বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা মহামারীতে পুষ্টি বিবেচনা

করোনা মহামারীতে পুষ্টি বিবেচনা

চলতি বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কভিড-১৯ রোগকে বৈশ্বিক মহামারী বলে ঘোষণা করে। সারা পৃথিবী কভিড-১৯ মহামারীতে আক্রান্ত, যা সার্স কোভ-২ ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। এটি মোটামুটি অনুধাবিত হয়েছে ইতিমধ্যে যে, কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়া বা না হওয়া এবং আক্রান্ত হলে মারাত্মক অবস্থায় উপনীত হওয়ার সঙ্গে মানুষের শারীরিক অবস্থার, প্রধানত পুষ্টির একটি নিবিড় সংযোগ রয়েছে। এ সংযোগের মূল ভিত্তিটা হয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটির কারণে। শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একজন মানুষকে কভিড-১৯-এর সংক্রমণের হাত থেকে বা মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। তাই এ মহামারীতে খাদ্য গ্রহণে সুষম খাদ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা এমন খাদ্য উপাদানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যারা নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী; সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার কম ঝুঁকিতে থাকেন। এসব বিবেচনা করে, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, খাদ্য আঁশ, আমিষ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেতে তাজা-অপ্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়া দরকার। প্রচুর জলপান করতে হবে বা যেসব খাবারে বেশি জলীয় অংশ আছে, সেগুলো গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। কভিড-১৯ প্রতিরোধে ভিটামিন ডির ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, জিঙ্ক ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ।

 

কভিড-১৯ মহামারীর সঠিক খাদ্য গ্রহণে কিছু পন্থা এখানে আলোচিত হলো।

*  প্রতিদিন তাজা অপ্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ করবেন।

*  রঙিন ফল, শাক-সবজি, ডাল-বিচি জাতীয় খাদ্য (শিম, মসুর, ছোলা ইত্যাদি), বাদাম, আস্ত শস্যদানা- ভুট্টা, গম, লাল চাল; কান্ড বা মূল জাতীয় শ্বেতসারযুক্ত শাক-সবজি, কচু, মিষ্টি আলু; প্রাণিজ খাদ্য- মাছ, মাংস, দুধ, ডিম খান।

*  প্রতিদিন ২ কাপ ফল (৪ পরিবেশনা, সপ্তাহের অধিকাংশ দিন), আড়াই কাপ শাক-সবজি (৫ পরিবেশনা), ১৮০ গ্রাম শস্য, ১৬০ গ্রাম মাছ, মাংস ও ডাল জাতীয় খাদ্য খাবেন। লাল মাংস (গরু, ভেড়া, ছাগল) সপ্তাহে ২-৩ বার, মুরগির মাংস সপ্তাহে ৩-৪ বার এবং ডিম প্রতিদিন খাওয়া যেতে পারে (সিদ্ধ ডিম হলে ভালো)।

*  হালকা খাবার হিসেবে চিনি-লবণ-চর্বিযুক্ত খাদ্য না খেয়ে কাঁচা/তাজা ফলমূল বেছে নিন।

*  শাক-সবজি বা ফল অতিরিক্ত সিদ্ধ/রান্না করবেন না।

*  প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, টিনজাত বা শুকনো খাদ্য বর্জনীয়।

*  প্রতিদিন ৩-৩.৫ (১০ গ্লাসের মতো) লিটার জল পান করবেন। কম মিষ্টি বা টক স্বাদের ফলের রস পান করা যেতে পারে।

*  কম চর্বিযুক্ত বা ননীমুক্ত এমন দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য বেছে নিতে পারেন পানীয় হিসেবে।

*  বাইরে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ডায়াবেটিসের সব রোগীর জন্য প্রায় সময়ই ফলের রস খাওয়া অনুচিত হবে [হায়পোগ্লাইসেমিয়া হলে ফলের রস পান করলে রক্তের গ্লুুকোজ দ্রুত বাড়াতে তা সহায়তা করবে]।

*  চা-কফি (চিনিমুক্ত) পান করতে পারেন। অনেকের জন্যই কফি পান বিশেষ উপকারী হতে পারে।

 

লেখক-

ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক

এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর