বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

দুর্গা উৎসবে সাজ

দুর্গা উৎসবে সাজ

♦ মডেল : অপু বিশ্বাস ♦ ছবি : ড্রিমস ইভেন্ট ফটোগ্রাফি ও মো. ফাহিম ইসলাম দ্বীপ ♦ কোরিওগ্রাফার : গৌতম সাহা ♦ মেকওভার : সানজিদা ইসলাম

শরতের হাওয়া, আকাশে মেঘের ভেলা, চঞ্চলমতি সাদা কাশফুল আর শিশিরভেজা শিউলিতে সেজেছে মায়ের বরণডালা। প্রকৃতির মতো ধরণীতেও মহাসমারোহে চলছে মা দুর্গাকে বরণের আয়োজন। পুজোয় বেশি প্রাধান্য পায় সাজ-পোশাক। পোশাকের সঙ্গে মানানসই সাজ না হলে সবকিছুই বৃথা। তাই জেনে নিন পুজোর সাজের প্রস্তুতি-

 

মা আসছে। মন্দিরে মন্দিরে পড়ছে উলুধ্বনি আর ঢাকে নাচছে কাঠি। এমন সময় মনকে নিশ্চয় বেঁধে রাখা যায় না। পরিপাটি সাজগোজে মাকে অঞ্জলি দানেই আসবে পরিতৃপ্তি। মায়ের সামনে কীভাবে যাব, সাজ কেমন হবে তা নিয়ে থাকে হাজারটা প্রশ্ন। আর তাই তো এ নিয়ে অস্থিরতাও কম থাকে না কারও মাঝে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মাঝে এমন ভাবনার জল একটু বেশিই গড়ায়। হাজার হোক ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত নিশ্চয় একইভাবে উপস্থিত হওয়া চলে না। দেবী-দর্শন, অঞ্জলি দান, সন্ধ্যা আরতি আর আত্মীয় বাড়ি বেড়ানো নিয়ে পরিকল্পনা পায় রংধনুর সাত রং। তাই পুজোর ভিন্ন ভিন্ন দিনে নিজেকে রাঙাতে চাই সবকিছু।

 

দুর্গাপুজোর আয়োজন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ দিন হয়ে থাকে। অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশমী। সকাল, বিকাল এবং রাত; এই কয়েক দিনের সাজের অনেক অপশন পাওয়া যায়। ফলে মনের মতো সাজে সেজে উঠতে নেই কোনো বাধা-বিপত্তি। পুজোর দিনগুলোয় মেয়েরা কখন কেমন সাজ দেওয়া উচিত সে অনুয়ায়ী সেজে উঠতে পারে। যেমন- শুভ্র সকালে পুজো করতে বসলে সুতির শাড়ি পরতে পারেন। দুপুরে গরম থাকবে। তাই দুপুরে সুতির শাড়ি, সুতির সালোয়ার-কামিজ হতে পারে বেস্ট অপশন। তা ছাড়া রাতের সাজে হাল ফ্যাশনের ট্রেন্ডি লুক বা গর্জিয়াস লুক নিতে পারেন। তবে সম্পূর্ণ সাজটাই নির্ভর করবে দিন-ক্ষণের ওপর।

 

পুজোর প্রথম দিন ধরা হয় ষষ্ঠীতে। দেবীর বোধনে পূজা শুরু হয়। তবে পুজো পুরোপুরি জমে ওঠে সপ্তমী থেকে। এজন্য সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর রাতে আরতি, ঘুরতে যাওয়া বা বাসায় আগত অতিথিদের ভিড় থাকে। আর তাই তো একেক দিন আপনার সাজপোশাকে থাকতে পারে ভিন্নতা। সপ্তমীতে মেয়েরা পোশাক হিসেবে বেছে নিতে পারেন চওড়া পাড়ের কাতান শাড়ি। সঙ্গে সোনা, রুপা বা ইমিটেশনের ভারী গহনা। হাতভরা চুড়ি।

 

অষ্টমীতে থাকে কুমারী পুজো। বিশেষ করে অষ্টমীতে মেয়েরা বেছে নেন লাল-সাদা শাড়ি। সাজেও থাকে লালের আধিক্য। হাতভর্তি চুড়ি, আলতা লিপস্টিকে মেয়েরা হয়ে ওঠে পুরোদস্তুর রমণী। চুলের বেণিতে ঝুলতে পারে একগোছা তাজা ফুল।

 

ভারী গহনা, ভারী শাড়ি যেমনÑবেনারসি, কাতান; এসব বসনে নবমীর সাজে ফুটে ওঠে আভিজাত্য। যারা শাড়ি হিসেবে বেনারসি, কাতান শাড়ি বেছে নিতে চান তারা ভারী গহনা পরতে পারেন। আবার যারা সিল্ক, মসলিন শাড়ি পরবেন তারা একটু হালকা ধরনের গহনা বেছে নিতে পারেন। শাড়ির সঙ্গে সব ধরনের চুল বাঁধাই ভালো দেখায়। চুল খোলাও থাকতে পারে শাড়ির সঙ্গে। এতে ট্রেন্ডি লুক আসবে। ওদিকে সালোয়ার-কামিজ বা অন্য কোনো পোশাকের সঙ্গে খোঁপা না করাই ভালো। এর বদলে বেণি বা খোলা চুল ভালো দেখাবে। মূল কথা, আপনার সাজটা এমন হওয়া জরুরি যাতে আপনি আরাম অনুভব করেন।

 

শারদীয় দুর্গাপুজোর প্রধান আকর্ষণ দশমী। এই দিনের সাজ মানে শাড়ি বা থ্রিপিসে লালের ছটা। সেখানে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, একদম লালরঙা শাড়ি বা সাদা জামদানি আর লাল ব্লাউজে হাতের কাজের নকশা থাকলে মন্দ হয় না। সব বয়সের নারীরাই এই রংগুলো বেছে নিতে পারেন। অনেকে আবার প্রতিমার মতো করে নিজেকে সাজাতে পছন্দ করেন। জরি, পুঁতির নকশাদার জর্জেট শাড়ি হলে সাজের সঙ্গে আবহাওয়াটা মানিয়ে যায়। গোল্ডেন বা সিলভার রঙের শাড়িও মানাবে। তবে যে ধরনের শাড়িই পরুন না কেন মিলিয়ে ব্লাউজ আর ব্যবহৃত অর্নামেন্টস অবশ্যই গর্জিয়াস হওয়া চাই, সঙ্গে সাজটাও। শুধু শাড়ি নয়, মাঝে মাঝে থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা বা আনারকলি স্টাইলের ড্রেসও পরা যেতে পারে। কেউ যদি একান্তই শাড়ি না পরতে চান তাহলে সাদা আর লালের মিশ্রণে কোনো সালোয়ার-কামিজও পরে যেতে পারেন।

পুজোর দিনগুলোয় ঐতিহ্যবাহী পোশাকের বাইরের পোশাকেও সাজে ভিন্নতা আনতে পারেন। বিশেষত, সপ্তমী বা অষ্টমীর রাতে বাড়ির পুজো প্রাঙ্গণের আড্ডায় একটু হালকা ধাঁচের পোশাক পরতে পারেন। চাইলে ওয়েস্টার্ন লুকেও সেজে উঠতে পারেন। অর্থাৎ মেয়েরা পুজোর সাজে দিনে হালকা রঙের পোশাক আর রাতে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরাই ভালো। পূজার পোশাকের সঙ্গে জুতা বাছাই করার সময় আরামের কথাও ভাবতে হবে। পুজোম-পে যেতে যদি অনেকটা হাঁটার প্রয়োজন হয়, তাহলে হিল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। রাতের দাওয়াতে যাওয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন মানানসই হিল জুতা।

 

পুজোর মেকওভারে আপনার প্রোগ্রামগুলোকে ভাগ করে (দিনের সাজ, রাতের সাজ) সে অনুযায়ী মেকআপ নেওয়া জরুরি। সাদামাঠা সাজ বা একটু গর্জিয়াস লুক এমনকি ইন্দো-ওয়েস্টার্ন সাজ যাই করুন না কেন, তা অবশ্যই নিজের লুকের ওপর নির্ভর করে বেছে নিতে হবে। কেননা, যদি আপনার চুল ছোট হয় তবে এর সঙ্গে কোন কোন লুক মানাবে সেগুলো থেকে বেছে নিতে হবে স্টাইল। একইভাবে লম্বা চুলের কী কী অপশন আছে সেগুলো আপনাকে ফলো করতে হবে। আবার চাইলে টার্সেল দিয়েও লম্বা চুলের স্টাইল করতে পারেন। সবশেষ কথা হলো, কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নয়, সাবেকিয়ানা হোক বা আধুনিক স্টাইল স্টেটমেন্ট; সম্পূর্ণটাই নির্ভর করবে আপনি ঠিক কেমন সাজে সেজে উঠতে চান তার ওপর।

 

জেনে রাখুন

►  দিনভর ঘোরার পরিকল্পনা থাকলে অবশ্যই সঙ্গে ছাতা রাখুন। রোদ-বৃষ্টিতে ছাতা হতে পারে একমাত্র ভরসা।

►  ঘোরাঘুরির সময় অবশ্যই পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। মাঝে মাঝে স্যালাইন পানি খেলে বেশি উপকার পাবেন, শরীরে সহজে ক্লান্তি ভর করবে না।

►  হাতব্যাগে ওয়েট টিস্যু, লিপস্টিক ও কাজল রাখতে পারেন। ঘোরাঘুরির মাঝে সাজগোজ নষ্ট হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক ঠিক করে নেওয়া যাবে।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর