশিন আর হেয়ার স্প্রেও কম ব্যবহার করা ভালো। ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। আঁচড়াবেন মোটা ফাঁকা দাঁতের চিরুনি দিয়ে। শুধু বাইরে থেকে চুলের যত্ন নিলেই হবে না। তৈলাক্ত ত্বক যাদের তারা বেশি তেলের খাবার এড়িয়ে চলুন। সঙ্গে পান করুন প্রচুর পানি। ফল খ্যাদাভাসে যোগ করুন।

চুল ভালো রাখার প্রথম মন্ত্র হট অয়েল ম্যাসাজ। হট অয়েল ম্যাসাজের ফলে স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল ভালো হয়, চুলের পুষ্টি জোগায়। ফলে চুল পড়া কমে এবং চুল হয়ে ওঠে ঝরঝরে ও চকচকে। নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল বা অ্যাভোকাডো তেল চুলের জন্য খুবই উপকারী। চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালো করে তেল লাগান। এরপর ধুয়ে ফেলুন। চুল অনেক নরম হবে কিন্তু চিটচিটে দেখাবে না। সপ্তাহে এক দিন হট অয়েল ম্যাসাজে চুলের সমস্যা অনেকটাই কমবে।

 

সপ্তাহে অন্তত এক দিন যে কোনো হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। তবে প্যাকটি অবশ্যই নির্ভর করবে প্রত্যেকের চুলের ধরনের ওপর। সব ধরনের চুলের জন্য মেথি বেশ কার্যকরী। একটি পাত্রে মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পেস্ট করে নিন। পেস্টটি চুলের স্ক্যাল্পে ৪০ মিনিট লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এরপর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। প্যাকটি হেয়ার স্ক্যাল্পে পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে করবে ঘন কালো। এ ছাড়া চুলের দৈর্ঘ্যরে ওপর নির্ভর করে পরিমাণ মতো দুধ নিন। তার সঙ্গে মেশান কয়েক ফোঁটা মধু। ভালো করে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ও চুলে লাগান। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। বর্ষায় যাদের স্ক্যাল্প তৈলাক্ত হয়ে যায় তারা পাতিলেবুর রস ব্যবহার করুন। স্ক্যাল্পে পাতিলেবুর রস ব্যবহার করে ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

 

চুলের ধরন বুঝে ঘরোয়া যত্ন

► রঙিন চুলে কেমিক্যাল থাকে। তেলের সঙ্গে ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল মিলিয়ে চুলের গোড়ায় মালিশ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনিং করে ফেলুন। আবার সপ্তাহে একবার নিউটিলাইজার ক্রিমও ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্ষাকালে রঙিন চুলে হিট দেওয়া যাবে না।

 

►  চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুতে পারেন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। ঘনত্ব বাড়াতে টক দই ও মধু মিশিয়ে ৩০ মিনিট রেখে চিরুনি দিয়ে ৫ মিনিট উল্টো দিকে আঁচড়িয়ে শ্যাম্পু করুন। চুল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ারের ঠান্ডা বাতাস ব্যবহার করুন। বর্ষাকালে একদিন পরপর শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।

 

►  চুলে প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। হেনার সঙ্গে ডিম দিয়ে বা দু-তিনটি ডিমের কুসুম ফেটে, একটু মধু দিয়ে মিশিয়ে গোসলের আগে সারা চুলে দিয়ে চিরুনি দ্বারা আঁচড়ান। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করলে চুল সোজা থাকে ও ঝরঝরে হবে।

 

►  মেথি ভিজিয়ে পানিটা ছেঁকে পাকা কলা, বাদাম তেল মিশিয়ে চুলে দিয়ে আঁচড়ান। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না ।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর