বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

শীতে সুস্থ ঠোঁট

শীতে সুস্থ ঠোঁট

ঠোঁট ফাটা শীতের একটি সাধারণ সমস্যা। আরও আছে ঠোঁট কালো হওয়া, প্রাণহীন দেখানো। যদিও এমন অবস্থা কারও প্রত্যাশিত নয়। তবু মৌসুমি ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঠোঁট হয়ে পড়ে প্রাণহীন। এমন অবস্থা থেকে নিজের ঠোঁট জোড়াকে সুস্থ আর প্রাণবন্ত রাখতে প্রয়োজন সঠিক যত্ন।

 

শীতে ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা। তবে তা বেশ অস্বস্তিকর এবং কষ্টদায়ক। পাশাপাশি ঠোঁটে কালচে ভাব দেখা দেয়। আর এসব কিছু মূলত শুকনো আবহাওয়ার কারণেই বেশি হয়ে থাকে। অনেক সময় প্রচন্ড ঠান্ডায় নাক বন্ধ থাকে। ফলে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই ঠোঁট ফাটলে চেষ্টা করুন মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস কম নেওয়ার। একটু সচেতন হলে সহজেই ঠেকাতে পারবেন শীতে এই ঠোঁট ফাটার সমস্যাকে। শীতের কবল থেকে ঠোঁট সুরক্ষায় করণীয় নিয়ে এ প্রতিবেদন।

 

ঠোঁটের সুরক্ষার আগে জেনে নিন কী কী কারণে সমস্যাগুলো ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নানা কারণে ঠোঁট কালচে হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। কড়া রোদে দীর্ঘ সময় থাকা, পানিশূন্যতা, গর্ভাবস্থা, গভীর রাত জেগে থাকা, সঠিক সময়ে পুষ্টিকর খাবারের অভাব। মাত্রাতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার, বারবার ঠোঁট জিব দিয়ে ভেজানো, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানো, ঠোঁটের চামড়া টেনে তোলা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ আরও নানা কারণে ঠোঁট শুকিয়ে যেতে পারে এবং আরও বেশি ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

 

শীত মৌসুমে ঠোঁটের যত্ন নিয়ে ওমেন্স ওয়ার্ল্ডের পরিচালক ও বিউটি এক্সপার্ট ফারনাজ আলম বলেন, শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ঠোঁটের। ঠোঁট দীর্ঘ সময় শুষ্ক থাকলে অনেকেই বারবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজান। এ কারণেও ঠোঁট নাজুক হয়ে যায় বেশি। ঠোঁটের এই নাজুক অবস্থার জন্য শীতের সময়টায় অনেকের চেহারা মলিন লাগে। ফারনাজ আলম আরও জানিয়েছেন, শীতে যাদের ঠোঁট ফাটে তারা নিয়মিত লিপবাম ব্যবহার করুন। এ ছাড়া ঘরোয়া উপায়ে ঠোঁট ময়েশ্চার করতে নারিকেল তেলও ব্যবহার করতে পারেন। এর বাইরেও সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ঠোঁটে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন, সঙ্গে ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবারও খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে।

 

ঠোঁটের সমস্যার সমাধানে লাইফ স্টাইলের পরিবর্তন বা অভ্যাস বদল আনা প্রয়োজন। ধূমপান, ধুলাবালু, রোদের তাপ পরিহার করে চলুন। যাদের ঠোঁট ভীষণ শুকিয়ে যায়, তারা বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানো কিংবা ঠোঁটের চামড়া টেনে তোলার মতো বদঅভ্যাসগুলোও বদল করতে হবে। অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। ঠিকমতো মেকআপ তুলে ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি (প্রতিদিন ২ লিটার) পান করতে হবে। শরীরে পানিশূন্যতা না থাকলে মুখ, চোখের নিচে ও ঠোঁট উজ্জ্বল দেখাবে।

 

নিয়মিত ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। শীতকালে পানি যেমন কম খাওয়া হয়, মুখও কম ধোয়া হয়। তাই কথা বলার সময় অনুভব করেন, আপনার ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে। যখনই এমন অনুভব করবেন, তখনই ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। বাইরে বেরোলে সঙ্গে লিপবাম রাখতে পারেন। শীতে বাইরে গেলে ঠোঁট বেশি ফাটে এবং ঠোঁটে ধুলাও লেগে যায়। তখন মাঝেমধ্যে ঠোঁট একটু ধুয়ে নিয়ে লিপবাম লাগিয়ে নিতে হবে। ঠোঁট ধোয়ার সুযোগ না পেলে প্রথমে একটু লিপবাম লাগিয়ে সেটি মুছে ফেলুন। এতে আপনার ঠোঁট পরিষ্কার হবে। তারপর আবার লিপবাম লাগান। লিপস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত লিপস্টিক বেছে নিন। যদি ম্যাট লিপস্টিক লাগাতেই চান, সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে প্রথমে তুলা বা টিস্যুর সাহায্যে সামান্য একটু লিপবাম ঠোঁটে লাগিয়ে নিন, তারপর লিপস্টিক লাগান। শীতে অনেকের ঠোঁট কালো হয়ে যায় এবং খুব বেশি ফেটে যায়। তারা ঘরোয়া পদ্ধতিতেই নিতে পারেন বাড়তি যত্ন।

 

গোলাপ-মধুর লিপপ্যাক

শীতে ঠোঁটের যত্নে ঘরে বসে নিজেই নিজের জন্য তৈরি করে নিতে পারেন সাশ্রয়ী লিপপ্যাক। কিছু গোলাপের পাপড়ি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে নিন। এবার পাপড়িগুলো ভালো করে চটকে নিয়ে সঙ্গে খানিকটা মধু মিশিয়ে একটা মন্ড তৈরি করে ফেলুন। মন্ড তৈরি হয়ে গেলে তা আলতো করে ওপরের ও নিচের ঠোঁটে মাখুন। ঠোঁটের ওপর মন্ডটা শুকিয়ে যেতে ধরলে পানি দিয়ে করলে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। মধু ঠোঁটকে পুষ্টি জোগাবে এবং গোলাপ পাপড়ির রস ঠোঁটকে গোলাপি আভায় রাঙিয়ে তুলবে।

 

সরিষা-ঘিতে ঠোঁটের যত্ন

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাতের তালুতে একটু সরিষার তেলের সঙ্গে সামান্য একটু ঘি নিয়ে আঙুলে ডগায় করে আলতোভাবে ঠোঁটে মেখে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে আয়নার সামনে দাঁড়ালেই টের পাবেন ঠোঁটের এই যত্নের সুফল। মাঝেমধ্যে এই টোটকায় আপনার ঠোঁট বাড়তি চমক দেখাবে আপনাকে।

 

রাতের বেলায় ঠোঁটের যত্ন

ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠোঁটকাঠির রঙের প্রলেপ তুলে ফেলেছেন। এবার বিছানায় যাওয়ার পালা। কিন্তু ঠোঁটকে একটু বাড়তি সময় দিন। একটুখানি দুধ-মালাই দিয়ে ঠোঁট দুটো আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। সামান্য কিছুক্ষণ এমন ম্যাসাজে ঠোঁটে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং দুধ-মালাই থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাবে।

 

এভাবে ঠোঁটের যত্ন নিলে দেখবেন আপনার ঠোঁট জোড়ার আহ্লাদের কমতি হবে না, ঠোঁট থাকবে শীতের জন্য প্রস্তুত।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

 মডেল :  বিদ্যা সিনহা মিম

পোশাক ও ছবি :  ব্র্যান্ড কিউ

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর