বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কে দুর্বল, আপনি না আপনার হার্ট

কে দুর্বল, আপনি না আপনার হার্ট

গতকাল ছিল বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে দিবসটি। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘হৃদয় দিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ করুন’। তাই হৃৎপি- নিয়ে আমাদের সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। অনেকে আছেন সমবয়সীদের তুলনায় শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। হাঁটা বা দৌড়াদৌড়ি করার সময় সহজে হাঁপিয়ে ওঠেন, সিঁড়িতে উঠতে গেলে নিঃশ্বাস ঘন হয়ে যায় তার সঙ্গে বুক ধড়ফড় বা বুকে চাপ ও ব্যথা অনুভব করেন। বল প্রয়োগের কাজ করতে গেলে মাথা হালকা অনুভূত হয় অথবা চোখ অন্ধকার হয়ে মাথা ঘোরাতে থাকে। হৃৎপি- পাম্পের মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। বিশ্রামকালীন আপনার শারীরিক চাহিদা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকায়, শরীরে রক্ত প্রবাহের চাহিদাও সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে, ফলশ্রুতিতে হৃৎপিন্ডকেও সর্বনিম্ন পরিমাণে রক্ত সঞ্চালন করতে হয়। তবে যখন কোনো ব্যক্তি তার শারীরিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করে তখন শারীরিক চাহিদা পূরণে হৃৎপিন্ডকে অধিক পরিমাণ কাজ করে, অধিক রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শারীরিক চাহিদা মেটাতে হয়। সর্বোচ্চ কায়িক শ্রম যেমন-১০০ মিটার রেস বা ক্রিকেট খেলায় দুই উইকেটের মধ্যে দৌড়ানোর সময় হৃৎপিন্ড রক্ত পাম্পের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম। তাই দেখা যাচ্ছে যে, আপনি যখন কায়িক শ্রমের মাত্রা বৃদ্ধি করেন তখন তার সঙ্গে আনুপাতিক হারে আপনার হৃৎপিন্ডকেও তার গতি বৃদ্ধি করতে হয়। যখন আপনার হৃৎপিন্ড অধিক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন শারীরিক যোগ্যতা কমতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় হার্টের যোগ্যতা কমতে থাকলেও আপনি তা অনুভব না-ও করতে পারেন। কারণ তখন পর্যন্তও আপনার হৃৎপি- আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কর্মসম্পাদনে পুরোপুরি সহায়তা করতে সক্ষম হয়। ধীরে ধীরে হৃৎপিন্ড আরও দুর্বল হয়ে গেলে প্রথমে আলোচিত উপসর্গ শরীরে পরিলক্ষিত হয়, তার মানে হলো হৃৎপিন্ড তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। বহুবিধ কারণে হার্ট দুর্বল হতে পারে তবে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু কারণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উচ্চ রক্তচাপের ফলে হৃৎপিন্ডের কাজের চাপ বাড়ে। অধিক চাপে কাজ করলে এক সময় হার্ট অবসাদগ্রস্ত হয়ে যায়। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ডায়াবেটিস রক্তনালির ক্ষতিসাধন করে থাকে বিশেষ করে হৃৎপিন্ডের রক্তনালির। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস দীর্ঘ সময় বিদ্যমান থাকলে রক্ত প্রবাহের স্বল্পতার জন্য হার্ট দুর্বল হয়। অন্যদিকে, শরীরে পানি জমা হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে হার্ট ফেইলুরকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায়। হার্ট ফেইলুরের ফলশ্রুতিতে হার্টের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় হার্ট শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত পাম্পের মাধ্যমে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। শরীরে কম পরিমাণ রক্ত সরবরাহ হওয়ার ফলশ্রুতিতে কিডনিতে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যায়। এ কারণে প্রস্রাব তৈরির পরিমাণও কমে যায়, যার ফলে ধীরে ধীরে শরীরে পানি জমা হতে থাকে। কারও অত্যধিক রক্তশূন্যতা দেখা দিলে রক্তের পানি ধারণক্ষমতা কমে গিয়ে রক্ত থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে শরীরের বিভিন্ন কলায় জমা হতে থাকে এবং রক্তশূন্যতার জন্য ব্যক্তির হার্ট ফেইলুরও দেখা দিয়ে থাকে। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে সচেতন হতে হবে।

লেখক :

ডা. এম শমশের আলী,

সিনিয়র কনসালট্যান্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর